Flash news
    No Flash News Today..!!
Friday, May 17, 2024

প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিল্পী! একনজরে পরিচয় বাংলার হস্ত শিল্পের সঙ্গে

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

সেলাই হোক বা ভাস্কর্য, পটচিত্র হোক বা ধাতব কারিগরি, বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির আলাদা মান আছে বিশ্বের দরবারে। শিল্পের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু তার সহজ সরলতা ও গ্রাম্য রহস্যময় এক স্বাদ। বাংলার হস্তশিল্পের দর তাই যুগ যুগ ধরে বন্দিত হয়ে আসছে। সূক্ষ্ম সূচ সুতোর কারুকার্য বা পোড়ামাটির কারুকাজ এক রাজকীয় মনমুগ্ধকর শিল্প রুচির পরিচয় বহন করে।

আদি ও মধ্যযুগীয় বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কর্ম ছিল হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প। পরিবারের সাথে বাড়িতে বসে কাঁথা সেলাই, বুনন, ধাতুর কাজ, বাঁশের কাজ,  ও মৃৎশিল্প ছিল ভীষণ সমৃদ্ধ। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় যে গাঙ্গেয় অঞ্চলের মসলিন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ পর্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। চিনা ওয়ার বি পর্যটকগণ বাংলার মসলিনের উল্লেখ করেছেন তাদের গ্রন্থে। মুঘল শাসন কালে হস্তশিল্পের কারিগরদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে কারিগরদের হাতে তৈরি রুপোর অলংকার, উপঢৌকন দ্রব্য ইত্যাদির কারুকার্য, হাতির দাঁতের তৈরি জিনিস, হাতে বোনা বস্ত্র ইত্যাদি দিল্লি দরবারে বিশেষ প্রশংসা লাভ করেছিল। কারিগরের হাতের সূক্ষ্ম কাজে ব্যক্তিগত রুচি ও আন্তরিকতার ছাপ স্পষ্ট পাওয়া যেত।


বাংলার হস্তশিল্পের তালিকাটি বেশ বর্ধিত। রকমারি কাজ নিয়ে বাংলার হস্তশিল্প নিজের জায়গা করে নিয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই বলা যায় নকশী কাথার কথা। কাতার উপরে লাল নীল হলুদ সবুজ প্রভৃতি রঙের সুতো দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সূচ দিয়ে নানা রকমের আকৃতি যেমন ফল ফুল লতা পাতা ইত্যাদি সুচ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হতো। বর্তমানে কাঁথা স্টিচ বা কাঁথা সেলাই শুধুমাত্র কাঁথা তেই সীমাবদ্ধ নয় তা বিভিন্ন শাড়ি, মহিলাদের পোশাক, বালিশের কুশন, বিছানার চাদর প্রভৃতি তে জায়গা করে নিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের পোড়ামাটির কারুকাজ তার রাজকীয় এবং দেহাতি আকর্ষণের জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত। প্রাকৃতিক রং দিয়ে তৈরি এই কারুশিল্পের একটি অংশ হল ক্লে-মডেল। মাটির হাতি ঘোড়া ঠাকুর দেবতার মূর্তি প্রভৃতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতকে মল্ল শাসকদের শাসনকালকে বাংলার পোড়ামাটির কাজের স্বর্ণযুগ বলা হয়। বিষ্ণুপুরের মন্দির গুলো বাংলার পোড়ামাটির কারুকার্যের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।


বাংলায় প্রচলিত শিল্পের সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ডোকরা শিল্প। আসলে কাদামাটি, মোম এবং গলিত ধাতুর সাহায্যে মূর্তি, গয়না, মূর্তি এবং অন্যান্য অনেক সাজসজ্জার টুকরো তৈরি করা হয়। ডোকরা ধাতব শিল্পের বৈশিষ্ট্য হলো ইহা সম্পূর্ণরূপে আসল এবং কোনও আইটেমের প্রতিরূপ কখনও তৈরি করা যায় না।

এছাড়াও বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ঘোড়া পশ্চিমবঙ্গে শুভ বলে মনে করা হয়। প্রায় সব বাঙালি বাড়িতেই পোড়ামাটির ঘোড়া দেখা যায়। এগুলি ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালী আচার-অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়, কারণ তারা সূর্যের রথের পবিত্র ঘোড়াগুলির প্রতিনিধিত্ব করে। তাই পোড়ামাটির শিল্প নিদর্শন ঘরে রাখতে চাইলে পোড়ামাটির ঘোড়া অত্যাবশ্যকীয় একটি পণ্য।


এছাড়াও ডাকের সাজ, পট শিল্প, তাঁত শিল্প, মুখোশ তৈরি এবং বাংলার লৌকিক গান এবং নৃত্য গুলিও শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। দেবী মূর্তি সাজাতে ডাকের সাজ আজও ভীষণভাবে প্রসিদ্ধ। 

তবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং বিশ্বসমাজে স্বদেশের পরিচিতি সম্প্রসারণে হস্তশিল্প রপ্তানি এক বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। হস্তশিল্প সৃষ্টি হয় চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং কারুশিল্পীর কর্ম থেকে যাদের শিল্পী হিসেবে বস্ত্তত কোন প্রশিক্ষণই থাকে না। তাদের সৃষ্ট হস্তশিল্প দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে জাদুঘরে মূল্যবান চিত্রকর্ম হিসেবে রক্ষিত না হয়ে বরং অন্য লোকদের জন্য ব্যবহারিক উপযোগ সৃষ্টি করে। শিল্পিগণ সাধারণ লোকের প্রয়োজন মেটানোর পর ধনী ও অভিজাত লোকদের পৃষ্ঠপোষকতায় কারুশিল্পীর মর্যাদা অর্জন করে। কুটির শিল্প পর্যায়ে কারুশিল্প পরিবারের সদস্যগণ বা সমবায়ের সদস্যগণ হস্তশিল্প উৎপাদনে নিযুক্ত হয়। পরিবারের শ্রমিকগণ ছাড়াও কিছুসংখ্যক ভাড়া করা দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক পারিশ্রমিক ভিত্তিতে এ কাজে নিযুক্ত করা হয়। গ্রামীণ এলাকায় এটি কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিশ্ববাংলা ব্র্যান্ডের দৌলতে রাজ্যের হস্তশিল্প বিশ্বের দরবারে আরও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Satarupa Karmakar

Related News