ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময়, বেশিরভাগ মানুষই কম বাজেটে ভালোভাবে ভ্রমণ করার চেষ্টা করেন। অফ সিজনে এটি সম্ভব কারণ এই সময়ে হোটেলগুলি তাদের রেট কমিয়ে দেয়। পর্যটন স্থানগুলিতে কম পর্যটক আসে। একই সময়ে সিজনে হোটেলগুলির রেট খুব ব্যয়বহুল হয়ে যায় এবং বিকল্পের অভাবে বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল জায়গায় থাকতে হয়। ফলে বাজেট নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগলিক কাঠামো, নির্মল ও নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য হিমাচল প্রদেশকে সহজেই প্রতিবেশী অন্যান্য স্থানের চেয়ে আলাদা করা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উচ্চতায় অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ।
এক টুকরো স্বর্গ যেন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে রূপকথা হয়ে মর্তে নেমে এসেছে। ট্রেনে আসুন বা গাড়িতে, পাইন-ওক-রডোডেনড্রনের সবুজে ছাওয়া ছোট্ট পাহাড়ি জনপদটি জিতে নিতে পারে আপনার হৃদয়। আসন্ন গরমে যাঁরা সিমলার ঘাড়ে-নিঃশ্বাস-ফেলা ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি চান, তাঁদের নিশ্চিত গন্তব্য হোক শোঘি।অরণ্য-পাহাড়-উপত্যকার ত্রিবেণী সঙ্গমে অবস্থিত ছোট্ট শোঘি ইতিমধ্যেই রসিকজনের মন কেড়েছে। জাতীয় সড়কের ওপরে ৫,৭০০ ফুট উচ্চতার এই গন্তব্য এখনও শহুরে কোলাহল মুক্ত এক আদর্শ বেড়ানোর জায়গা। অথচ হাত বাড়ালেই রাজধানী শহর। মোটামুটি ২ কিমি রাস্তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শোঘি। এখানে এখনও বাতাস বিশুদ্ধ, তাই আকাশ নির্মল। এখনও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন আর স্থানীয় মানুষ আদ্যন্ত অতিথিপরায়ণ।
নির্ভেজাল অবকাশ চাইলে মোবাইল ফোন বন্ধ করে পাখি দেখে সময় কাটাতে পারবেন। কত কত হামিংবার্ড, ম্যাগপাই, ফ্লাইক্যাচার গল্পগাছায় ব্যস্ত দেখবেন। গহীন গাছের ফিসফাস শুনে তাদের ভাষা শিখে নিন, অন্তরমহল অজানা আনন্দে অনুরণিত হবে। নাম না জানা ঝর্নার ধারে বসে প্রতি মুহূর্তে জলের অঞ্জলী দেওয়া দেখুন, যেন সুরেলা পদাবলি। মনে রাখবেন, দিগন্তে এলিয়ে পড়া শোঘির সূর্যাস্ত বড় মনোরম, বড় কোমল। ঠান্ডাকে ভয় না পেলে, চাইলে সন্ধের পরে খাদের ধারের রেলিং-এ দাঁড়িয়ে ভিনদেশী তারার সঙ্গে রাতও জাগতে পারেন।
অ্যাডভেঞ্চার পিয়াসী মন কী আপনার! তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ইচ্ছে হলে পাহাড়ি পথে হেঁটে হেঁটে উঠে-নেমে কত কিছু আবিষ্কার করে ফেলতে পারবেন। এক ভোরে চা আর হালকা খাবার খেয়ে শহর-শেষের ডান হাতি রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকুন। দেওদারের ছায়া আর স্বপ্নে ঘেরা আকাবাঁকা উঁচু নিচু পাকদণ্ডী পথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় চার কিমি পথ ফুরিয়ে যাবে। সবুজের অভিবাদন নিতে নিতে পৌঁছে যাবেন ৬,১০০ ফুট উচ্চতার তারা দেবী মন্দিরে। মন্দিরটি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো। কেউ কেউ বলেন মন্দিরের বয়স পাঁচশ-র কম নয়। সে-সব ইতিহাস, বিজ্ঞজনের ব্যাপার। আপনি তো সৌন্দর্যের ব্যাপারী। আপনার তাতে কি আসে যায়? তারা দেবীর বিগ্রহটি কাঠের তৈরি। অক্টোবর-নভেম্বর মন্দিরে উত্সবের মরসুম। পূণ্যার্থীর ভিড়ে সরগরম থাকে। অন্য সময় অখণ্ড নীরবতা। তাই পুণ্যলোভে না হোক অন্তত প্রকৃতির হাতে ধরা দিতে এখানে যেতেই হবে। তারা পাহাড়ের চূড়োয় আছে চমত্কার শিবমন্দিরও। মন্দির চত্বর থেকে বরফাবৃত পাহাড়ি শৃঙ্গ আর অনুপম সিমলা শহরকে অসম্ভব সুন্দর দেখাবে। ছবি তোলার পক্ষে আদর্শ। ৩৬০ ডিগ্রিতে নিজেকে এভাবে বেআব্রু করে না হিমালয়।
হিমাচল প্রদেশের কিছু দর্শনীয় স্থানের ঠিকানা -
ইশা ফাউন্ডেশন, কোয়েম্বাটুর
ইশা ফাউন্ডেশন কোয়েম্বাটুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি সদগুরুর একটি ধর্মীয় কেন্দ্র, যেখানে আদিযোগী শিবের একটি খুব সুন্দর এবং বড় মূর্তিও রয়েছে। এই কেন্দ্রটি যোগব্যায়াম, পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করে। আপনি চাইলে এখানে নিজের সাধ্যমতো দাম করতে পারেন। এখানে আপনি বিনামূল্যে থাকতে পারেন।
মণিকরণ সাহেব গুরুদ্বার, হিমাচল প্রদেশে
আপনি যদি হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে যান তবে আপনি বিনা মূল্যে মণিকরণ সাহেব গুরুদ্বারে থাকতে পারেন। এখানে আপনি বিনামূল্যে পার্কিং এবং খাবার সুবিধা পাবেন। মণিকরণ সাহেব গুরুদ্বার পার্বতী নদীর কাছে অবস্থিত।
গোবিন্দ ঘাট গুরুদ্বার, উত্তরাখণ্ড
এই গুরুদ্বারটি উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার অলকানন্দা নদীর কাছে অবস্থিত। এখানে আসা পর্যটক, ট্রেকার এবং ভক্তরা বিনামূল্যে এখানে থাকতে পারেন। গুরুদ্বার থেকে আপনি পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারেন।
তিব্বতি বৌদ্ধ মঠ, সারনাথ
উত্তর প্রদেশে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মঠে এক রাত থাকার ভাড়া মাত্র ৫০ টাকা। এই মঠটির রক্ষণাবেক্ষণ করে লাধন ছোটরুল মোনালাম চেনামো ট্রাস্ট। এই মঠে ভগবান বুদ্ধের রূপ শাক্যমুনির মূর্তি রয়েছে।