সম্প্রতি রাজ্যে বেশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে ডেঙ্গি! প্রায় প্রতিদিনই সামনে আসছে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা। চলতি বছরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ইতিমধ্যে কলকাতা পুরসভা এবং স্বাস্থ্যভবন যৌথভাবে ডেঙ্গি মোকাবিলাতে নেমে পড়েছে। কিন্তু শীতের মরশুমেও ডেঙ্গির পরিমান কমার লক্ষণ নেই। প্রায় দিনিই রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তে মৃত্যু হচ্ছে অনেকেরই। যদিও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে বেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু একেবারেই থেমে যায়নি এই সংখ্যার গতি। প্রতিদিনিই আক্রান্ত হচ্ছে কেউ না কেউ। এরই মধ্যে পরপর দুইদিন দুই ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। একজনের নাম বিন্দু দেবী দাস, বয়স ৫২, বাড়ি বেলেঘাটার রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র রোডে। জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় জনের নাম কমলা বসাক, বয়স ৬২, বাড়ি রাজারহাট গোপালপুর পুরসভার চণ্ডীবেড়িয়া সারদা পল্লী এলাকায়। ডিসেম্বরের ৪ তারিখ থেকে এই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। এই নিয়ে চলতি বছরে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১০২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের থেকে এখনও কোনো মোট ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা সংক্রান্ত খবর জানায়নি।
তবে অনুমান করা হচ্ছে, পঞ্চাশ হাজারের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বঙ্গে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। কিছু মাস আগে প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৭ জন। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বিগত বছরগুলির মোট আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এই ২০২২।
তবে আগের থেকে এই আক্রান্তের সংখ্যায় কিছুটা হলেও লাগাম লেগেছে। ৪-৭ অক্টোবরের মধ্যে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়। কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন মারা যান । ১ জনের মৃত্যু হয় সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এডিস মশার কামড়ে এই ডেঙ্গি হয়। ডেঙ্গি হলে সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা - এসকল লক্ষণ দেখা যায়। পাশাপাশি ডেঙ্গি হলে শরীরে প্লেটলেটের মাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। তাই ডেঙ্গির লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, ডেঙ্গু সংক্রমণ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা এবং ডেঙ্গু-আক্রান্ত আনুমানিক তিন বিলিয়ন মানুষ এলাকায় বাস করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশ, চীন, আফ্রিকা, তাইওয়ান এবং মেক্সিকো। ন্যাশনাল ভেক্টর বার্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (NVBDCP) তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে শুধুমাত্র ভারতেই ৬৭ হাজারেরও বেশি ডেঙ্গি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।