ব্রিটিশ আমলের ভারতের শেষ রেলস্টেশন, পায়ে হেঁটেই বাংলাদেশ

banner

#PRAVATI SANGBAD DIGITAL DESK:

বিদেশ ভ্রমণের কথা উঠলেই প্রথমেই মাথায় আসে বিমানের কথা। স্বল্প সময়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য এটাই সেরা সাথী। কিন্তু আপনি কি জানেন, আমাদের দেশে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে ট্রেন থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই বিদেশ চলে যাওয়া যাবে। একেবারে পায়ে হেঁটেই সীমান্ত অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলিতে চলে যাওয়া যাবে। এর মধ্যে কিছু প্রতিবেশী দেশে পাসপোর্ট-ভিসার প্রয়োজন পড়ে আবার কিছু দেশে এর কোনোটারই দরকার নেই। নেপালের যেমন তিন দিকে ভারত অবস্থান করে। নেপাল যেতে হলে বিহারের আরাইয়া জেলার যোগবানী স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যাওয়া যাবে নেপালে। তেমনই পশ্চিমবঙ্গেও এমন কতগুলি স্টেশন রয়েছে যেখান থেকে পায়ে হেঁটেই বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব। এমনই একটি স্টেশন হল সিঙ্গাবাদ। মালদহের হাবিবপুর অঞ্চলে এই স্টেশনটি অবস্থিত। 

ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া সিঙ্গাবাদ-পুরাতন মালদা প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি গত চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এমনকি কোথাও ট্রেন বাতিলের কথাও ঘোষণা করা হয়নি। কথিত আছে, এই ট্রেনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, সরোজিনী নাইডুর মতো দেশপ্রেমিকরা সফর করেছিলেন। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার সিঙ্গাবাদ-পুরাতন মালদা প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে যাতে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করা হয়, তার চিন্তাভাবনা করেছিলেন। এই স্টেশন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশ সীমান্ত। ২০১৫ সাল থেকে সিঙ্গাবাদ-ওল্ড মালদা প্যাসেঞ্জার ট্রেনটির চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত দুই জায়গার মধ্যে এই ট্রেনের ভাড়া ছিল মাত্র পাঁচ টাকা। প্রতিদিন সিঙ্গাবাদ থেকে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ছাড়ত ট্রেনটি। যা সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ওল্ড মালদা স্টেশনে পৌঁছোত। আর মালদা থেকে এই ট্রেনটি ছাড়ত সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে সিঙ্গাবাদ স্টেশনে পৌঁছোত।

মূলত মালগাড়ির জন্যই এই সিঙ্গাবাদ স্টেশন। এছাড়াও দু’টি যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস এই স্টেশনের উপর দিয়ে চলত। স্বাধীনতার পর দেশভাগের সময় থেকেই রেলের তরফে এটিকে পরিত্যক্ত করে দেওয়া হয়। তারপর বহু বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর ১৯৭৮ সাল থেকে ফের মালবাহী ট্রেন যাতায়াত শুরু করে এখান দিয়ে। এখানকার মানুষ প্রায়ই পায়ে হেঁটেই বাংলাদেশ চলে যান। যদিও স্টেশনটির পরিচিতি খুব বেশি নয়। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশ সীমান্ত। সিগন্যালের জন্য আজও ব্রিটিশ জমানার ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। নামমাত্র কয়েকজন রেলকর্মী এখানে রয়েছেন। এখানে শুধুমাত্র রোহনপুর হয়ে বাংলাদেশগামী মালগাড়িগুলিই থামে সিগন্যাল না পেলে। 

২০১১ সালের নভেম্বরে, পুরানো চুক্তিটি সংশোধন করা হয়েছিল এবং নেপালকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। নেপালগামী ট্রেনও এই স্টেশন দিয়ে যেতে শুরু করেছে। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্য রপ্তানির দরুন পণ্যবাহী ট্রেনের চালান রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে আসে। রোহনপুর হল বাংলাদেশের প্রথম স্টেশন। এই স্টেশনের সবকিছুই ব্রিটিশ আমলের। এখানে কার্ডবোর্ডের টিকিট-ই রাখা আছে, যা এখন আর কোথাও দেখা যাবে না। এখানে স্টেশনে রাখা টেলিফোনটিও ব্রিটিশ সময়কার। একইভাবে, সিগনালের জন্য এখানে শুধুমাত্র হ্যান্ড গিয়ার ব্যবহার করা হয়। এখন এই স্টেশন দিয়ে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলে- মৈত্রী এক্সপ্রেস ও মৈত্রী এক্সপ্রেস-১। ২০০৮ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয় যা ৩৭৫ কিমি যাতায়াত করত। একই সময়ে, দ্বিতীয় ট্রেনটি কলকাতা থেকে বাংলাদেশের একটি শহর খুলনা পর্যন্ত যায়। ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর সাথে খাপ খায়না এই স্টেশনের আদলে। তবে আবার এই নির্জন স্টেশন জনবহুল হয়ে উঠবে সেই আশায় এখন সাধারণ মানুষ।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Puja Adhikary