ভারত ভ্রমণের বর্ষামঙ্গল; একনজরে দেখে নিন পর্যটনক্ষেত্রগুলি

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

একটা সময় মানুষ বেড়াতে যেত শীতের মরশুমে। এখন সময় বদলেছে, শীত-গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কোনো বিষয় নয় ,ছুটি পেলেই  বেরিয়ে পড়া।একটু নির্জনতার খোঁজেই বার বার ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যায় পাহাড়ে। ভারতের এমন কয়েকটি স্পট আছে যেগুলি বর্ষায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য একেবারে আদর্শ। তেমন কিছু স্থানের  সুলুক সন্ধান রইল আপনাদেরই জন্য।
মুসৌরি, উত্তরাখণ্ড
সুন্দরী মুসৌরির সৌন্দর্য বর্ষার আগমনে আরও বেড়ে যায়। পাহাড়, জঙ্গল বৃষ্টির জলে ধুয়ে যেন আরও গ্ল্যামারাস হয়ে ওঠে। প্রধানত গরম এবং শীতকালেই এখানেই পর্যটকরা ভিড় জমান। বর্ষাকালে এখানে পর্যটক কমই যান। কিন্তু যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাঁদের এই সময়টা  ভালো লাগবে যার মূল কারণ বৃষ্টিস্নাত শহরের রহস্যময় পরিবেশ । এই সময় পাহাড়গুলিতে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া আর কেউ জানেন না। সত্যি বলতে কি বর্ষাই মুসৌরি ভ্রমণের সবচেযে সঠিক সময়, হাতে ছাতা নিয়ে বা রেইনকোট পরে হেঁটে ঘুরতে দারুণ লাগে। কিংবা হোটেলের বারান্দায় বসে প্রকৃতির শোভাও দেখা যাবে।ভ্রমণ তো বটেই, অবকাশ যাপনের জন্য বেছে নিতে পারেন এই মুসৌরিকে।

কোদাইকানাল
তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় শৈলশহর কোদাইকানাল। সমতলের প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতেই কোদাইকানাল শহরের গোড়াপত্তন করা হয় ১৮৪৫ সালে। পর্যটনই এখানকার প্রধান আয়ের পথ। সারা বছরই এখানে লেগে রয়েছে ট্যুরিস্টদের ভিড়। তামিলনাড়ুর এই ট্রাভেল স্পটকে ‘প্রিন্সেস অব হিল স্টেশন’-ও বলা হয়। বর্ষার সময় এই পাহাড়ি এলাকা হয়ে ওঠে আরও মোহময়ী।  বর্ষায় এই বনানী পরিবেষ্টিত অঞ্চলের রূপ, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় একেবারেই আলাদা। জুলাই-অগস্ট অঝোর ধারায় ভিজিয়ে রাখে কোদাইকানালকে। ভিজে মাটির গন্ধে ভরে যায় পর্যটকদের মন। সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি খেলা চলে অলস ভঙ্গিমায়। পাহাড়ের আড়াল থেকে ভেসে আসা মেঘ দেখা যায় অনেক দূর থেকে। প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্ট কোদাই লেকের চারপাশে সাজানো বাগান- ফুলেরি মেলা। নীল আকাশ আর পালানি পাহাড়ের ছায়া পড়ে কোদাই লেকের বুকে। শহরে বেশকিছু পার্ক আছে। রয়েছে মানমন্দির, সোলার ফিজিক্যাল অবজারভেটরি।


লোনাভালা
মহারাষ্ট্রের পুনেতে অবস্থিত লোনাভালা হিল স্টেশনটির চারদিকের সবুজ পাহাড় ও সুন্দর হ্রদ পরিবেশকে  মুগ্ধ করে তোলে। সামনে খোলা আকাশ, চারপাশে সবুজ গাছে ঘেরা পাহাড়। আর পাহাড়ের গা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসছে ঝর্না। যেন এক  ‍টুকরো সবুজ স্বর্গ। সঙ্গে মনোরম পরিবেশ। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে গিয়ে বর্ষায় সময় কাটানোর উপযুক্ত ঠিকানা।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
আন্দামান ও নিকোবর এই দুটি দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হল এক স্বর্গোদ্যান এবং এইভাবেই প্রতি বছর বিপূল সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষিত করে। এটি অবকাশ যাপনের জন্য এক আদর্শ স্থান। অসাধারণ ওয়াইল্ড লাইফ আর ওয়াটার স্পোর্টসের অভিজ্ঞতার সঙ্গে বুক ভরে তাজা শ্বাস নিতে অবশ্যই বর্ষার সময় এই দ্বীপপুঞ্জে ঘুরে আসতে পারেন।

মুন্নার
মুন্নার কেরালার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলির একটি। ‘হানিমুন ডেস্টিনেশন’ হিসেবে এই জায়গাটির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এই জায়গা যেন সত্যিই স্বর্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই হিল স্টেশনটি বর্ষার সময়ে আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে। বর্ষায় ঘুরতে চাইলে  মুন্নার একেবারে আদর্শ জায়গা । এখানকার নদী, চা বাগান, পাহাড়, ঢেউ খেলানো রাস্তা ও অবশ্যই আবহাওয়া পর্যটকদের কাছে বিশেষ উপভোগ্য। চারদিকের রোমান্টিক পরিবেশ ও চোখধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই পর্যটকেরা বারবার ছুটে আসেন এখানে।
যোগ ফলস

বেঙ্গালুরু রাজধানী কর্নাটকের অন্যতম আকর্ষণ যোগ ফলস । বেঙ্গালুরুর এই জায়গাটিতে চারটি স্বচ্ছ জলের ঝর্না রয়েছে। চারটি জলধারা একত্র হয়ে এই বিশাল জল প্রপাতের সৃষ্টি। রাজা, রানী, রোভার  এবং রকেট এই চারটি জলধারা সহযোগে যোগের প্রাকৃতিক দৃশ্য অর্পূব। গাঢ় সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে তীব্র বেগে নেমে আসছে যোগ প্রপাতের চারটি জলধারা। বর্ষার সময় যোগ আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে এক অনাবিল সৌন্দর্য ধারণ করে। জল প্রপাতের আশে পাশে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পাখিদের। বৃষ্টির দিন এমন অপরূপ পরিবেশ আপনাকে অন্য আমেজ এনে দেবে।

নৈনিতাল

ভারতের উত্তরাখণ্ড অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হল নৈনিতাল। নৈনি লেকের নামানুসারে এই জায়গার নাম হয়েছে নৈনিতাল। বর্ষাকালে ঘুরতে যাওয়ার জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা।এখানকার পর্বতগুলির চূড়া থেকে দৃশ্যমান ভূ-দৃশ্যাবলি অসাধারণ। দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ সমভূমি আর উত্তরে তাকালে দেখা যাবে বরফাবৃত হিমালয়ের কেন্দ্রীয় পর্বত নন্দা দেবী, ত্রিশূল এবং নন্দা কোট । নৈনিতালের রাজভবনটি দর্শক ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। এছাড়া আপনি যেতে পারেন জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক, নৈনিতাল চিড়িয়াখানা, ব্রিটিশ আমলে তৈরি সেন্ট জনস চার্চ,  মুক্তেশ্বর হিল স্টেশন যেখান থেকে  কুমায়ুন হিমালয়ের অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা যায়।

বন্সওয়াড়া, রাজস্থান

রাজস্থানের নাম শুনলেই মনে হয় মরুভূমি, রুক্ষ শুষ্ক সবুজ হীন পাহাড়, পাথর, রাজপ্রাসাদ আর অনেকগুলো কেল্লা। কিন্তু সেখানেও যে নীল জল আর সবুজ গাছপালা থাকতে পার তা মনে হয় কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু রাজস্থানের বন্সওয়াড়াতে গেলে সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণ হবে। বন্সওয়াড়ার আরেক নাম শত দ্বীপের শহর। এখানে বর্ষাকালেই ঘুরতে যেতে হয়। এখানে আছে প্রচুর বাঁশের গাছ। সেই কারণেই এই জায়গার নাম বন্সওয়াড়া। সবুজ গাছপালায় ভরা টিলা, জলে ভরা হ্রদ এবং ছোটো নদী আর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনেই হবে না যে এই রাজ্যেরই আরেকদিন জলহীন ধূ ধূ মরু প্রান্তর। হ্রদের ধার কিংবা মাঠি নদীর ধারে বসে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতাই আলাদা। সবকিছু মনে হয় স্বপ্নের মতো।

চেরাপুঞ্জি, মেঘালয়
চেরাপুঞ্জি নামটা শুনলেই মনে হয় বুঝি বৃষ্টি পড়ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় সিক্ত স্থান এটি। বছরের প্রায় সারাটা সময় ধরেই এখানে বৃষ্টি হয়। ফলে সারাবছরই এখানে সবুজে সবুজ। সারা বছরই তো এখান বৃষ্টি হয়। তাহলে বর্ষায় স্পেশাল কি আছে? মনে প্রশ্নটা আসতেই পারে। তবে এই প্রশ্নের সঠিক কোনও উত্তর নেই। নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না। এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন তাঁদের অন্তত একবার বর্ষাকালে চেরাপুঞ্জি যাওয়া উচিত। বর্ষায় এখানে প্রচুর পাখির ডাক শোনা যায়। মনে হয় প্রকৃতিদেবী যেন সুমধুর সুরে গান গাইছেন। নদীর জল এই সময় বেড়ে যায়।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : SRIJITA MALLICK

Related News