মান্না দে: সঙ্গীতাকাশের অবিস্মরণীয় নক্ষত্রের ১০২তম জন্মদিন

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ভারতীয় সঙ্গীতের অন্যতম সেরা ও সফল সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে। তাকে বিবেচনা করা হয় সর্বকালের সেরাদের একজন গায়ক হিসেবে। তাঁর জন্ম ১লা মে ১৯১৯ সালে কলকাতায়। মান্না দে'র জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। মুখ্যমন্ত্রী টুইট করেছেন। তাঁর গানের প্রথম হাতেখড়ি হয়, তাঁর কাকা, গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি স্টেজে গান করা শুরু করেন। বাণিজ্যিক সিনেমায় ক্লাসিক্যাল গানের প্রচলনে তার আকাশচুম্বী সাফল্য বিস্ময়কর বটে। হিন্দি, বাংলাসহ অন্তত ২৪টি ভাষায় গান করেছেন কিংবদন্তি এই শিল্পী।
পঞ্চাশের দশকে ভারতজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন মান্না দে। তার কন্ঠ ছড়িয়ে যায় চারদিকে। ১৯৫৩ সালে ‘দো বিঘা জমিন’ সিনেমায় সলিল চৌধু্রীর সুরে দুটি গান করেন তিনি। দুটি গানই ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এরপর সলিল ও মান্না দু’জনের দারুণ জুটি গড়ে ওঠে। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে বহু গান উপহার দিয়েছেন।
ষাট ও সত্তরের দশককে বলা হয় মান্না দে’র ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সময়। এই দুই দশকে তিনি অসংখ্য শ্রোতানন্দিত গান গেয়েছেন। অবশ্য আশি এবং নব্বই দশকে এসেও তিনি নিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন। হিন্দি সিনেমার চেয়ে তখন বাংলা ও অন্যান্য ভাষার সিনেমায় অধিক সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি।
মান্না দে’র গাওয়া কালজয়ী হিন্দি গানগুলোর মধ্যে ‘জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পেহেলি’, ‘ইয়ে রাত ভিগি ভিগি’, ‘এ ভাই যারা দেখ কে চালো’, ‘তু পেয়ার কা সাগার হ্যায়’, ‘অ্যায় মেরি জোহরা যাবিন’, ‘কাসমে ওয়াদে পার ওয়াফা’, ‘লাগা চুনারি মে দাগ’, ‘তুম বিন জীবান’, ‘সুর না সাজে’, ‘ইয়ে হ্যায় ইমান মেরা’, ‘আজা সানাম মধুর চান্দানি’, ‘না মাঙ্গো সোনা চান্দি’, ‘দিল কা হাল সুনে দিলওয়ালা’, ‘অ্যায় মেরে পেয়ারে ওয়াতান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া বাংলা ভাষায় মান্না দে’র গাওয়া অসংখ্য শ্রোতানন্দিত ও কালজয়ী গান রয়েছে। লম্বা সেই তালিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘এই কুলে আমি ওই কুলে তুমি’, ‘আমি নিরালায় বসে’, ‘ও চাঁদ সামলে রাখো’, ‘আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে’, ‘দরদি গো কী চেয়েছি’, ‘শাওন রাতে যদি’, ‘আমার মন যমুনার’, ‘যখন কেউ আমাকে পাগল বলে’, ‘বড় একা লাগে’, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা’, ‘কী দেখলে তুমি আমাতে’, ‘কে তুমি তন্দ্রাহরণী’, ‘সুন্দরী গো দোহাই দোহাই’, ‘এসেছি আমি এসেছি’, ‘বাজে গো বীণা’, ‘তুমি নিজের মুখেই বললে’, ‘ক ফোঁটা চোখের জল’, ‘আবার হবে তো দেখা’, ‘ভালোবাসার আগুণ জ্বালাও’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’, ‘এইতো বেশ আছি’, ‘আমি তার ঠিকানা রাখিনি’, ‘না যেও না’, ‘তুমি অনেক যত্ন করে’, ‘জানি তোমার প্রেমের যোগ্য’, ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’ ইত্যাদি গান আজও সেই  বাঙালির মুখে মুখে গাইতে শোনা যায়।
বর্ণাঢ্য সঙ্গীত জীবনে মান্না দে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারতের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্ম ভূষণ’ ও ‘পদ্ম বিভুষণ’ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এছাড়া সিনেমা জগতে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এর বাইরে তিনি দুইবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতবার বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট’স অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, একবার ফিল্মফেয়ার এবং ফিল্মফেয়ারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর মান্না দে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চলে গেলেও রয়ে গেছে তার অমর কীর্তিগুলো। গানের ভুবনেই তিনি অবিস্মরণীয় নক্ষত্র হয়ে থেকে যাবেন চিরকাল।
উল্লেখ্য ভারতীয় সঙ্গীত জগতের প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত মান্না দের এই বছর ১০২ তম জন্মদিন। সেই জন্য মান্না দে স্মরণে আজ সকাল থেকে উত্তর কলকাতা জুড়ে বিশেষ ‘মিউজিক্যাল মিছিল’বের হয়েছে। এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই মিছিলে স্কুলের প্রায় দেড় হাজার বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেবে। মিছিলে থাকছে মান্নাদের ছবিসহ বিভিন্ন ট্যাবলো। প্রবাদপ্রতিম এই সংগীতশিল্পীর বিভিন্ন জনপ্রিয় গান বাজানো হবে ট্যাবলো থেকে। সেই গানের সঙ্গে গলা মেলাবেন মিছিলে হেঁটে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : SRIJITA MALLICK