#Pravati Sangbad Digital Desk:
মজিদ, জামশেদ, খাবাজি, এলেন। মজিদ নায়কও হলেন। ধূমকেতুর মতো উত্থান হল তাঁর। উল্কার মত পতন। খাবাজি সেভাবে নায়কোচিত উত্থানের রসদ মাঠে রাখতে পারলেন না। আটের দশকে বাংলা ফুটবলে একটা ভয়ংকর ট্রানজিশন চলছে৷ মহামেডানে প্রেসিডেন্ট হয়ে এলেন এরফান তাহের র্যান্ডেরিয়ান, ধনী চা ব্যবসায়ী। উনআশির শেষে দলবদলের বাজারে হইহই ফেলে মোটা টাকার বিনিময়ে ইস্টবেঙ্গলের পুরো দলের কাঠামোটাই কিনে নিলেন তিনি। সেই থেকেই রেষারেষিটা ক্লাবের নিজস্ব ফান্ড থেকে প্লেয়ার কেনার বদলে আরও আরও মোটা পুঁজির দিকে ক্রমশ চলে যেতে লাগল। যার পরই নয়ের দশকে আসবে কর্পোরেট বিনিয়োগ। মাঝে বিরাশির এশিয়াডে হাজার বিতর্ক। মজিদ তিরাশিতে আউট অফ সাইট। ময়দানে নায়ক হিসেবে এসে গেছেন কৃশাণু-বিকাশ। কিন্তু এই পুরো সময়টা জুড়ে নিঃশব্দে ভালো ফুটবল খেলে যাচ্ছিলেন এক ইরানি ফুটবলার। মজিদের আড়ালে যাঁকে আশির শুরুতে প্রায় ছায়ায় পড়ে যেতে হয়েছিল। আর তাঁর ইমপ্যাক্ট যে খেলায় কতখানি তা বোঝা গেল যখন পঁচাশি সালে কৃশানু-বিকাশকে তুলে নেওয়ার পর ক্লাবের কোষাগারে টাকা না থাকায় বন্ধুমহল থেকে টাকা ধার নিয়ে তাঁকে দলে আনতে বাধ্য হল পল্টু-জীবন। গোলের আশায়।
তিনি এলেন। প্রথম ডার্বিতে ফেডকাপ ফাইনালে গোল করে জেতালেন। কিন্তু ভুলে গেল অনেকেই, লালহলুদে তখন নায়ক যে কৃশানু-বিকাশ৷ লিগের ডার্বিতে এত তারকার মাঝে গোল স্কোরারের নাম? সেই জামশেদ নাসিরি। পরপর ডার্বি গোল। সেটাও ফিকে হয়ে গেল কৃষ্ণগোপাল চৌধুরীর শেষ মুহূর্তে নায়ক হয়ে ওঠার স্ক্রিপ্টে। আটের দশক নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখেছি গোড়ায় মজিদ, মাঝে কৃশানু আর শেষে চিমা - এই আলোর বৃত্তের ভেতর নিঃশব্দ সেপাই-এর নাম বোধ হয় জামশেদ নাসিরি-ই। নায়ক হওয়ার জন্য চিত্রনাট্য সবসময় অভিনেতাকে সমর্থন দেয় না। জামশেদ ভালোবাসা পেলেও, আটের দশকে আজও নায়ক মজিদ,কৃশানুই, জামশেদ নন।
কিবু ভিকুনা গোয়ায় প্রি-সিজনের পর কিয়ান নাসিরির ভূয়সী প্রশংসা করলেন। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে মাঠেও নামালেন। আমার মনে পড়ে সে সময়ে পল্লব বসু মল্লিক কমেন্ট্রিতে একবার বলেছিলেন জামশেদ নাসিরি মোহনকর্তাদের বলেছিলেন তাঁর পুত্র বলে কিয়ানকে যেন কোনও বাড়তি সুবিধা না দেওয়া হয়। সত্যতা জানি না। যাচাই করিনি। কিন্তু যা যাচাই-এর পরোয়া করে না তা হল জামশেদের জন্য যে চিত্রনাট্য নায়ক হওয়ার পরিসর রাখেনি, কিয়ান নাসিরির জন্য সেই সময়ের ডোঙাই নিয়ে এসেছে আতশবাজির মত ঝলসে ওঠার সমস্ত বারুদ। একটা ম্যারম্যারে ডার্বির শেষ পাতে হেরে যাওয়া দলের সমর্থক হয়েও যেখানে স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ময়ের দৃষ্টি স্তব্ধ করে রাখে অনেক্ষণ। বাংলা ফুটবলের তো সবই গেছে, বড়ম্যাচে পাড়ায় পতাকার ভিড় থেকে ভেঁপু, টিকিটের কাড়াকাড়ি। পড়ে আছে গুটি কয়েক সমর্থক, বোকার হদ্দ। কিয়ান, সেই পোড়োবাড়িতে আচমকা জ্বলে ওঠা ঝাড়বাতি। ইতিহাসের আলো এভাবে জ্বলে ওঠে বোধ হয়। মাঝে মধ্যে। এত বিনোদনের ফাটকাবাজির মধ্যে, ফুরিয়ে আসা আবেগগুলোকে কুড়িয়ে সময়-ই কিয়ানকে সাজিয়ে দিয়েছে নায়ক হওয়ার মার্গ, প্রতিভা থাকলেও যে দস্তান সবার ভাগ্যে লেখা থাকে না।