টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার ক্যাশ ফর কোয়ারি মামলায় তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মহুয়ার বহিষ্কারের পরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, ‘মোদী সরকার যদি মনে করে, আমার মুখ বন্ধ করে আদানি ইস্যুতে পার পেয়ে যাবে, তাহলে আমি বলব এই ক্যাঙারু কোর্ট শুধু সারা ভারতকে দেখিয়েছে কতটা তাড়াহুড়ো করা হয়েছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অপব্যবহার বুঝিয়ে দিয়েছে আদানি আপনাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’ বহিষ্কারের সুপারিশ করে শুক্রবার লোকসভায় রিপোর্ট পেশ করে এথিক্স কমিটি। রিপোর্ট পড়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চায় তৃণমূল। কিন্তু এই রিপোর্ট নিয়ে মাত্র আধ ঘণ্টার জন্য আলোচনায় রাজি হন স্পিকার ওম বিড়লা। মহুয়াকে বলতে সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে কৃষ্ণনগরের সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশেই সিলমোহর দেন স্পিকার। লোকসভায় ধ্বনি ভোটে পাশ হয় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত। এই রিপোর্টের প্রতিবাদে শুক্রবার তপ্ত হয়েছে লোকসভার অধিবেশন। আর মাত্র কয়েক মাস পরই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে মহুয়ার বিরুদ্ধে এ হেন 'শাস্তি' ঘিরে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনীতির অঙিনায়। বছর শেষে মহুয়া-কাণ্ড নিয়ে সরগরম হতে চলেছে রাজনীতির ময়দান।
সংসদে এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বক্তব্য রাখতে যান মহুয়া। তীব্র বাকবিতণ্ডার মধ্যে তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি। এথিক্স কমিটির রেকমেন্ডেশন নিয়ে মহুয়া বলতে গেলে, তাঁকে তা বলতে দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঘুষ নিয়ে সংসদে আদানি ইস্যুতে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই অভিযোগে বিজেপির নিশিকান্ত দুবে সরব হন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে এথিক্স কমিটি পদক্ষেপ করে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। তারপরই আসে এই বড় সিদ্ধান্ত। Bride/Madhurima_Sen
এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময় অধিকাংশ বিরোধী দল লোকসভায় ছিল না৷ তারা ওয়াকআউট করে চলে যায়৷ তবে সব বিরোধী দল একসঙ্গে ভোট দিলেও মহুয়াকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল হত না৷ কারণ, লোকসভায় বিজেপি ও তার শরিকদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে৷
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি লোকসভা সাংসদ হিসাবে পাওয়া আইডি ও পাসওয়ার্ড দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি-সহ অন্যদের দিয়েছেন৷ তারা মহুয়ার নামে প্রশ্ন জমা দিয়েছেন৷ যেটা নিয়মানুযায়ী তারা করতে পারেন না৷ তাছাড়া দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে তিনি অর্থ-সহ নানা সুযোগসুবিধা নিয়েছেন৷ অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন মহুয়া৷ এথিক্স কমিটির রিপোর্টে তাই মহুয়াকে বহিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে৷
এথিক্স কমিটির রিপোর্ট শুক্রবার লোকসভায় পেশ করা হয়৷ তারপর এই রিপোর্ট নিয়ে আধঘণ্টা আলোচনার পর মহুয়াকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পাস হয়৷
লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর মহুয়া বলেছেন, ‘‘কোনো অর্থের লেনদেন হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই৷ আমি লোকসভার নিয়মাবলী ভালো করে পড়েছি৷ সেখানে আইডি, পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যাবে না, এমন কোনো কথা বলা হয়নি৷ মোদী সরকার যদি মনে করে, এভাবে মুখ বন্ধ করতে পারলে তারা আদানির বিষয়টি থেকে বাঁচবে, তাহলে তারা ভুল করছে৷''
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘তৃণমূলের পক্ষ থেকে মহুয়া লোকসভায় বলবেন৷ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে বলতে দেয়া উচিত৷'' তখন স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘‘২০০৫ সালে ১০ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ক্যাশ ফর কোয়ারির অভিযোগ ওঠে৷ এথিক্স কমিটি রিপোর্ট দেয়৷ তখন লোকসভায় ওই সাংসদদের বলতে দেয়ার দাবি উঠেছিল৷ কিন্তু তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, সাংসদরা কমিটির কাছে তাদের কথা বলেছেন৷ লোকসভায় আর তারা বলতে পারবেন না৷''
ওম বিড়লা জানান, তিনি প্রাক্তন স্পিকারের রুলিং অনুসরণ করছেন৷ এটাই সংসদের রীতি৷
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘মহুয়ার জবাব দেয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে৷ বলা হয়েছে, টাকার লেনদেন হয়েছে৷ প্রমাণ কোথায়? কত টাকার লেনদেন হয়েছে?''