নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা-অর্জন আন্দোলনে তিনি হলেন অতি-উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র, যিনি নির্দ্বিধভাবে এই মহাসংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাদের মনে সবসময়য়ই থেকে যায় ১৯৪৫ এর বিমান দুর্ঘটনায় কি আদেও মারা যান নেতাজি? সালটা ১৯৪৫ এর ১৮ই আগস্ট ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর জাপানি-অধিকৃত ফরমোজা দ্বীপে বর্তমানে যেটি তাইওয়ান নামে পরিচিত ,সেখানে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়ে তার দেহাবসান হয়। কিন্তু এই ঘটনা আদেও সত্যি কিনা তা যাচাই করা হয়নি। তার অনেক অনুগামীই, সেই সময় ঘটনাটা অস্বীকার করে। এমনকি এখনো তার মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্য বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে। ভারতের সব রাজনৈতিক দলই বলে যে, যদি আমরা কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসি তাহলে আমরা নেতাজির গোপন ফাইল প্রকাশ্যে আনব এবং নেতাজি মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরব। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৭৫ তম বছরেও কোন কেন্দ্রিয় সরকার দেশবাসীর কাছে নেতাজির মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করেনি। সবাই নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করে গেছেন। বিগত ৭৫ বছরে নেতাজির মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য দেশ কিছু কমিশন গঠন করে এবং কোন এক অজ্ঞাত কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিশন বা কমিটির রিপোর্ট অমীমাংসিত থেকে গেছে।
এবার সংক্ষেপে নেতাজির মৃত্যু সম্পর্কিত রিপোর্ট গুলি তুলে ধরছি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চিনের গোপন সামরিক রিপোর্টে প্রকাশ, সেখানে লেখা রয়েছে বিমান দুর্ঘটনার মতো এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি, সেইসময় গুলি করে একটি বিমানকে নামানো হয়েছিল, তবে তাতে নেতাজি ছিলেন না।
১৯৪৬ সালের ২৫ জুলাই তখনকার ব্রিটিশ সরকার ফিগেসের রিপোর্ট পেশ করে। কিন্তু সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি সেটি গোপন ছিল । ভারত সরকারের এক আংশিক গোপন শাখা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল ইন্টেলিজেন্স বা আইপিআইয়ের অধীনে ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রথম ১৯৫৬ সালে শাহ নওয়াজ কমিটি গঠন হয়। ১৯৪৫ সালে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে কী ঘটেছে, সেইসব গুজবকে থামানোর জন্যে, ভারত সরকার শাহ নওয়াজ খান-এর নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের কমিটি নিয়োগ করে।
তারপরে আবার খোসলা কমিশন গঠন হয় ১৯৭০ সালে । ভারত সরকার সুভাষচন্দ্রের 'অন্তর্ধান' নিয়ে তদন্ত করার জন্যে একটা নতুন কমিশন নিয়োগ করে।
এরপর মুখার্জি কমিশন গঠন হয়। মুখার্জি কমিশন তার রিপোর্ট পেশ করে ২০০৫ সালে ৮ নভেম্বর। ওই রিপোর্ট ভারতীয় সংসদে আলোচিত হয় ২০০৬ সালের ১৭ মে। তৎকালীন ভারত সরকার মুখার্জি কমিশনের রায়কে বাতিল করে দেয়।
সর্বশেষে প্রয়াত সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে ' জাপান সরকার দ্বারা তদন্তমূলক একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ওই রিপোর্টে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালে ১৮ অগস্ট তাইওয়ানে এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।