প্রতি বছর ১২ জানুয়ারি ভারতে উদযাপিত হয় জাতীয় যুব দিবস, যা মূলত স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে। তিনি ১৮৬৩ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ছোটবেলা থেকেই তিনি আধ্যাত্মিকতা ও আত্মোন্নতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন, এবং সেই কারণেই খুব অল্প বয়সেই তিনি জীবনকে আধ্যাত্মিক পথে পরিচালিত করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে তিনি স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন এবং ভারতের আধুনিক ইতিহাসের এক মহান পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব শুধু ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বব্যাপী অনুভূত হয়েছে। তিনি ১৮৯৭ সালে কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে তিনি তার গুরু স্বামী রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাণী প্রচার শুরু করেন। একই সময়ে, ১৮৯৮ সালে গঙ্গা নদীর তীরে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মঠও প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি সাধারণ সন্ন্যাসী পোশাক পরিধান করতেন, যা তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনধারা এবং সাধনার পরিচায়ক ছিল। বিবেকানন্দের জীবনে এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে যা আজকের দিনে আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বিশেষ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা যাক যা তার চরিত্রের গভীরতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়।
নতুন বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ কবে কোথায় দেখা যাবে? চলুন বিস্তারিত জেনে আসি
উলেখ্য, একদিন স্বামী বিবেকানন্দ বিদেশে সফররত অবস্থায় সাধারণ সন্ন্যাসী পোশাক পরে চলছিলেন। তাঁর পোশাক একজন বিদেশীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এবং ওই বিদেশী বিবেকানন্দর পাগড়ি টেনে নেন। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা দেখে, স্বামী বিবেকানন্দ বিনয়ের সাথে সেই বিদেশীকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন, “আপনি কি জানেন, এরূপ আচরণ কেন করছেন?” বিদেশী অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি শিক্ষিত?” স্বামী বিবেকানন্দ ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দেন, “হ্যাঁ, আমি শিক্ষিত এবং একজন ভদ্রলোক।” বিদেশী আরও অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, “কিন্তু আপনার জামাকাপড় দেখে তো মনে হয় না আপনি ভদ্রলোক।” তখন স্বামী বিবেকানন্দ সাহসীভাবে উত্তর দেন, “আপনার দেশে একজন দর্জি একজন মানুষকে ভদ্রলোক করে, কিন্তু আমার দেশে একজন মানুষের আচরণ তাঁকে ভদ্রলোক করে।”
প্রসঙ্গত, এই সংলাপটি বিদেশীকে চুপ করে দেয় এবং তাকে তার ভুল বুঝতে সাহায্য করে। এটি শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং সমাজে শ্রেণীবিভাজন এবং বাইরের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের গভীর দৃষ্টি এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক। তাঁর এই উত্তর আমাদের শিখায় যে, একটি মানুষের আসল মর্যাদা তার আচরণ ও চরিত্রে নিহিত, তার বাহ্যিক পোশাক বা অবস্থানেই নয়। স্বামী বিবেকানন্দের এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে, যা হল, সত্যিকার শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। তাঁর শিক্ষা আজও আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক, এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, আমরা তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারি। এভাবে, ১২ জানুয়ারি, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন, আমাদের সমাজে যুবকদের জন্য একটি নতুন উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাসের সূচনা ঘটায়। তার জীবন ও বাণী আজও আমাদের কাছে একটি অমূল্য দৃষ্টান্ত হিসেবে জীবিত রয়েছে।