Flash news
    No Flash News Today..!!
Saturday, May 11, 2024

বায়ুদূষণ শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর, কি কি রোগ সৃষ্টি করে জেনে নিন।

banner

##Pravati Sangbad Digital Desk::

বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১%। যদি কোনো কারণে বাতাসে এই পরিমাণ অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে অন্য কোনো গ্যাসের ঘনত্ব বা বালুকণার পরিমাণ বেড়ে যায়, তবেই তাকে দূষিত বায়ু বলে। আগুন পরিবেশের অক্সিজেন নষ্ট করে ব্যাপক মাত্রায়। যানবাহন, কলকারখানার কালো ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে। হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাসও ক্ষতিকর। 

নেচার জার্নালে প্রকাশিত ২০১৫ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো বায়ু দূষণ। এসবের মাঝে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যুই ঘটে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক থেকে, বাকি ২৫ শতাংশের  হয় ফুসফুসের রোগে। শুধু তাই নয়, এত মৃত্যুর ৭৫ শতাংশ আবার ঘটে এশিয়া মহাদেশে, যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা ভয়াবহ, বিশেষ করে চীন এবং ভারতে। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই দূষণ হয়। গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের রিপোর্ট অনুযায়ী গ্লোবাল কার্বন এমিশনের পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এ বছর নাগাদ। 
বায়ু দূষণ এবং হৃদস্বাস্থ্যের মাঝে যে সম্পর্ক আছে এটা  অনেকেই জানে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এ ব্যাপারটাকে আরো শক্তপোক্ত করেছে যে দূষিত বায়ু বেশ কিছু দিক দিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে সক্ষম। আসুন জেনে নিই এই বায়ুদূষণের ফলে আমাদের কী ক্ষতি হয় এবং কী করলে এটা কমানো যায়।

১) উচ্চ রক্তচাপ: বায়ু দূষণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বা হাইপারটেনশন বাড়ায় যা স্পেন, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন এবং নরওয়ের ৪১ হাজারেরও বেশী মানুষের ওপর গবেষণায় দেখা যায়।  গবেষণা শুরুর সময়ে তাদের কারোই হাইপারটেনশন ছিল না। কিন্তু পরে দেখা যায় তারা  হাইপারটেনশনের রোগী ছিল বা রক্তচাপ কমানোর ওষুধ নিচ্ছিল। প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষে এ ব্যাপারটা দেখা যায়। মূলত যারা বায়ু দূষণযুক্ত এলাকায় থাকেন, অন্যদের তুলনায় তাদের হাইপারটেনশন হবার ঝুঁকি থাকে প্রায় ২২ শতাংশ বেশী। 
২) শুক্রাণুর ক্ষতি: নভেম্বরে তাইওয়ানের এক গবেষণা থেকে জানা যায় বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে স্পার্ম কোয়ালিটি কমে যায়। গবেষকেরা তাইওয়ানে বসবাসরত ৬,৫০০ জন পুরুষের শুক্রাণুর উৎপাদন, সক্রিয়তা এবং বাহ্যিক অবয়ব পর্যবেক্ষণ করেন তিন মাস ধরে। তাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৪৯ এর মাঝে। এরপর দুই বছর সময়ের মাঝে তাদের শুক্রাণু কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে তা দেখা হয়। বায়ু দূষণের কারণে অস্বাভাবিক আকার ও আকৃতির শুক্রাণু উৎপাদন হতে দেখা যায়। তবে বায়ু দূষণের মাঝে বাস করলে শুক্রাণুর সংখ্যা বেশী হতে দেখা যায়। গবেষকেরা বলেন, ত্রুটিপূর্ণ শুক্রাণু উৎপাদনকে সামাল দিতেই হয়ত এই শুক্রাণুর সংখ্যা বেশী হচ্ছে। 

 ৩) হাড়ের ঘনত্ব কমে ফ্র্যাকচার হওয়া: যখন বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশী থাকে, তখন হাড় ফ্যাকচার হবার প্রবণতা থাকে বেশী।বয়স্ক মানুষে অস্টিওপোরোসিস বা বয়সের কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমা হলো হাড়ে ফাটল ধরার সবচাইতে বড়  কারণ। এর ফলে প্রতি বছর বিশ্বে অন্তত ৮.৯ মিলিয়ন মানুষের হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়। বায়ু দূষণের কারণে এই ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। ৬৫ বছরের বেশী বয়সী প্রায় ৯২ লাখ মানুষের তথ্য নেওয়া হয়। জানুয়ারি ২০০৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১০ এর মাঝে তাদের হাড় ফ্র্যাকচারের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা যায়, যখন বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশী থাকে, তখন হাড় ফ্যাকচার হবার প্রবণতা থাকে বেশী। 
৪) হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা: দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার ফলে হতে পারে হার্টের বিভিন্ন রোগ, যা আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়,  অ্যালকোহল, কফি বা এক্সারসাইজ যেভাবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী, বায়ু দূষণও সেভাবেই দায়ী। ৫-৭ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের পেছনে বায়ু দূষণকে দায়ী করা যায়, বলেন গবেষকেরা। 
৫)স্ট্রোকের সম্ভাবনা: প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ মারা যায় স্ট্রোকের কবলে পড়ে। শুধু তাই নয়, অনেকে পক্ষাঘাতগ্রস্তও হয়ে যান। স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে ইদানিং, গবেষকদের ধারণা, এর পেছনে থাকতে পারে পরিবেশগত কারণ। তারা স্ট্রোকের ওপর করা ৯৪টি গবেষণার তথ্য পুনরায় গবেষণা করেন ১৯৪৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। দেখা যায়, উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণের আওতায় থাকা এবং স্ট্রোকের মাঝে সম্পর্ক বিদ্যমান। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বায়ু দূষণ সবচাইতে বেশী ছিল এবং সেখানে স্ট্রোকের পরিমাণও অতিরিক্ত বেশী হতে দেখা যায়।
৬)কিডনীর রোগ: আমেরিকার যুদ্ধফেরত সৈন্যদের ওপর এক গবেষণায় দেখা যায়, বায়ু দূষণের কারণে কিডনির কাজে বাঁধা পড়ে, কিডনির রোগ হয় এমনকি কিডনি নষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসের এই গবেষণায় দেখা যায় কম পরিমাণে বায়ু দূষণও কিডনিকে প্রভাবিত করতে পারে, আর দূষণ বাড়তে থাকলে ক্ষতির পরিমাণও  বাড়ে। 

৭) মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব: শুধু যে শরীরের ওপরেই বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তা নয়। বায়ু দূষণ মানসিক সমস্যাও বাড়ায়। নভেম্বর মাসের আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা যায়, বায়ু দূষণের পরিমাণ যত বেশী হয়, মানুষের  হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতির প্রকোপ ততই বেশী হয়। 
তাছাড়া রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যে  ধুলাবালি উড়ছে, তা শ্বাসতন্ত্রের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে হাঁপানির উদ্রেক করে। শহরে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ধুলো এড়ানোর জন্য নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে কিছুটা রক্ষা হয়, কিন্তু তারপরও ক্ষুদ্র কণা ঢোকে। যাঁরা ধূলিময় এলাকায় কাজ করেন, যেমন রাস্তা বা দালানের শ্রমিক, তাঁরা বিশেষ মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। শিল্পায়ন, নগরায়ণের ফলে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজেরও ঝুঁকি বাড়ছে। এটি একধরনের দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ। ধূমপায়ীদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি। তাই ধূমপান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক না কেন তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ ছাড়া কলকারখানার রাসায়নিক ফুসফুসের স্বাভাবিক কলাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে এবং শক্ত ও দানাদার করে তুলতে পারে। একে বলে ফাইব্রোসিস বা আইএলডি। শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এখনই।

বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার-ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ছে। বায়ুদূষণ কমাতে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া উচিত। বিকল যানবাহন সারিয়ে নিন, এতে কেবল অন্যরা নয়, আপনার পরিবারও ঝুঁকিতে পড়ছে। দূষণজনিত রোগ থেকে সুস্থ থাকতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খান। ভিটামিন সি’র কার্যকারিতা ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। তাই প্রতিদিন একটু হলেও লেবু, আমলকী, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, কাঁচামরিচ, জলপাই, টমেটো, কমলালেবু ইত্যাদি গ্রহণ করুন।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : SANGITA RANA

Tags:

Related News