বিশ্বভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা এখন দিল্লিতে

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

 শুরু হয়ে গিয়েছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের কাউন্টডাউন। শুক্রবারই, নয়া দিল্লিতে এসে পৌঁছচ্ছেন জো বাইডেন থেকে ঋষি সুনকরা। সেজে উঠেছে নয়া দিল্লির প্রগতি ময়দানে সদ্য উদ্বোধন হওয়া ভারত মণ্ডপ। এখানেই হবে মূল সম্মেলন। প্রস্তুত রয়েছে রাজধানী এলাকার অভিজাত হোটেলগুলিও। বিদেশি অতিথিদের প্রতিক্ষায় তারাও। এদিকে, শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে নয়া দিল্লিতে কার্যত লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ভোর পাঁচটা থেকে নয়া দিল্লি এলাকায় শুরু হয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে দিল্লিকে কয়েকটি আলাদা জোনে ভাগ করা হয়েছে। নয়া দিল্লি এলাকাকে 'কন্ট্রোলড জোন ওয়ান' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়া গেট, কর্তব্য পথ, রাইসিনা রোড এবং প্রগতি ময়দানের ভারত মন্ডপমমুখী মোট ১৬টি রাস্তা। যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী লরি, অটো, ট্যাক্সি-সহ যাত্রী পরিবহনে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমনকি, বন্ধ করা হয়েছে অনলাইন ডেলিভারি। শুধুমাত্র, মেডিকেল এমার্জেন্সি এবং জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ছাড়পত্র দেখিয়ে ছাড় পাওয়া হবে। চালু থাকছে মেট্রো পরিষেবা। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। নিউ দিল্লি এলাকার মধ্যের মেট্রো স্টেশনে অধিকাংশ গেট বন্ধ রাখা হচ্ছে।

জি২০ (G-20) বা গ্রুপ অফ টুয়েন্টি হল একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম। ১৯৯৯ সালে এশিয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ার পর, ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য এই ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ২০০৭-এ সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে জি২০ গোষ্ঠী রাষ্ট্রপ্রধান স্তরে উন্নীত হয়েছিল। অর্থাৎ, শীর্ষস্তরের বৈঠক শুরু হয়। ২০০৯-এ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরামে পরিণত হয় এই গোষ্ঠী। ২০২২-এর ১ ডিসেম্বর থেকে এই গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্বে আছে ভারত। 


অষ্টাদশ জি-২০ শিখর সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত নতুন দিল্লি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। সারা বছর ধরে জি-২০’র যেসব মন্ত্রী বা পদস্থ আধিকারিক পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে নতুন দিল্লির শিখর সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতারা যৌথ ঘোষণাপত্র গ্রহণ করবেন। নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর এই জি-২০ শিখর সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

লক্ষ্ণৌ, হায়দরাবাদ, পুণে এবং বেঙ্গালুরুতে জি-২০’র ডিজিটাল অর্থনীতির কর্মীগোষ্ঠীর বৈঠক সফলভাবে আয়োজন করে ভারত সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। এই বৈঠক থেকে মূল যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে, তা হ’ল – জি-২০ দেশগুলি ভারতের সভাপতিত্বে ডিজিটাল জনপরিকাঠামো এবং ডিপিআই – এর জন্য ভবিষ্যতে জোট গঠন করার মতো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। 

৬টি দেশের মধ্যে ইন্ডিয়া স্ট্যাক পোর্টফোলিও-র বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

নতুন দিল্লিতে আয়োজিত অষ্টাদশ জি-২০ শিখর সম্মেলনের মূল আকর্ষণ হ’ল - ডিজিটাল ইন্ডিয়া এক্সপেরিয়েন্স জোন। জি-২০’র প্রতিনিধিদের ডিজিটাল জনপরিকাঠামো ও ভারতে যে সফলভাবে ডিজিটাল লেনদেন চলে, সে বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রদান করার জন্যই এই ক্ষেত্রটি গড়ে তোলা হয়েছে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া এক্সপেরিয়েন্স জোন এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া সেন্টার:

প্রগতি ময়দানের ৪ ও ১৪ নম্বর হল – এ ডিজিটাল ইন্ডিয়া এক্সপেরিয়েন্স জোন গড়ে তোলা হয়েছে –

•    জীবনযাত্রার সরলীকরণ

•    বাণিজ্যের সরলীকরণ

•    সুশাসনের সরলীকরণ

এই তিনটি বিষয় বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হবে। আধার, ডিজি-লকার, ইউপিআই, ই-সঞ্জিবনী, দীক্ষা, ভাষিনী এবং ওএনডিসি – এই ৭টি নির্বাচিত উদ্যোগ জি-২০’র প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হবে। 

মুখাবয়ব সনাক্তকরণের মাধ্যমে আধার তৈরির বিষয়টি সরাসরি দেখানো হবে। অতিথিরা নিজেরা হাতে-কলমে ভারতের ডিজি-লকার সম্পর্কে শিখতে পারবেন। 


প্রদর্শনীতে ই-সঞ্জিবনী তুলে ধরার মূল লক্ষ্য - হৃদরোগ, মানসিক সুস্বাস্থ্য, চক্ষু রোগ বা সাধারণ বিশেষজ্ঞের মতো বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা, অনলাইনে পরামর্শ প্রদান এবং ই-প্রেসক্রিপশন প্রদান করা। 

২০১৪ সাল থেকে ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র পথ চলার উল্লেখযোগ্য দিকগুলিও দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হবে। জিআইটিএ কিয়স্কে দর্শনার্থীরা পবিত্র বই শ্রীমদ্ভগবতগীতা সম্পর্কে তাঁদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাবেন। 

জি-২০’র সদস্যদের জন্য ডিজিটাল ভারতের অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 জি২০ গোষ্ঠী ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই ১৯টি দেশ হল আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, জার্মানি, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইটালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং অবশ্যই ভারত। আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ প্রায় প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরই অংশ নিচ্ছেন। তবে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যেই জনিয়ে দিয়েছেন বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না। ব্যস্ত কর্মসূচি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তিনি আসতে না পারলেও, তাঁর জায়গায় বৈঠকে অংশ নেবেন রুশ বিদেশমন্ত্রী ল্যাভরভ।

বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি – ভারতের সভাপতিত্বে এই ৯ দেশকে অতিথি সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাঙ্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শ্রম সংস্থা, ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি বোর্ড, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন সংস্থা – এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রধানরাও অংশ নেবেন এই শীর্ষ সম্মেলনে। এই সংগঠনগুলির পাশাপাশি, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আশিয়ান, আফ্রিকান ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলির প্রধানরাও। এছাড়া আন্তর্জাতিক সৌর জোট, কোয়ালিশন ফর ডিসাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক – এই সংস্থাগুলিকে অতিথি সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Tamoghna Mukherjee