১৯ মে 'বাংলা ভাষা শহিদ দিবস' পালন হয় ভারতের বিভিন্নপ্রান্তে

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে সারাবিশ্ব জুড়ে...

অসমের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা-আন্দোলন ছিল বিখ্যাত এই দুই ঘটনার ঠিক মাঝখানের ঘটনা। ১৯৬০ সালে অসম সরকার অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র অফিশিয়াল ভাষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন সেখানকার বাংলাভাষী। আসলে ওই অঞ্চলের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিল বাংলাভাষী। ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি 'কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ' নামের এক সংগঠনের জন্ম হয়। অসম সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দির মানুষ 'সংকল্প দিবস' পালন করেন। তবে চূড়ান্ত ঘটনাটি ঘটে  ১৯৬১ সালের ১৯ মে।  সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে গুলি করে হত্যা করেছিল অসম প্রাদেশিক পুলিস। এই ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর বরাক উপত্যকা-সহ ভারতের বিভিন্নপ্রান্তে ১৯ মে-কে 'বাংলা ভাষা শহিদ দিবস' হিসেবে পালন করা হয়।


বিশ্বের কোনো জাতি নিজের ভাষার জন্য বাঙালিদের মতো এত ত্যাগ স্বীকার করেনি। নিজের ভাষার জন্য, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য যে প্রাণ দেওয়া যায়, নিজের সবটুকু উৎসর্গ করা যায়, সবকিছু নির্দ্বিধায় ছুঁড়ে ফেলা যায়— বাঙালিরা তা করে দেখিয়েছে।

আসামের বরাক উপত্যকায় রাজ্যের কেন্দ্রীয় ভাষা বাংলা করার দাবিতে ১৯৬১ সালে ১৯ মে প্রাণ দিয়েছিলেন কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডীচরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ ও কমলা ভট্টাচার্য নামের ১১ জন মাতৃভাষাপ্রেমী বাঙালি।

আসামে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল বাঙালিদের। কিন্তু, অসমীয়াকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার প্রস্তাব ওঠে ১৯৬০ সালের এপ্রিলে, আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে। ফলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বাঙালিরা এ প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানালে অসমীয়া ভাষাভাষীরা বাঙালি অভিবাসীদের ওপর আক্রমণ চালায়।


তখন ভয়ে ও নিরাপত্তার অভাবে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি হিন্দু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। প্রায় ৯০ হাজারের মতো বাঙালি বরাক উপত্যকা ও উত্তর-পূর্বের অন্যান্য স্থানে পালায়।

অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠনের জন্ম হয়। সরকারের এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল শিলচর, করিমগঞ্জ আর হাইলাকান্দির বাঙালিরা ‘সংকল্প দিবস’ পালন করে।

২৪ এপ্রিল কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ দীর্ঘ একটি পদযাত্রা শুরু করে। ২ মে শেষ হওয়া এই পদযাত্রাটিতে অংশগ্রহণকারীরা প্রায় দুই শ মাইল উপত্যকাটির গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালায়। পদযাত্রা শেষে পরিষদের আহ্বায়ক রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা দেন, যদি ১৩ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা না হয়, তাহলে ১৯ মে তারা টানা হরতালের ডাক দেবেন।


১২ মে আসামে যেন যুদ্ধাবস্থার সূচনা হলো। বাঙালিদের হটাতে আসামের রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। পুলিশ, আসাম রাইফেল আর মাদ্রাজ রেজিমেন্ট সেদিন সকাল থেকে শিলচরে ফ্ল্যাগ মার্চ করে। এর মধ্যে বারবার মিটিং বসছে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদের। কিন্তু, ১৮ মে আসাম পুলিশ আন্দোলনের তিন নেতা রথীন্দ্রনাথ সেন, বিধুভূষণ চৌধুরী ও নলিনীকান্ত দাসকে গ্রেপ্তার করলো।

১৯ মে সকাল থেকেই শিলচর, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে হরতাল শুরু হয়। সঙ্গে চলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পিকেটিং।

করিমগঞ্জের বাঙালিরা সরকারি কার্যালয়, রেলওয়ে স্টেশন, আদালতে পিকেটিং করে। শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে ‘সত্যাগ্রহ’ পালিত হয়।


দুপুর আড়াইটায় আন্দোলনকারী বাঙালিদের ওপর হঠাৎ আক্রমণ চালায় প্যারামিলিটারি বাহিনী। প্রথমে আন্দোলনকারীদের লাঠিচার্জ ও বেয়নেট চার্জ করে তারা। জবাবে আরও ফুঁসে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। স্টেশনের বাইরে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারাও ঢুকে যান আন্দোলনে। সাত মিনিটের মধ্যেই ব্রাশফায়ার শুরু করে প্যারামিলিটারি ও পুলিশ। মুহূর্তেই নয় জন আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। তিন জন আহত হন। পরে সেই তিন জনের দুই জন শহীদ হয়েছিলেন।

বরাক উপত্যকার মাটি দেখল ভাষার জন্য নজিরবিহীন ত্যাগ। উপত্যকার মাটি রক্তে লাল হলো। সেদিনই এর জবাবে পুরো আসাম গর্জে উঠে। ২০ মে সকালে রাস্তায় নেমে আসে আসামের বাঙালি জনতা।

শহীদদের মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল বের করে মানুষ। রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে তারা।

শিলচরের ঘটনার পর আসাম রাজ্য সরকার বাধ্য হয়েছিল বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Tamoghna Mukherjee

Related News