Flash News
  1. ভারতের উপর থেকে ট্রাম্প-ট্যারিফ প্রত্যাহারের পথে আমেরিকা
Monday, September 22, 2025

ভারতের নেপোলিয়ন জীবনকালে কোন যুদ্ধে পরাজিত হননি তিনি! জানেন কে সেই বীর

banner

journalist Name : Ashapurna Das Adhikary

#Pravati Sangbad digital Desk:

প্রাচীন ভারতে কুষান সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতবর্ষে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। অনেক ছোট ছোট রাজ্য তৈরি হয়। পশ্চিম পাঞ্জাবে কুষান এবং গুজরাটে শকদের রাজত্ব থাকলেও গোটা ভারতকে একসূত্রে বাঁধার মতো কোন শক্তিশালী সাম্রাজ্য তৈরি হচ্ছিলনা। ঠিক এইরকম সময়েই ধ্বংসাবশেষের উপর একটি নতুন সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে যার নাম গুপ্ত সাম্রাজ্য। উত্তর ভারতের মগধে তৈরি হওয়া এই সাম্রাজ্য উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যকে কয়েকশো বছরেরও বেশী অক্ষুন্ন রেখেছিল। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কে ভারতের স্বর্নযুগ বলা হয়। এই গুপ্ত সাম্রাজ্যে এমন এক রাজা ছিল যাকে ভারতের নেপোলিয়ন বলা হত, ঐতিহাসিক ভিনসেণ্ট স্মিথ এই কথা বলেছিলেন। বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার জীবনের শেষযুদ্ধ ব্যাটেল অফ ওয়াটারলুতে পরাজিত হয়েছিল কিন্তু সমুদ্রগুপ্ত তার জীবনকালে কোন যুদ্ধে পরাজিত হয়নি।

     ৩৩৫-৩৮০ খ্রিস্টাব্দে (এডি) উত্তর ভারতে শাসন করত সমুদ্রগুপ্ত। গুপ্ত সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শাসক ছিলেন তিনি। গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রথম শাসক প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পুত্র ছিলেন তিনি। তবে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রথম দুই শাসক ছিল শ্রীগুপ্ত ও ঘটোতকচ, তবে এরা রাজা ছিল কিন্তু প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ও সমুদ্রগুপ্ত ছিল মহারাজাধিরাজ। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কে ভারতের ইতিহাসে স্বর্নযুগ বলা হয় কারন এই সময়ে ভারতে কলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। আক্ষরিক ভাবে স্বর্নযুগের সূচনা হয়েছিল সমুদ্রগুপ্তের সময় থেকেই।


সমুদ্রগুপ্তকে কবিরাজ বলা হত কারন সাহিত্য চর্চায় তিনি সুনিপুন ছিলেন। সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেনের লেখা এলাবাদ প্রশস্তি থেকে সমুদ্রগুপ্তের ব্যাপরে বিস্তারিত জানা যায়। তার সময়ে বিভিন্ন স্বর্নমুদ্রায় সমুদ্রগুপ্তের বীনবাদনরত ছবি দেখতে পাওয়া যায়, যা দেখে ধারনা করা হয় তিনি সংগীত প্রেমীও ছিলেন। জাভার ইতিহাসে সমুদ্রগুপ্তকে তান্ত্রিকামানডাকা বলা হয়েছে। সমুদ্রগুপ্তের মায়ের নাম ছিল কুমারদেবী। লিচ্ছবি বংশের রাজকন্যা কুমারদেবীকে বিবাহের পরই প্রথম চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্য আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে বলা হয় সমুদ্রগুপ্ত প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ও কুমারদেবীর প্রথম পুত্র ছিলনা, কিন্তু তার যোগ্যতার জন্য তাকেই রাজা করা হয়। কিছু কিছু ঐতিহাসিকরা বলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্তের বড় ছেলে ছিল কচ্ছ গুপ্ত, তাকে সরিয়ে রাজা হয় সমুদ্রগুপ্ত তবে আবার অনেকের ধারনা কচ্ছগুপ্তই সমুদ্রগুপ্ত উপাধি নিয়েছিল যার অর্থ সমুদ্র দ্বারা সুরক্ষিত। ভারতের রাজবংশের নিয়ম অনুযায়ী রাজার প্রথম পুত্রই রাজা হয়, কিন্তু সমুদ্রগুপ্তকে রাজা করবার জন্য প্রথম চন্দ্রগুপ্ত তার বাকী ছেলেদের প্রথম থেকেই রাজ্যপাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ভারতের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌটিল্য বা চানক্য বলেছিলেন শক্তিমান ব্যাক্তি যুদ্ধ করবে এবং শত্রুকে ধ্বংস করবে। তাই সমুদ্রগুপ্ত সিংহাসনে বসেই দ্বিগবিজয় শুরু করে। 

     ভারতবর্ষ ছাড়াও বর্তমান পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় অন্তত ৩০-৩৫ টি প্রদেশ তিনি জয় করেছিলেন। সমুদ্রগুপ্ত চানক্যর অর্থশাস্ত্র অনেকাংশ মেনে চলত এবং সুশাসক কিভাবে হওয়া যায় সেই নীতিও মানত। সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সমুদ্রগুপ্তের রীতি অনেকটা অদ্ভুত ছিল। তিনি মনে করতেন তার রাজধানী পাটলিপুত্র থেকে বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনা করা যথেষ্ট সমস্যার। সেইজন্য তিনি যখন যুদ্ধ করতেন প্রতিপক্ষ রাজাকে হত্যা করতেন না বরং সেই রাজাকে পরাস্ত করে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া হত এবং সেই রাজাকে আংশিক স্বাধীনতা দেওয়া হত কিন্তু প্রধান ক্ষমতা সমুদ্রগুপ্তের হাতেই থাকত। সমুদ্রগুপ্ত ব্রাহ্মন ধর্মের অনুসারী হলেও সব ধর্মের প্রতিই সহনশীল ছিলেন। বিখ্যাত বৌদ্ধ পন্ডিত বসুবন্ধু ছিল তার বন্ধু ও মন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রাজা মেঘাবর্মা বৌদ্ধগয়াতে বৌদ্ধমঠ তৈরি করবার অনুমতি চেয়েছিলেন, সমুদ্রগুপ্ত তাতে রাজি হয়েছিলেন। সমুদ্রগুপ্তের সময়ে সাত ধরনের মুদ্রা ছিল এবং সব মুদ্রাতেই সমুদ্রগুপ্তের বিভিন্ন ধরনের ছবি ছিল। কখনও তিনি বাঘ শিকার করছেন, কখনও বীনা বাজচ্ছেন আবার কখনও কুঠার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। সমুদ্রগুপ্তের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না, শুধু এটুকু জানা যায় ওনার একমাত্র স্ত্রী ছিলেন দত্তাদেবী। ৪৫ বছর ভারত শাসন করবার পর ওনার পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ভারতের সিংহাসনে বসেন, যিনি তার বাবার থেকেও মহান ও শক্তিশালী শাসক ছিলেন। চক্রবর্তী সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের মতো শক্তিশালী শাসক ভারতবর্ষের ইতিহাসে খুব কমই ছিল।