কোলেস্টেরল মানে হলো রক্তের চর্বি বা ফ্যাট। আমাদের দেহে খারাপ ও ভালো—দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে। আমাদের রক্তে অ্যালবুমিন, চিনি, ভিটামিন, মিনারেল, চর্বি ও খনিজ লবণ রয়েছে। এই উপাদানগুলোর মাত্রা অতিরিক্ত হলে বা কমে গেলে তা হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ।
কোলেস্টেরলের অপর নাম হলো লিপিড। রক্তের মধ্যে রয়েছে কয়েক ধরনের কোলেস্টেরল। কিছু ফ্যাট আমাদের দেহের জন্য উপকারী। এ ধরনের কোলেস্টেরলের নাম হলো হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিন বা এইচডিএল। আর রক্তের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের নাম হলো এলডিএল। ট্রাইগ্লিসারাইড আরও একটি খারাপ কোলেস্টেরলের নাম।
ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা রক্তে গেলে, তা রক্তনালির জন্য ক্ষতিকর। আবার খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা বেড়ে গেলে, সেটাও হয়ে উঠবে বিপজ্জনক। প্রতিটি কোলেস্টেরলের রয়েছে রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রা।
চলুন জেনে নেই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে যেসব সমস্যা হতে পারে:
* পায়ের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমলে রক্ত চলাচলে নানা সমস্যা হতে পারে। এজন্য পায়ের পেশিতে টান লাগে এবং হাঁটাচলাতেও সমস্যা হয়।
* বিশ্রাম নিলে ব্যথা বাড়ে। চলতে গেলে পায়ের পেশিতে টান বাড়ে। আবার পায়ের লোমও উঠে যেতে পারে।
* ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাবে যেসব খাবারক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাবে যেসব খাবার
* ত্বকের রঙ গাঢ় হয়ে যেতে শুরু করে।
* চোখের পাতায় হলদেটে ভাব দেখা দিতে শুরু করে।
সচেতন হতে যা করবেন
১. প্রতিবছর পুরো দেহের চেকআপ করাতে হবে। ছয় মাস পরপর সম্ভব না হলেও বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের পরীক্ষা করালে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে গেছে কি না, তা জানা যাবে।
২. নিয়মিত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে। প্রাণিজ প্রোটিনের চেয়ে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের রোগীদের জন্য ভালো। সামুদ্রিক মাছ, সবুজ-হলুদ শাকসবজি, গ্রিন টি, মৌসুমি ফল, তিতাজাতীয় খাবার ও মেথি রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়।
৩. নিয়মিত হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা ভীষণ জরুরি। যাঁরা বৃদ্ধ, হাঁটাচলা করতে পারেন না, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করবেন না।
৪. কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, কিডনিতে ডায়ালাইসিস চলছে, এ ধরনের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না। রক্তে চর্বির মাত্রা কমানোর জন্য একেকজনের একেক রকম ডোজের ওষুধ লাগে। কোলেস্টেরল খুব বেশি বেড়ে না গেলে খাবার নিয়ন্ত্রণসহ ওজন কমিয়ে আনতে পারলে, অনেকে সুস্থ থাকেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।
৫. নিয়মিত হাত–পায়ের আঙুলে ঝিঁঝিঁ ধরলে বা অবশ লাগলে, রাতে পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে, নিয়মিত মাথাব্যথা করলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অধিকাংশ সময়ে বেড়ে থাকলে, হাত–পায়ের আঙুলে ঠিকভাবে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ হতে পারে না। তখন হাত–পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরা, অবশ লাগা, ব্যথা, হঠাৎ বৈদ্যুতিক শক লাগার মতো লক্ষণ হতে পারে।
৬. মাথা-ঘাড়ে ব্যথা, মাথা ঘোরানোর সমস্যাও থাকতে পারে। অনেকের চোখের পাতার আশপাশে ব্রণের দানার মতো উঁচু হতে পারে। অনেকের হাত–পায়ের অনেক জায়গায় মাংসপেশি ছোট্ট কুণ্ডলীর মতো গোল হতে পারে। রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল জমে গেলে পরিণামে তৈরি হয় ব্লক। হৃৎপিণ্ডের শিরা–উপশিরার মধ্যে ব্লক তৈরি করলে হার্ট অ্যাটাক হয়।
৭. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।