ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্ত বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের সামনে এক নতুন সংকট তৈরি করেছে। সেই সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে—ওষুধ। যুদ্ধংদেহী মনোভাবের ফলস্বরূপ পাকিস্তান সরকার নিজেই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফলেই এবার দেশজুড়ে বড়সড় ওষুধ সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একে বলে 'খাল কেটে কুমির আনা'!
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের ওষুধ শিল্প ভারতের উপর এতটাই নির্ভরশীল যে, কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বহু মানুষকে চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের ওষুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আসে ভারত থেকেই। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরণের প্রস্তুত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে এক জঙ্গি হামলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। এই ঘটনার পর ভারতের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয় পাকিস্তান সরকার। সেই প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ভারতের সঙ্গে সমস্ত ধরণের বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও সেই পদক্ষেপ কূটনৈতিকভাবে কঠিন বার্তা দিতে পারলেও, বাস্তবের মাটিতে তার পরিণতি এখন টের পাচ্ছে পাকিস্তান নিজেই। বাজারে এখনও পর্যন্ত বড়সড় প্রভাব না পড়লেও, আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানের ‘ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি’ (DRAP) ওষুধ প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছে। লক্ষ্য একটাই—যেকোনওভাবে ওষুধ সংকট যেন তৈরি না হয়। পাকিস্তান সরকার এখন ভারতের বিকল্প উৎস খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চিন, রাশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশের সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে চুক্তি হয়নি। এর অন্যতম প্রধান কারণ, ভারতের তুলনায় ওই দেশগুলি থেকে ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ বহুগুণ বেশি পড়ে। পাকিস্তানের মতো আর্থিক সংকটে থাকা দেশের পক্ষে সেটা দীর্ঘমেয়াদে বহন করা কার্যত অসম্ভব।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কড়া বার্তা ‘মান কি বাত’ অনুষ্ঠানে
উলেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পরও ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ হয়েছিল। তখনও দেশজুড়ে ওষুধ সংকট দেখা দেয়। সেবারের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এবার আগেভাগে ব্যবস্থা নিতে চাইছে পাক প্রশাসন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই ব্যবস্থা যথেষ্ট কি না? বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যতই কঠোর হোক, বাস্তব প্রয়োজন ও মানবিক দিক কখনও উপেক্ষা করা যায় না। পাকিস্তান যদি ভারতের সঙ্গে ওষুধ সংক্রান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে রাখে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে সাধারণ মানুষ। তাই সংকট নিরসনে আবেগ নয়, প্রয়োজন বাস্তবমুখী কূটনীতি ও মানবিক বোধের।