এককভাবে বৃহত্তম দল হলেও আসনের নিরিখে ম্যাজিক ফিগার পার করতে পারেনি বিজেপি (N.D.A)। ৪০০ পারের ডাক দিয়ে মাত্র ২৪০-এই থেমেছে বিজেপি অশ্বমেধের ঘোড়া। আর তাই সরকার গঠনের জন্য এনডিএ-র (N.D.A) বাকি শরিকদের ওপর নির্ভর করছে। সরকার গড়তে বিজেপি প্রয়োজন শরিকদের।
৫৪৩টি লোকসভা রয়েছে দেশে। অর্থাৎ, ম্যাজিক ফিগার ২৭২। বিজেপি এককভাবে ২৪০টি আসনে জিতেছে। অর্থাৎ, সরকার গড়তে বিজেপির প্রয়োজন আরও ৩২ জন সাংসদের সমর্থন। এক্ষেত্রে অন্যতম নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারেন তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু আর জনতা দল ইউনাইটেডের নীতিশ কুমার।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশে ১৬টি আসন জিতেছে চন্দ্রবাবুর তেলেগু দেশম পার্টি। আর নীতিশের জনতা দল ইউনাইটেডের হাতে আছে ১২ জন সাংসদ। ফলে এই দুই নেতা ইন্ডি জোট বা এনডিএ-র মধ্যে যে দিকে যাবেন সরকার গড়ার পসূত্রের খবর, নীতিশ-চন্দ্রবাবুকে নিজেদের দিকে টানতে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে ইন্ডি জোট। এবারের নির্বাচনে ইন্ডি জোট ২৩৪টি আসন পেয়েছে। ফলে নীতিশ-চন্দ্রবাবুকে জোটে টানলে সরকার গড়ার দিকে অনেকটাই এগিয়ে যাবে তারা। নীতিশকে জোটে টানতে ইন্ডিয়ার তরফে দেওয়া হয়েছে উপ-প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব।
আর চন্দ্রবাবুকে বলা হয়েছে, ইন্ডিয়া জোট সরকার গড়লে অন্ধ্র প্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হবে। এদিকে ইন্ডিয়া জোট ময়দানে নামতেই পাল্টা জোটসঙ্গীদের দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে এনডিএ-র প্রধান দল বিজেপি। চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মোদী।
এই পরিস্থিতিতে আজ দিল্লিতে বৈঠকে বসছে এনডিএ এবং ইন্ডিয়া। সেখানেই পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করবে তারা। এবারের লোকসভা ভোটে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০টি আসন পেয়েছে বিজেপি, ৯৯টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৭টি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল পেয়েছে ২৯টি আসন।
এই লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত পুনরুত্থান হল কংগ্রেসের। তারা পেতে চলেছে ৯৯টি আসন। ‘ইন্ডিয়া’ ঝুলিতে ২৩৩। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪-য় ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এ বার সেই মর্যাদা পেতে চলেছে রাহুল গান্ধীর দল।
দেশের তিন বৃহত্তম রাজ্য (জনসংখ্যার নিরিখে) উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে পরাস্ত হয়েছ বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি-কংগ্রেসের জোট, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-এনসিপি (শরদ পওয়ার)-এর ‘মহাবিকাশ অঘাড়ী’ ধাক্কা দিয়েছে মোদীর দলকে। বাংলায় সেই ‘দায়িত্ব’ একা পালন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। মাত্র এক বছর আগে গড়ে ওঠে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-র (যে জোটের যার নামকরণে তৃণমূলনেত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর) ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
দিল্লিতে এনডিএ শিবিরে জোর তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। বুধবার বিকেলে এনডিএ-র বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেজন্য দিল্লিতে পৌঁছেছেন চন্দ্রবাবু নায়ডু ও নীতীশ কুমার। সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় দফতর নিয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে এদিন রাত থেকে আলাদা করে বৈঠকে বসবেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। তা ছাড়া একেকটি শরিক দলের সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য দলের কয়েক জন প্রবীণ নেতাকেও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী ৮ জুন শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হতে পারে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী পদে ফের শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।