এক ঐতিহাসিক ঘোষণায় ১২৮ বছর পর অলিম্পিক্স মঞ্চে ফিরছে ক্রিকেট। প্যারিস ২০২৮ অলিম্পিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পুরুষ ও মহিলা— উভয় বিভাগেই ছ’টি করে দল অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটি (IOC)। একইসঙ্গে তিরন্দাজিতে যুক্ত হয়েছে কম্পাউন্ড বিভাগ, যা ভারতের জন্য বড় স্বস্তির খবর বলেই মনে করছেন ক্রীড়া বিশ্লেষকরা।
উলেখ্য, শেষবার অলিম্পিক্সে ক্রিকেট দেখা গিয়েছিল ১৯০০ সালে প্যারিসেই, যেখানে একমাত্র ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স। দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটকে অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC), অবশেষে সেই প্রয়াস সফল হলো। ২০২৮-এর অলিম্পিক্সে ক্রিকেটে অংশ নেবে ছয়টি দেশ, এবং খেলাগুলি হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। পুরুষ ও মহিলাদের বিভাগে দলসংখ্যা একই রাখা হয়েছে। প্রতিটি দলে সর্বাধিক ১৫ জন করে খেলোয়াড় থাকতে পারবেন। আয়োজক দেশ হিসেবে আমেরিকা সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারে, যদিও বাকি দেশগুলিকে বাছাই পর্বে অংশ নিতে হবে। বিশ্বের ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশের সঙ্গে রয়েছে ৯০টিরও বেশি সহযোগী সদস্য, যাদের মূল ফোকাস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ফলে যোগ্যতা অর্জনের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল।
অলিম্পিকে ফুটবল ইভেন্টেও বড় রদবদল হয়েছে। পুরুষদের বিভাগে এত দিন ১৬টি দেশ অংশ নিলেও, তা কমিয়ে করা হয়েছে ১২টি। তবে মহিলাদের বিভাগে দেশসংখ্যা বাড়িয়ে ১৬ করা হয়েছে। IOC-এর স্পোর্টস ডিরেক্টর কিন ম্যাকোনেল জানান, “আমেরিকায় মহিলাদের ফুটবলের জনপ্রিয়তা এবং সাম্প্রতিক উন্নতি চোখে পড়ার মতো। তাই এই সিদ্ধান্ত।”উল্লেখ্য, আমেরিকা অলিম্পিকে মহিলাদের ফুটবলে পাঁচটি সোনা জিতেছে, এবং সেখানে মহিলাদের ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হল কম্পাউন্ড তিরন্দাজি, যা ভারতের জন্য বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। এত দিন অলিম্পিকে শুধু রিকার্ভ তিরন্দাজি ছিল, যেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারত কখনওই এই বিভাগে বড় সাফল্য পায়নি। তবে কম্পাউন্ড বিভাগে ভারতের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। গত কয়েক বছরে বিশ্বকাপ এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নিয়মিত পদক জিতছেন ভারতের তিরন্দাজেরা। এই বিভাগ অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভারতের পদক সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেল।
প্রসঙ্গত, প্যারিস ২০২৮ অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি হবে— মহিলাদের সংখ্যা ধরা হয়েছে ৫৬৫৫, যেখানে পুরুষদের সংখ্যা থাকবে ৫৫৪৩। জেন্ডার ব্যালান্স নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনেক মিক্সড ইভেন্ট যোগ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে টেবিল টেনিস, গলফ, জিমন্যাস্টিক্স, রোয়িং কোস্টাল বিচ স্প্রিন্ট ও অ্যাথলেটিক্স। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ২০২৮ অলিম্পিক্স এক বিশেষ অধ্যায় হয়ে উঠতে চলেছে। একইসঙ্গে ফুটবল ও তিরন্দাজিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা ভবিষ্যতের অলিম্পিক ক্রীড়াভবনকে নতুন রূপ দিতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের ক্রীড়াঙ্গনের দিক থেকেও এই পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— বিশেষ করে কম্পাউন্ড তিরন্দাজিতে পদকের সম্ভাবনায় নতুন আশার আলো দেখছেন দেশবাসী।