এক মহাকাব্যের মহানায়ক

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

বুয়েনস আইরেসের ফুটবল দলের যখন খেলা থাকতো, হাফটাইম গুলোতে একটা বছর দশের বাচ্চা ছেলে দর্শকদের এন্টারটেইনমেন্ট দিতো। বল নিয়ে জাগলারি। হাফটাইম শেষে সিনিয়রেরা খেলতে ঢুকলে মাঠভর্তি দর্শক সমস্বরে চিৎকার করে উঠতো, "ষ্টে ! ষ্টে !"
ছ'য়ের দশক। দারিদ্র, শোষন, আন্দোলন, বিপ্লবে টালমাটাল দক্ষিন আমেরিকা। বুয়েনস আইরেস, মানে, আর্জেন্টিনার রাজধানী, তার শহরতলীর প্রায় বস্তি ফুওরিতো ভিল্লা এলাকায় চার কন্যা সন্তানের পর, এক দিনমজুরের ফুঁটো চাল, তাপ্পি মারা চার দেওয়ালে ১৯৬০ সালের অক্টোবরে জন্ম নিয়েছিলো এল পাইব দি ওর, মানে, এক সোনালি শিশু।
কিছু কিছু ক্রিয়েচার আধিদৈবিক সাবলীলতা নিয়ে জন্মায়। সুতরাং, ১৫বছর বয়সে জীবনের প্রথম সিনিয়র ম্যাচে বোকা জুনিয়র্সের ১৬ নম্বর জার্সি গায়ে সেই বাচ্চা ছেলেটা যেদিন দাপুটে ডিফেন্ডার কাবুরেরোর দু পায়ের ফাঁকায় অবলীলায় নাটমেগ দিলো, ঈশ্বর লিজেন্ড রচনায় বসলেন।
না, দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা দীর্ঘদিন ইউরোপে খেলার পরেও ইউরোপীয় খেতাব জেতেননি একবারো। রেকর্ড ট্রান্সফার ফি তে বার্সেলোনায় দিতে পারেননি একটা লিগও। ৭ মরসুম নাপোলিতে খেলে লিগ জিতেছেন মাত্র ২বার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় দুরস্থান, সেমিফাইনালে নাপোলিকে তুলতে পারেননি একবারও। ইউরোপীয়ান ক্লাবে ২৫০ ম্যাচে গোল ১০৮টি। দেশের হয়ে ৯১ম্যাচে গোল করেছেন মাত্র ৩৪! দেশকে কোপা জেতাতে পারেননি একবারো। তবে কেন, তার সময়ের তিন দশক পরেও তাঁকে ঘিরে এই অবিশ্বাস্য সন্মোহন ? কারন তিনি যেটা পেরেছিলেন, সেটা এইসব পরিসংখ্যান, অঙ্ক, হিসেবের বিয়োন্ডে। আসলে, সর্বকালের আইকন হতে গেলে ধারাবাহিকতা লাগে না, লাগে দিগন্ত ভেঙে যুগান্তকারী বৈপ্লবিক ঘটনার নির্মাণ। হ্যাঁ, মারাদোনা বিপ্লব এনেছিলেন। আসলে মিলিটারি শাসনে থাকা, অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ভাবে শ্বাসবন্ধকর একটা দেশকে শুধু লাজবাব নেতৃত্বে, সবুজ গালিচায় ৯০মিনিটে দাপিয়ে ১১কে একা উদ্বুদ্ধ করে ৮৬ এর বিশ্বজয়টা ফুটবল ছাপিয়ে মানবসভ্যতার ইতিহাসের এক আইকনিক কাহিনী। আর সেই কাব্যের প্রবাদপ্রতিম দৃশ্য হয়ে থাকবে ঈশ্বরের বাঁ হাতে গড়া অ্যান্টি-ঔপনিবেশিক গোলটা।

না, সচারাচর খেলোয়াড়দের মতো 'অরাজনৈতিক' তিনি ছিলেন না। আজীবনের বামপন্থী। ভেনেজুয়েলা, কিউবা, আর্জেন্টিনার বামপন্থীদের কট্টর সমর্থক। জগৎবিখ্যাত বাঁ পায়ে ফিদেল কাস্ত্রো'র ছবি। আর ডান হাতে চে গুয়েভারা ! বিশ্ব দারিদ্র্য নিয়ে চিৎকার করেছেন বরাবর ! ১৯৮৬ বিশ্বকাপে অমরত্ব নিশ্চিত করলেন, ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজে কেঁদে সবাইকে কাঁদালেন। আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা প্রমাণ করলেন, তিনিও রক্ত–মাংসের মানুষ, ভুল তাঁরও হয়। সভ্যতা, সময়, ইতিহাস, শতকেরা মাঝে মাঝে কিছু মহাকাব্যিক নায়কের জন্ম দেয়। যেই নায়কেরা মানবপ্রজাতির কৃষ্টি আর কালচারের গতিপথ বদলায়। দিগন্ত ভেঙেচুরে নতুন মহাকাশের সম্মুখে দাঁড় করায় ! দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা সেইরকমই এক মহাকাব্যের মহানায়ক !

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Avijit Das

Related News