ব্রাজিলের ছোট্ট পাখি গ্যারিঞ্চা

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

(অষ্টম পর্ব)
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ, অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিল দলে অভিষেক হল দুই ফুটবলারের। একজন ফুটবলের যাদুকর পেলে অপরজন এমন এক ব্যাক্তি যার একটি পা অপর পায়ের তুলনায় প্রায় ৬ সেন্টিমিটার ছোট। শুধু তাই নয় অভিষিক্ত খেলোয়াড়ের পায়ের পাতাও বাঁকা। আমাদের দেশে হলে হয়ত তাকে ‘বিশেষভাবে সক্ষম’ এই তকমাটি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হত, নাহ তা হয়নি বরং সেই পা নিয়েই জিতেছেন ২টি বিশ্বকাপ। যিনি পেলের সমসাময়িক হয়েও হারিয়ে যাননি পেলের আলোর ছটায়। নিজে বরং ড্রিবিলিং-এর রোশনাইয়ে মাঝে মাঝে পিছনে ফেলেছেন পেলেকেও। আমরা কথা বলছি সেই ম্যানুয়েল ফ্রান্সিসকো দস্‌ সান্তোসের যাকে সারা বিশ্ব গ্যারিঞ্চা অথবা ছোট্ট পাখি হিসেবে চেনে। 
ব্রাজিলের পাউ গ্র্যান্ডিতে জন্মগ্রহন করা অসমান পায়ের অধিকারি ম্যানুয়েল ফ্রান্সিসকো দস্‌ সান্তোস ছোট-খাটো গড়নের ছিল যার জন্য আদর করে তাঁর বোন রোসা গ্যারিঞ্চা বলে ডাকত। তাঁর বন্ধুরাও তাকে ম্যানুয়েল কে ছোট করে ম্যানু বলে ডাকত। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় রিও ডি জেনিরো শহরের ক্লাবে খেলা গ্যারিঞ্চা ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রথম সুযোগ পান। ১৯৫৪ সালেই সুযোগ পেতেন কিন্তু ওই সময়ে ব্রাজিলের হয়ে উইঙ্গারে খেলতেন জুলিনহো যার কারনে সেই বিশ্বকাপে সুযোগ অধরাই থেকে যায় গ্যারিঞ্চার কাছে। ৫৮-র বিশ্বকাপে বছরে ৭ বছরের ছোট পেলের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে অভিষেক হয় বছর ২৫-এর গ্যারিঞ্চার। অভিষেক ম্যাচের এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যেই গারিঞ্চা বিপক্ষ দলের তিনজন খেলোয়াড় কাটিয়ে যে শটটি নেন তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এক মুহূর্ত পরেই গারিঞ্চার বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকে পেলের দুর্দান্ত শটটিও ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। গারিঞ্চা এর পরও একের পর এক ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন বিপক্ষের রক্ষণ। গারিঞ্চার অভিষেক ম্যাচের প্রথম তিন মিনিটকে বলা হয়ে থাকে ‘দি গ্রেটেস্ট থ্রি মিনিটস ইন ফুটবল হিস্ট্রি’। এরপর প্রতি ম্যাচেই গ্যারিঞ্চা এবং পেলে জুটি বিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, পেলে এবং গ্যরিঞ্চা একসাথে ব্রাজিলের হয়ে যে-কটি ম্যাচ খেলেছেন তাঁর একটি ম্যাচও ব্রাজিল দল হারেনি। জাতীয় দলের হয়ে গ্যারিঞ্চা খেলেছেন ৫৮, ৬২ এবং ৬৬-এর বিশ্বকাপ যার মধ্যে ৫৮ এবং ৬২ দুটি বিশ্বকাপই জয় করে গ্যারিঞ্চার ব্রাজিল। ৬৬-এর বিশ্বকাপের সময়ে গোড়ালির ব্যাথায় কাবু ছিলেন তিনি। তবুও ওই পায়েই প্রথম দুটি ম্যাচ খেলেন ব্রাজিল এবং দ্বিতীয় ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে একটি গোলও করেন। তবে পরের ম্যাচে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধ্বে ব্রাজিল দল খেলতে না নামায় গারিঞ্চার সেই ম্যাচটি শেষ ম্যাচে পর্যবাসিত হয়। ব্রাজিল দলের জার্সি গায়ে ৫০টি ম্যাচ খেলে গ্যারিঞ্চা জিতেছেন ৪৯টি ম্যাচ, শুধুমাত্র হাঙ্গেরি ম্যাচেই তিনি পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হন। তবে তাঁর আগে দলের হয়ে ১২টি মুল্যবান গোল গেছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে তিনি ৫৯৮ ম্যাচের মধ্যে ৫৮১টি ম্যাচই বোটাফোগোর হয়ে খেলেছেন। সবমিলিয়ে গোলসংখ্যা ২৩২টি। 
ব্রাজিল ফুটবলে কেউ কেউ মনে করেন পেলের থেকেও বেশি ক্যারিশমাটিক খেলোয়াড় ছিলেন গ্যারিঞ্চা। ৬২-র বিশ্বকাপে শুরুতে পেলে আহত হলে দলকে জয়ের সরণিতে রেখেছিলেন এই গ্যারিঞ্চাই। ব্রাজিল ফুটবল ইতিহাসে গ্যারিঞ্চার খেলা আজীবন অমলিন থেকে যাবে।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Tamoghna Mukherjee

Related News