৭৫ বছরের ট্যাক্সি চালক গাজি জালালউদ্দিন গরিব শিশুদের জন্য তৈরি করেছেন দুটি স্কুল এবং অনাথ আশ্রম

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

জালালউদ্দীন কলকাতার একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। অভাবের তাড়নায় ইচ্ছা সত্ত্বেও ছোটবেলায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি জালালউদ্দীন। অভাবের কারণে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করতে হয়। সে সময় অভাবের তাড়নায় তিনি কলকাতার এন্টালি, মৌলালি অঞ্চলের ফুটপাতে ভিক্ষা করতেন। সে ভিক্ষা থেকে উপার্জিত অর্থেই চলত তাঁর জীবন।

পরবর্তীকালে তিনি রিক্সা ড্রাইভার হিসেবে এবং বর্তমানে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার  হিসেবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। কিন্তু তাঁর মত অভাবের তাড়নায় যাতে আর কোনো শিশুকে পড়াশোনার থেকে বিচ্যুত হতে না হয় সেই কারণে তাঁর ট্যাক্সিতে আসা আরোহীদের কাছ থেকে ভিক্ষা চেয়ে তাঁর গ্রামে তিনি নির্মাণ করেছেন দুটি স্কুল। একটি অনাথ আশ্রম।


প্রথমে একটি বাড়িতে যে সময় তাঁরা থাকতেন সেই বাড়ির এক কামরাতে তৈরি হয় প্রথম স্কুল। এরপর এক কামরার স্কুল থেকে প্রথমে হয় একটি বড় স্কুল, তারপর অপর আরেকটি স্কুল এবং একটি অনাথ আশ্রম করেছেন গাজী জালালউদ্দীন। অবশেষে তাঁর এই সুচেষ্টা সফলতা লাভ করেছে এবং বর্তমানে সমান ভাবে ছেলে মেয়ে উভয়ই এই স্কুলে পড়াশোনা করতে আসে।

জালালউদ্দীন তাঁর এই মানবিক কাজের জন্য পরিচিতি পেয়েছেন। কেবিসিতেও যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অর্থ সাহায্য করেছেন অমিতাভ বচ্চনও। কেবিসি থেকে পাওয়া ২৫ লক্ষ, অমিতাভ বচ্চনের দেওয়া ২১ লক্ষ এবং আমির খান এর দেওয়া ১১ লাখ টাকা নিয়ে নরেন্দ্রপুরে জমি কিনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল খোলার কাজ বর্তমানে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।


রিক্সাচালক জালালুদ্দিন শিখলেন ট্যাক্সি চালানো। যিনি শেখাবেন তাঁকে তো পারিশ্রমিক দেওয়ার সাধ্য নেই জালালুদ্দিনের। বিনিময়ে তাঁর স্ত্রীকে পরিচারিকার কাজ করতে হয় ওই ট্যাক্সি ট্রেনারের বাড়িতে। ট্যাক্সিচালক জালালুদ্দিন নিজে শেখার পর তাঁর এলাকার একাধিক  মানুষকে ট্যাক্সি চালানো শেখান এবং তাদের বলেন আরও দুজনকে শেখাতে। এ ভাবেই দুই দুই করে বাড়তে বাড়তে তার সংখ্যা প্রায় ১০০ ছাড়িয়েছে। এখন সুন্দরবনের মত প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে খাদ্য পানীয় জলের সঠিক জোগান নেয়, সেখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন তিনটি অনাথ শিশুদের জন্য্ স্কুল। ৪০০ শিশুর খাওয়া, পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। এরপরও কিন্তু থেমেছিল না জালালুদ্দিন গাজির স্বপ্ন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ১টা কলেজ তৈরি করার। কিন্তু ১ টা কলেজ তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা জালালুদ্দিন বাবুর পক্ষে জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব ছিল।


KBC শোতে তার হয়ে খেলেছেন স্বয়ং আমির খান, আর অনুষ্ঠানের হোস্ট অমিতাভ বচ্চন। ভাল কাজের ফল সবসময় ভাল না হলেও কখনো কখনো তো হয়ই। নইলে যে মানুষ ভালোর প্রতি বিশ্বাস হারাবে। সেদিনের সেই শো তে জালালুদ্দিন গাজি ২৫ লক্ষ টাকা পুরষ্কার স্বরুপ পান। তাছাড়াও আমির খান এবং অমিতাভ বচ্চন তাঁকে বেশ কিছু অর্থ সাহাজ্য করেন জালালউদ্দিন গাজীকে । এই প্রাপ্ত অর্থ তিনি সম্পূর্ণটাই ব্যয় করতে চান দুস্থ শিশুদের জন্যও শিক্ষার ব্যাবস্থা করে, কলেজ করে। তার এই মহান কাজ ও লড়াইয়ের পথ মোটেই সহজ ছিল না। তবুও তাঁর লড়াইটা তিনি লড়ে গিয়েছেন। থামেননি। তাই হয়তো নিয়তি তাকে থামায়নি।  তাঁর মহৎ স্বপ্নের বৃহৎ উড়ানের পথ খুলে দিয়েছে কউন বানেগা ক্রোরপতি। এবারে হয়তো আরও কিছু দুঃস্থ কিশোর কিশোরীর কলেজে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

জালালুদ্দিন গাজির লড়াই কিন্তু এখনও থামেনি। এখনও শিশুদের শিক্ষিত করার জন্য, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি লরাই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর  আমৃত্যু হয়তো এ লড়াই চলবে।


দুটি স্কুলকেই উচ্চ প্রাথমিক করে তোলার লক্ষ্য রয়েছে গাজী জালালউদ্দিনের। এই বিষয়ে শিক্ষা দপ্তর এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও হয়েছে তাঁর। অনাথ আশ্রমের সামনে পাকা রাস্তা এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অমিতাভ বচ্চন পরিচালিত একটি রিয়েলিটি শোতেও গিয়েছিলেন জালালউদ্দিন। তাঁর হয়ে খেলেছিলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। সেখান থেকে ২৫ লক্ষ টাকা জিতেছিলেন তিনি। সেই অর্থ দিয়ে ইতিমধ্যেই নরেন্দ্রপুরে তৃতীয় স্কুল বানানো শুরু করে দিয়েছেন ৭৫ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক। স্কুলের নাম রাখবেন অমিতাভ বচ্চন এবং আমির খানের নামে। 

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : প্রিয়শ্রী

Related News