ভারতের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হলেও, সারা বিশ্বের চোখ এখন 'উদীয়মান সূর্যের দেশ' জাপানে। সম্প্রতি, জাপান সরকার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যা দেশে আঘাত হানতে পারে এমন এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক বছরে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি অত্যন্ত উচ্চ।
জাপান সরকার সোমবার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে দেশের ৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ‘নানকাই ট্রফ’ এলাকায় একটি মহাভূমিকম্পের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এই ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৯ মাত্রা হতে পারে, যার ফলস্বরূপ ৩০-৩৪ মিটার উচ্চতার সুনামি উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। এর ফলে জাপানে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ নিহত হতে পারেন এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ২ লক্ষ কোটি ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির অর্ধেকের সমান! ২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর থেকে জাপান সরকার সতর্কতা জারি করার একটি নিয়ম চালু করেছে। বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, ৭০-৮০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে যে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নানকাই খাদে একটি ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানবে। এমন একটি ভূমিকম্পের ফলস্বরূপ প্রায় ১২.৩ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের সমান। এই ব্যাপারে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এমন মহামূলক ভূমিকম্পে শিজুওকা, কোচি, ও ওয়াকায়ামার মতো উপকূলীয় অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে। ‘নানকাই ট্রফ’ হল সমুদ্রের তলদেশের একটি অঞ্চল যা শিজুওকা থেকে কিউশু পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টেকটোনিক স্ট্রেন (পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলির বিকৃতি) জমেছে, যা বড় বড় ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানকাই খাদে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ১০০ থেকে ৩,৬০০ গুণ বেশি ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে।
পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণে চন্দ্রকান্ত বণিক গ্রেফতার, মর্মান্তিক ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, ভূমিকম্প ও সুনামির জন্য প্রস্তুতির সময় এখনই, এবং এই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ নাওশি হিরাতা বলছেন, "যখন মাটি কাঁপতে শুরু করবে তখন নয়, এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।" ইতিমধ্যেই জাপানের নাগরিকদের মধ্যে এই রিপোর্টটি নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাপানের সরকার ও বিজ্ঞানীরা দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং দ্রুত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। তারা জানাচ্ছেন যে, বিপদ আসার আগেই যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেজন্য জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। জাপান প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তবে এই ধরনের মহামূলক ভূমিকম্প প্রতিটি শতাব্দীতে একবারের বেশি হয় না। ১৯৪৬ সালে সর্বশেষ নানকাই ট্রফ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, এবং তার পর থেকে ৭০-৮০ বছরের মধ্যে এমন এক বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা জাপানের ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় উঠে এসেছে। আজকের দিনে, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং প্রযুক্তির উন্নতির পরও, প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সকল প্রস্তুতি নিঃশেষ হতে পারে। জাপানের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। তবে, এখনই যদি সময়মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করা না যায়, তাহলে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হতে হতে পারে লক্ষাধিক জীবন।