অ্যা পারফেক্ট কভারড্রাইভ

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

একে একে সব্বাই গেছে। সৌরভ, শচীন, দ্রাবিড়, কুম্বলে, ভিভিএস, জাহির খান, নেহরা, হরভজন, গম্ভীর, রায়না, যুবরাজ, ধোনি... সাথে করে নিয়ে গেছে আমাদের ছোটবেলার স্বর্ণালী দিনগুলো। সবকিছু ছেড়েছুড়ে ঘরে ঘরে চৌকো বক্সের সামনে উত্তেজনায় ডগমগ, অস্থির নয়নে বসে থাকা ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে ফেলেছে ক্রিকেটীয় মাদকতা। স্কুল কলেজের গন্ডি পার করে অফিসে গ্যাছে, বিয়ে করেছে, সংসার সামলেছে, বাবার অসুখ সামলেছে, মায়ের ওষুধ এনেছে ফিরতি পথে, ধীর হয়েছে, স্থির হয়েছে। একে একে ছোটবেলার প্রায় সবকিছুই চলে গেছে জীবন থেকে। শুধু রয়ে গ্যাছেন এই মানুষটা; বিরাট কোহলি। সময়ের সাথে তিনিও ধীর হয়েছেন, স্থির হয়েছেন, দায়িত্ব তাকেও নিস্তরঙ্গ হতে শিখিয়েছে সময় বিশেষে। মোহালির মাঠে কেরিয়ারের শততম টেস্ট ম্যাচে খেলতে নেমেছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে ৭১ তম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলার নজির গড়লেন কোহলি।
২০১৬ সালে ভাইজাগের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেরিয়ারের পঞ্চাশ তম টেস্ট ম্যাচ’টি খেলেছিলেন কোহলি। সেই ম্যাচে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল জয়ন্ত যাদবের, এদিন কোহলির কেরিয়ারের শততম টেস্ট ম্যাচেও প্রথম একাদশে সুযোগ হয়েছে তার, এটা তার কেরিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট ম্যাচ।
এই মানুষটার কেরিয়ার ঘাঁটতে গেলে চোখে পড়বে ফিটনেস , আগ্রাসন , জেদ আর  প্রবল ইচ্ছাশক্তি । আর ঠিক এই চারটি জিনিসকে নিয়ে বিরাট হয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ব্যাটসম্যান । বির্তক এসেছে ঠিকই , কিন্তু সেগুলিকে চিরাচরিত ভাবে শক্ত হাতে  কভার ড্রাইভ মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন  বাউন্ডারির ওপারে ,  ১০০ তম টেস্ট খেলতে গিয়ে বিরাটের থলিতে রয়েছে যেমন বিশেষ কিছু সাফল্য , তেমনই কিছু অপ্রাপ্তির ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সমালোচকরা বারবার কাটাছেঁড়া করেছেন তাকে । একঝলকে দেখে নেওয়া যাক সেই প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ঝুলি- 

● অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জয় : 
কোহলির নেতৃত্বে ভারত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতে ২০১৯ সালে। যুগের পর যুগ চেষ্টা করে পাওয়া এমন সাফল্যকে অনেকেই ভারতের সেরা সাফল্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। মেলবোর্নে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাঁর ৮২ রানের ইনিংসটি ছিল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের দারুণ অনুষঙ্গ। এরপর কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোহলির অধিনায়কত্বই আসলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছে।’ 
এর পরপরই ভারত আইসিসির টেস্ট র‍্যাঙ্কিকের শীর্ষ উঠে যায়। পরের তিন বছরও ভারতই ছিল টেস্টে র‍্যাঙ্কিকের এক নম্বর দল। ঘরে-বাইরে প্রায় সব প্রতিপক্ষকেই উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এ সময় ভারতীয় ফাস্ট বোলাররা হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম সেরা।
●অডিলেড ও ইংল্যান্ড টেস্ট
২০১৪ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির চোটের কারণে হঠাৎই অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পান বিরাট কোহলি। দায়িত্ব পেয়েই তিনি দলের মধ্যে ছড়িয়ে দেন জয়ের পেছনে ছোটার বার্তা। অ্যাডিলেডের সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি ১১৫ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলেন। দলের সামনে টেস্টটি জেতার জন্য ৩৬৪ রানের লক্ষ্য ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ১৪১ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে দলকে প্রায় জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভারত টেস্টটি হারে ৪৮ রানে ।
ঠিক তেমনি তার কেরিয়ারে যেখানে সবথেকে বেশি আলোচনার মহল সেই ইংল্যান্ড কে ২-১ টেস্ট সিরিজে হারানোর পরও তিনি বুঝিয়ে দেন  ভারতের লক্ষ্য শুধু জয় , এখানে হার নামক বস্তুর কোনো জায়গা নেই ।
●অধি'নায়ক
গত অক্টোবরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। ইচ্ছা ছিল ওয়ানডে আর টেস্টে অধিনায়কত্বটা চালিয়ে যাওয়ার। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে শেষ টুর্নামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা জিতবেন—এমন লক্ষ্যই ছিল তাঁর। কিন্তু বিশ্বকাপে ভারত সেমিফাইনালে উঠতেই ব্যর্থ হয়। হেরে যায় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের কাছে। বিশ্বকাপের পর হারান ওয়ানডে অধিনায়কত্ব। সেটি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই। এ নিয়ে বিতর্ক হয় প্রচুর। বারবার ব্যাটসম্যান হিসবে নিজেকে তুলে ধরলেও তার ঝুলিতে ছিল না কোনো আইসিসি ট্রফি এই অজুহাতে বার বার নিশানাবিদ্ধ হন তিনি ।  কিছুদিন পর স্বেচ্ছায় টেস্ট অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন ।

তবে ভারতের টেস্ট দলকে আজকের অবস্থায় নিয়ে আসতে পারার পেছনে বিরাটকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা, 'টেস্ট দল হিসেবে আপনারা জানেন আমরা গত পাঁচ বছর ধরেই ভালো অবস্থায় আছি। এর পেছনে কৃতিত্বটা বিরাটের, কারণ ওসেই আমাদের এভাবে খেলার জন্য সাহায্য করেছে। দল যেন সামনে এগোতে পারে সে জন্য ও অনেক কিছুতে পরিবর্তন এনেছে। সেটা দেখাও দুর্দান্ত ছিল। ওর সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা অসাধারণ।'
শেষে বিরাট কোহলির প্রফেশনালিজম, ক্রিকেটীয় সেন্স, পরিশ্রম, মানুষ হিসেবে কাজকর্ম দেখার পরে শুধুমাত্র মাঠের মধ্যে তার প্যাশন বা অ্যাগ্রেশন দেখে তাঁকে ‘গালি দেয়া’ বা ‘শুধু ব্যাটসম্যান’ হিসেবে ভালো বলা একেবারেই উটপাখির বালিতে মুখ ডুবানোর পরিচায়ক!
বাবার মৃত্যুর পরেরদিন শুধুমাত্র প্যাশন আর প্রফেশনালিজম থেকে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। ফলো অন বাঁচানো ৯০রান করেছিলেন ২৩৮ বলে। নিজেই বলেছেন যে যেদিন সকালে উঠে মনে হবে শরীর আর চলছে না, অথবা ক্রিকেটের প্রতি প্যাশনটা কমে গেছে, অথবা জয়ের ক্ষুধা আসছে না। সেদিনই তিনি ক্রিকেট ছেড়ে দিবেন!
এটাই বিরাট কোহলি। তাঁর রেকর্ডের খতিয়ানে গেলাম না। যেদিন অবসর নিবেন সেদিন এ নিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করা যাবে! তিনি ব্রায়ান লারার মতো ব্যাটিংয়ের বরপুত্র নয়। তিনি শচিন টেন্ডুলকারের মতো প্রতিভা আর বিশুদ্ধতার মিশেলও নন। এমনকি নিজ দলের রোহিত শর্মার মতো টাইমিং করার প্রতিভা নিয়েও আসেনি!
তবুও তিনি অনুকরণীয়। প্রত্যেকটা মুহূর্তে নিজেকে কিভাবে উন্নতি করতে হয়, পরিশ্রম করে কিভাবে নিজেকে খুব ভালো থেকে গ্রেট থেকে গ্রেটেস্টদের কাতারে নিয়ে যেতে হয়, তাঁর আদর্শ উদাহরণ বিরাট কোহলি! আপাতত ‘মানুষ’ কোহলির বন্দনা করি। আর নিজেদের সৌভাগ্যবান ভাবি যে এই কোহলিকে আমরা ‘লাইভ’ দেখতে পারছি!

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Avijit Das

Tags:

Related News