নেতাজির জন্মবার্ষিকী নিয়ে রাজনীতি বিতর্ক তুঙ্গে

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

প্রতিরক্ষামন্ত্রকের উদাসীনতায় এবার সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানীর বুকে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো থাকছে না বলেই খবর। সামনেই রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। আর সেকথা মাথায় রেখেই এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবস এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী একসঙ্গে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। তা নজরে রেখেই বাংলার থিমের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নেতাজি ও আজাদহিন্দ বাহিনী’। ট্যাবলোর থিম ছিল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে অবদানকে স্মরণ করা। এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলে যে এটি বাদ দেওয়ার অর্থ এই স্বাধীনতা যোদ্ধাদের ছোট করা। কিন্তু সরাসরি বাংলায় ট্যাবলোই বাতিল করে দিয়েছে মোদী সরকার। যা নিয়ে জোর চাপানউতর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে গত বছরের মতো এ বছরও কেন প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলার ট্যাবলো বাতিল করা হল, তা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। গত বছরও কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের কন্যাশ্রী ও একাধিক সামাজিক প্রকল্প-সহ ট্যাবলো বাতিল করা হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণতন্ত্র দিবসে পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে ট্যাবলো করার অনুরোধ জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। এই বিষয়ে তিনি চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে। জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এবার সাধারণতন্ত্র দিবসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং আইএনএ–কে নিয়ে ট্যাবলো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এই কেন্দ্র–রাজ্য টানাপোড়েনের জেরে সাধারণতন্ত্র দিবসে এবার প্রথম থাকছে না পশ্চিমবঙ্গের কোনও ট্যাবলো। প্রত্যেক বছর সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে রাজধানীর রাজপথে কুচকাওয়াজের পর বিভিন্ন রাজ্যের সুসজ্জিত ট্যাবলো দেখা যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষ কমিটি ট্যাবলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এবার সাধারণতন্ত্র দিবসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং আইএনএ নিয়ে ট্যাবলো পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।

পশ্চিমবঙ্গে শুধু নয়, গোটা দেশে নেতাজিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার রাজনীতিটা কিন্তু ২০১৪ সালে মোদী শুরু করেছিলেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর বলেছিলেন, 'মহাফেজ খানা থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের গোপন সমস্ত নথি সরকার এবারে প্রকাশ করে দেবে।' কেন এতদিন প্রকাশ করা হয়নি, তার সুষ্ঠু জবাব অবশ্য সরকারপক্ষ দেয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের আমজনতার মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে, নেতাজি এবং নেহরুর মতপার্থক্য, বিবাদ, এমনকী ব্রিটিশ যেভাবে ওয়ার-ক্রিমিনাল ঘোষণা করেছিল, নেতাজি সম্পর্কে ব্রিটিশ গোয়েন্দা যে রিপোর্ট দিত, সে-সব ব্যাপারে কিন্তু নেহরুর খুব জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। আর এ ব্যাপারে অনেক ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও রয়েছে। একদা ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ এর মতো রাজনৈতিক দলও এ ব্যাপারে খুবই সক্রিয় হয়ে এই সমস্ত প্রচার করতেন। 
কেন্দ্র–রাজ্যের দড়ি টানাটানি চলছে। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বাবুল সুপ্রিয়। তিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বাবুলের সাফ বক্তব্য, সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বাংলার ট্যাবলো বাদ দেওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের সস্তার রাজনীতি।
টুইটারে বাবুল সুপ্রিয় লেখেন, ‘নেতাজিকে উৎসর্গ করা বাংলার ট্যাবলো সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। কেন্দ্র সস্তার রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু করছে না। কী ধরনের মানসিকতা থেকে এমন আচরণ করা যায়, তা ভাবলে আশ্চর্য লাগে। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।’
উল্লেখ্য, এই বছর ২৬ জানুয়ারি উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির অনুষ্ঠানে নেতাজি এবং আইএনএ নিয়ে ট্যাবলোর প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেই প্রস্তাব মৌখিকভাবে খারিজ করে দেওয়া হয়। আর তা নিয়েই চলছে জোর টানাপোড়েন। নেতাজি কন্যা অনিতা বসু পাফও ট্যাবলো বিতর্ক নিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গতবছর যেখানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মদিন পালনে ছুটে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবার সেই নেতাজিকে উৎসর্গ করা ট্যাবলোই বাদ দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করছি।’‌
নির্মলা সীতারমন বিষয়টি নিয়ে একাধিক টুইট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, শিল্প, সংস্কৃতি, ভাস্তর্য, সঙ্গীত, স্থাপত্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ট্যাবলোগুলিকে তালিকা ভুক্তি করেন। তিনি বলেছেন, সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত এবার ৫৬ টির মধ্যে ২১ টিকে তালিকাভুক্তি করা হয়েছে।

প্রত্যেক বছর বিভিন্ন রাজ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো নিয়ে প্রস্তাব পাঠায়। এছাড়া প্যারেডের সময়ও নির্দিষ্ট। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এর মধ্যে থেকে বেছে নেন। এবার ৫৬টির মধ্যে থেকে ২১ টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে টুইটে জানিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই সংক্রান্ত মানদণ্ড কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। তিনি বলেছেন এবার যে তিন রাজ্যের কথা বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে বাংলার ট্যাবলো ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২১-এ গৃহীত হয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৮ ও ২০২১-এ কেরল এবং ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালে তামিলনাড়ুর ট্যাবলো গৃহীত হয়েছিল।
এবার পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ওপরে। যে ট্যাবলো বাজ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নির্মলা সীতারমন বলেছেন, এবারে সিপিডব্লুডির ট্যাবলোতেও নেতাজি রয়েছে। ফলে নেতাজিকে ট্যাবলো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এমন খারাপ রাজনীতি দেখা বন্ধ করুন, বিরোধীদের কাছে আবেদনে বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
ট্যাবলো খারিজ করা নিয়ে  চিঠি লিখেছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও। কিন্তু কারও পুনর্বিবেচনার আবেদন মঞ্জুর করল না কেন্দ্র। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক বরিষ্ঠ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। প্রতিরক্ষা রাজনাথ সিংহ ট্যাবলো বাতিলের কারণ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত,  কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী একে সস্তা রাজনীতি আখ্যা দিয়েছিলেন। এবং টুইটে জানিয়েছিলেন, সমায়াভাবের কারণেই ওই দুই রাজ্যের প্রস্তাবিত ট্যাবলো বাতিল হয়েছে। এ বার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক সিনিয়র আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাল, ট্যাবলো অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বাংলা ও তামিলনাড়ুর অনুরোধ পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে না। কেন তাঁদের ট্যাবলো বাদ পড়ল, সেই কারণ জানিয়ে মমতা ও স্ট্যালিনকে চিঠি দিয়েছেন রাজনাথ সিংহ।
বাংলার শাসক দল তৃণমূলের মুখপত্রে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, নেতাজি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের মানুষ বলেই কি এই অবহেলা? ঘটনাচক্রে সে দিনই সংবাদ সংস্থা মারফত খবর এল, বাংলার ট্যাবলো-আবেদন পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে না কেন্দ্র। কেন বাতিল হল বাংলা ও তামিলনাড়ুর আবেদন, সেই কারণ জানিয়ে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই চিঠি লিখেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Sayantika Biswas

Tags:

Related News