পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিতাদেশ জানাল সুপ্রিম কোর্ট

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

রাষ্ট্রদোহ আইন নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত স্থগিত রাষ্ট্রদোহ আইন। এই নির্দেশের ফলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্র।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে,পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রদোহ আইনে নতুন কোনও মামলা রুজু করা যাবে না।এদিন দেশের শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে কেন্দ্র পুনর্বিবেচনা না করা অবধি রাষ্ট্রদোহ আইনে কোনও মামলা হবে না। এদিন কেন্দ্র সরকারকে ধাক্কা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ১২৪ এ ধারায় কোনও রাষ্ট্রদোহ আইন আনা যাবে না।বুধবার এমনটাই নির্দেশ দিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।যতদিন না আইনের পুনর্বিবেচনা হচ্ছে,ততদিন কী এই আইনের আওতায় রুজু হওয়া মামলা স্থগিত রাখা যায়? একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন কেন্দ্র সরকারের কাছে কোনও অধিকার আছে যেখানে রাজ্যগুলিকে এই আইন প্রয়োগ না করার কথা বলতে পারে?এদিন কেন্দ্রিয় সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়, একমাত্র পুলিশ সুপার এবং তাঁর উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকরাই মামলা রুজু করতে পারবে। এরপরেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা।কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা আজ আদালতকে বলেন,সরকারের পক্ষে এমন কোনও নির্দেশ জারি করা সম্ভব নয় যে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে গণ্য হতে পারে এমন কোনও ধারাকে অকার্যকর রাখা। আদালতেরও সে পথে হাঁটা অনুচিত হবে। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, যে আচরণ, মন্তব্যকে ১২৪ এ ধারায় দেশদ্রোহিতা বলে ধরা হয় সেগুলি অন্য অনেক আইনের বিভিন্ন ধারাতেও আছে। তাহলে একটি আইনের একটি ধারা সাময়িক স্থগিত রাখতে বাধা কোথায়?সলিসিটর জেনারেল অবশ্য জানিয়েছিলেন,সরকার কেস ভিত্তিক জামিনের আবেদনগুলি বিবেচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু ধারাটির উপর স্থগিতাদেশ জারি করা আদালতের পক্ষে সঠিক হবে না বলে সলিসিটর জেনারেল এদিন বারে বারে সর্বোচ্চ আদালতকে সতর্ক করার চেষ্টা চালিয়ে যান। মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল কেন্দ্রের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের জেলগুলিতে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ এই ঔপনিবেশিক ধারায় জেল খাটছেন।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে দেশে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই। এই আইন নিয়ে এর আগেও কেন্দ্রের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এমনকি এই আইনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন বিচারপতি। এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে হলফনামা দিয়ে বলা হয়, 'কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে,রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের কিছু অংশ পরীক্ষা ও পুনর্বিবেচনা করা হবে।'
আইনের ইতিবৃত্ত অনুসারেঃ
ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬২ সালে দণ্ডবিধি চালু হয়। তখন সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ নিয়ে কোনো সেকশন ছিল না। ১৮৭০ সালে ধারাটি যুক্ত হয়। বালগঙ্গাধর তিলককে প্রথম এই ধারা অনুসারে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মহত্মা গান্ধীকেও ইয়ং ইন্ডিয়ার লেখার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন  অনুসারেঃ
এই আইনে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় এবং তাকে জেলে পাঠানো যায়। ১৯৬২ সালে কেদারনাথ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে সাংবিধানিক ঘোষণা করেও জানায়, সরকারের সমালোচনা করা হলে, তাকে কোনোভাবেই দেশদ্রোহ বলা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট গতবছর প্রশ্ন তোলে,স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কি এই আইনের প্রয়োজন আছে? তারা জানায়,সরকার পুরনো প্রচুর আইনকে বাতিল করেছে। তাহলে এই আইনের পর্যালোচনা কেন করা হবে না?নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে বলে কংগ্রেস সহ বিরোধীদের অভিযোগ।
সরকার বলছে,মোদী সরকার প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে জানায়, সরকার যতক্ষণ এই আইন খতিয়ে না দেখছে, ততক্ষণ সুপ্রিম কোর্ট যেন পর্যালোচনা না করে। পরে তারা এই অবস্থান থেকে সরে আসে। সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনে কিছু বদল করতে চায়। বদলটা হলো, পুলিশ সুপার বা তার সমান পদমর্যাদার কোনো অফিসার যদি মনে করেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যায়, তাহলেই তা করা যাবে। আর ওই অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, কেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হচ্ছে।কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন ছিল, রাষ্ট্রদ্রোহের যে মামলা চলছে, সেগুলিকে থামিয়ে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, টাকা নয়ছয় ও অর্থ বিদেশে পাঠানোর ঘটনা জড়িত থাকতে পারে। এগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতই সিদ্ধান্ত নিক। বিচারবিভাগকে ভরসা করা উচিত।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : SRIJITA MALLICK

Related News