#pravati sangbad digital desk:
আজ ২রা ফেব্রুয়ারি গোটা বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে জলাভূমি দিবস। পৃথিবীর সমগ্র অংশের প্রায় ৩ ভাগ জল এবং ১ ভাগ স্থল অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর মাত্র ২১ শতাংশ অঞ্চল বসবাসের যোগ্য, যদিও তার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য নদী -নালা, খাল -বিল, জঙ্গল। পৃথিবীর ৩ ভাগ জল হলেও তার বেশির ভাগ অংশ পানের অযোগ্য, সমগ্র জলের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ মিষ্টি জল, যা আমরা ব্যাবহার করে থাকি। জীবনের মূল উৎস হল জল, জল ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না। সুদূর অতীতেও আমরা দেখ পাই আদিম মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল কোন না কোন মিষ্টি জলের উৎসকে কেন্দ্র করে। মানব জাতি সব সময় নদী মাতৃক সভ্যতাকে আপন করে নিয়েছে। হরপ্পা থেকে সিন্ধু সভ্যতা সবই গড়ে উঠেছিল জলাভূমিকে কেন্দ্র করে। তবে আমরা যত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ততই বেড়েছে জলের ব্যাবহার, শুধু তাই নয় ব্যাবহারের সাথে সাথে বেড়েছে জলের অপচয়ও। বিশ্বে মিষ্টি জলের বেশির ভাগটাই আসে বরফ গলে উৎপন্ন হওয়া নদী নালা, মিষ্টি জলের হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ কূপ থেকে। বিশ্বের জনঘনত্ব আগের তুলনাই বেড়েছে অনেকটাই, বেড়েছে জলের ব্যবহারও, আর মিষ্টি জল সংগ্রহের সব থেকে সহজ উপায় হল ভূগর্ভস্থ কূপের ব্যবহার। মাটির নিচ থেকে টিউবওয়েল বা পাম্পের সাহায্যে অতি সহজে মাটির নীচের মিষ্টি জল তোলা যায়, যার ফলে ধীরে ধীরে কমে আসছে সেই জলের পরিমাণ। তবে ভূগর্ভস্থ জল পূরণের একমাত্র মাধ্যম হল বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির জল পুনরায় মাটিতে প্রবেশ করে জলের পরিমাণকে অখুন্য রাখে। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত অংশেই কম বেশি কমেছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, ফলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ দ্রুত পূরণ হচ্ছে না। কমে আসছে মিষ্টি জলের পরিমাণ।
১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই ২শরা ফেব্রুয়ারি দিনটি গোটা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব জলাভূমি দিবস, যার মূল লক্ষ্য জলাভূমি সংরক্ষন এবং মিষ্টি জলের উৎসগুলির সংস্করণ। বিশ্বের জীব বৈচিত্র্য বা ভারসাম্য রক্ষার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল জলাভূমি। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আগের থেকে অনেকটাই কমেছে জলাভূমির পরিমাণ, পুকুর বা হ্রদের মতো জলাভূমি বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে বাড়ি, ফ্ল্যাট, শপিং মল। আগের থেকে অনেকখানি নেমেছে মাটির নীচের জলস্তর। ইরানের রামসার শহরে ১৯৭১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আর তাতে ঠিক হয় ছোট বড় বা মাঝারি আকারের খাল বিল, পুকুর, জলে পরিপূর্ণ নিচু জায়গা, ছোট বড় হ্রদ সব কিছুই জলাভূমি। জলের নীচে বিভিন্ন ধরণের জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণী থাকে যা সাধারণত বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকা, কিন্তু বর্তমানে জলাভূমির সংখ্যা কমে আসার ফলে বাড়ছে পোকামাকড়ের উপদ্রপ। তাই সবার প্রথমে আমাদের উচিত জলাভূমি সংরক্ষন করা। জলাভূমি সংরক্ষণের প্রথম এবং মূল শর্ত হল জলে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা। যেই সব নদী গর্ভ পলিতে পরিপূর্ণ সেই সমস্ত নদীর বক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পরিমানে পলি সরানো। এর ফলে যে শুধু জলাভূমি সংরক্ষিত হবে তাই নয়, নদী তার স্রোত ফিরে পাবে কমবে বন্যার আশঙ্কা।