#Pravati Sangbad Digital Desk:
রূপোলি পর্দায় বহুবার আমরা ভিটে মাটি হারানোর গল্প দেখেছি। স্বজন হারিয়ে, ঘর-বাড়ি হারিয়ে শিকড় উপড়ে পড়ে দেশ ছাড়ার ঘটনা প্রতি নিয়ত আছড়ে পড়েছে প্রতিটি ফ্রেমেতে। তবুও এই "দ্য কাশ্মীর ফাইলস" শুধু একটি আর পাঁচটা বাস্তবধর্মী বস্তুহারা উদ্বাস্তুদের গল্প নয়। গল্পটির বাস্তবতা দেখলে সিনেমাহলের প্রত্যেকের ঠান্ডা ঘরে বসেও কপাল ঘেমে উঠবে, সাথে গায়ে কাঁটা দিয়েও উঠবে। তীব্র গরমের মধ্যেও ঠান্ডা স্রোত বইতে বাধ্য সকলের শিরদাঁড়ায়। পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী সিনেমাটিক ব্রিলিয়ান্সের পাশাপাশি আর এমন কী দেখালেন এই সিনেমাতে? যা নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে এই সিনেমা বিশেষভাবে চর্চিত হয়েছে। এছাড়াও দেখা গেছে অভিনেত্রী-ফিল্মের গবেষক পল্লবী যোশী, যে সবথেকে বেশি চর্চিত হয়েছে এই সিনেমাটিতে। এছাড়াও আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিও সাংসদীয় বৈঠক সভায় বললেন সকলের এই সিনেমাটি দেখা উচিত। এই সিনেমার আসল গল্পটির ঠিক কতটা পরিমাণ সফলতা পেয়েছে?
বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালনায় এই চলচ্চিত্র (দ্য কাশ্মীর ফাইলস) মুক্তি পেয়েছে ১১ই মার্চ। যেভাবে কাশ্মীরি হিন্দুদের উপত্যকা ছাড়া করা হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে, তৈরী হয়েছিল যে ভয়াবহ পরিস্থিতি, এই ছবি গল্প সেই প্রেক্ষাপট নিয়েই। এই সিনেমাটিতে আত্মরতা কাঁপিয়ে দিয়েছে বাস্তবতার নিষ্ঠুরতার অভিঘাতকে। সবই এমনই ঠিকঠাক ছিল সেদিন, এই তথ্যটি কিছুতেই স্বস্তি দিতে পারেনি দর্শকবৃন্দদের। দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এর প্রতিটি দৃশ্যেই বিট্টা কারটা ওরফে ফারুক আহমেদের আতঙ্ক থেকে কাশ্মিরি পন্ডিতদের লড়াইয়ে কী কী হয়েছিল তা সবটাই প্রতিফলিত হয়েছে এই সিনেমার গল্পে দ্য কাশ্মীর ফাইলস্-এর মূল কাহিনীই হল জঙ্গিদের হাতে কাশ্মীর পন্ডিত সতীশ টিকুর হত্যাকান্ডের সহিত আরও নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে। সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে হিন্দু পন্ডিতদের রক্তপিপাসু জঙ্গিরা কীভাবে খুঁজে বের করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। শেষ করে দেওয়া হয়েছে তাদের গোটা পরিবারকে। মেয়ে-বউদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি, বরং ধর্ষণের পর ধর্ষণ করে টুকরো করা হয়েছে তাদের এক-একটি দেহ। রেহাই পায়নি কোনও শিশুরাও। পুষ্কারনাথ পন্ডিত (অনুপম খের) প্রোটাগানিস্ট এই ছবির।
সিনেমায় প্রথম বিভাগে দেখানো হয়েছে পরিবার সহ তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচারের উপাখ্যান, তুলে ধরা হয়েছে কাশ্মীরের পন্ডিতদের হৃদয়ের দগদগে ঘা। দ্বিতীয় বিভাগে দেখানো হয়েছে, যে ঘটনা অতীতে ঘটে গেছে তা আজও বেশ প্রাসঙ্গিক। সেই অতীতে আজও কোনো আঘাত লাগলে সেই ঘা থেকে চুইয়ে পড়ে বঞ্চনার শ্রোণিত স্রোত ও ধিক্কার এবং একরাশ ঘেন্না। কাশ্মীরের পন্ডিতরা ভিটে হারানোর পর আজও কেন তারা ভুলতে পারিনি সেই অজস্র যন্ত্রণার কথা?
"এটা একটি গণহত্যা, এটা কোন দেশ ত্যাগ নয়", "ভাঙ্গা মন বলেনা কথা, কিন্তু তবুও শুনতে হয় তাদের বক্তব্য"। ধর্মান্তরিত হও, নয়তো দেশ ছাড়ো নইলে মরো"। এরকম একাধিক অসাধারণ ডায়লগ ধাক্কা দিয়েছে মানুষের মনে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হত্যাকারীদের মূল মাথাদের এই নৃশংস হত্যা নিয়ে আত্মগ্লানিহীন স্বীকারোক্তিতে যে রক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কথা সমস্ত দর্শকদের। দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এ বিট্টার একটি সাক্ষাৎকার দেখানো হয়, যেখানে তিনি জানান তাকে প্রতিনিয়ত এক একটি জীবন্ত প্রাণ হত্যার নির্দেশ দেওয়া হত। তখন তাকে তার মাকে হত্যার নির্দেশ দিতে বললেও তাকে করে দিতে হত অনায়াসে। হিন্দু পণ্ডিতদের জোর করে রক্তমাখা ভাত খাওয়ানোর মতো ভয়ংকর দৃশ্য দেখালে সকলের গলার কাছে দলা পাকায় কান্না, গা গুলিয়ে ওঠে, একেবারে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা হয় সকলের। এক কথায় এটি শুধু কোনো ফ্লিম নয়, বরং ১৯৯০ এর ডকুমেন্টারি দ্য কাশ্মীর ফাইলস বলা যেতে পারে।
বিট্টার ভূমিকা অসাধারণ অভিনয় করেছেন চিন্ময় মালডেনকার। এছাড়াও আলাদাভাবে চমৎকার অভিনয় করেছেন যারা তারা হলেন অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী ও দর্শন কুমার. নেটিজেনরা অনুপম খেরের সঙ্গে হিথ লেজার অভিনীত 'জোকার' চরিত্রটির সঙ্গেও তুলনা করেছেন।