কোভিড -১৯ মহামারী শিশুদের এবং তাদের পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ইউনিসেফ রিপোর্ট 'দ্য স্টেটস অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন ২০২১' এর একটি গবেষণা পত্রে প্রকাশ করা হয়েছে যে ভারতে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ১৪ শতাংশ কিশোর কিশোরীরা প্রায়ই একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে যা যুবসমাজকে বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দেয়। ১০-১৯ বছর বয়সী ৭ জন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একজন মানসিক ব্যাধি নিয়ে বসবাস করে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কিশোর-কিশোরীর মানসিক ব্যাধি রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যুব সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া বলেছেন, “আমাদের সনাতন সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মন ও শরীরের পারস্পরিক বিকাশের ফলে, সুস্থ জীবন যাপন করা যায়। শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকে। আমরা আনন্দিত যে ইউনিসেফ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে”। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে উল্লেখ করেছেন যা সমাজে যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের মধ্যে ঘন ঘন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য এই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি গুলো অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমানে কর্মব্যস্ততার ফলে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না, তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা একান্তই দরকার। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪ শতাংশ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে যা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে এবং সমাধান খুঁজতে হবে।
একটি উন্নত ও উন্নত সমাজ গঠনের জন্য সময়ে সময়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন। এ জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। কারণ, শিশুরা তাদের শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। যদিও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি এখনো একটি ট্যাবু হিসেবে রয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না বা কথা বলতে চায় না। ২১টি দেশে ইউনিসেফের সমীক্ষায়, ভারতের মাত্র ৪১ শতাংশ যুবক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য সমর্থন চাইতে বা জনসমক্ষে কথা বলতে ইচ্ছুক, যা এই ২১ টি দেশের গড় ৮৩ শতাংশ। সমীক্ষা চালানো ২১ টি দেশের কুড়ি হাজার শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চালানো একটি সমীক্ষা অনুসারে ভারতে শিশুরা মানসিক চাপের জন্য সাহায্য চাইতে অনিচ্ছুক বলে মনে করা হয়েছে। তার কারণ বেশিরভাগ মা-বাবার কাছে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে পারে না।
এই অনুপাত ক্যামেরুনে তিনজনের মধ্যে প্রায় একজন, ভারত ও বাংলাদেশে সাতজনের মধ্যে একজন থেকে শুরু করে ইথিওপিয়া এবং জাপানে দশজনের মধ্যে একজন। রিপোর্ট অনুসারে, ২১টি দেশের মধ্যে ভারতই একমাত্র যেখানে অল্প সংখ্যক যুবক মনে করে যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের অন্যদের কাছে পৌঁছানো উচিত এবং এ বিষয়ে কথা বলা উচিত।
ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে, ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে ভারতে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ২৮৬ মিলিয়নেরও বেশি শিশু করোনার কারণে বাড়িতে ছিল। ইউনিসেফের মূল্যায়নে দেখা গেছে যে মাত্র ৬০ শতাংশ ডিজিটাল ক্লাসরুম অ্যাক্সেস করতে পারে। অনেকে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে সক্ষম নয়। ফলে স্কুল ছুটের সংখ্যাও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা এবং মানসিক স্বাস্থ্য তহবিলের মধ্যে বিস্তৃত ব্যবধান রয়েছে। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রি ২০১৭ তথ্য অনুসারে ভারত মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বার্ষিক স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ০.০৫ শতাংশ বরাদ্দ করে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। সুতরাং মা-বাবার পাশাপাশি সরকারের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী। স্কুল গুলি এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। পাঠক্রমের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাঠ যুক্ত হলে তা আগামী প্রজন্মের সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার সহায়ক হবে।