মা হারানো বাপ্পার চোখে খেলার স্বপ্নের হাতছানি

banner

#PRAVATI SANGBAD DIGITAL DESK:

স্বপ্ন প্রত্যেক মানুষের চোখে থাকে। আর সেই স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে মানুষ কঠোর পরিশম করে যায়। মা - বাবা হারানো বাপ্পার চোখেও রয়েছে রঙিন স্বপ্ন। বাপ্পার কষ্টকর জীবন যেকোনো সিনেমার গল্পকেও অনায়াসে হার মানাতে পারে। প্রতিদিন সকালে উঠে শুরু হয় তার কঠোর পরিশ্রম। 

সকালে মানুষকে চায়ের কাপ দেওয়া থেকে শুরু করে চলতে থাকে কয়লা ভাঙ্গা, উনুনে আঁচ দিয়ে চা তৈরি, তেলে ভাজা বিক্রি করা। এরমধ্যেই দুপুরের খাবার খেয়েই ছোটে প্র্যাকটিসের উদ্দেশ্যে। এটাই তার প্রতিদিনের জীবনকাহিনী। কাঁচ দেওয়া জানলার ভিতর থেকে জীবনটা না দেখে রাস্তায় নেমে রোদে খেটে স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে সে। হাওড়া আন্দুলের বাসিন্দা বাপ্পাকে সকলেই বাপ্পা দাস নামেই চেনেন মানুষ। 

বড়দাদা জয়ন্ত দাস ও ছোট দাদা বসন্ত দাসের ছোট ভাই বাপ্পা দাস। বসন্ত দাস জানান , " ছোটবেলা থেকে লেখাপড়া করানোর ভীষণ চেষ্টা করেও হার মেনেছি আমরা, তবে খেলাধুলার প্রতি অগাধ মনোযোগ দেখেছি। তাই একটা সময় থেকে আমরাও লেখাপড়াটা আর বেশি জোর করিনি, ওর খেলাধুলার প্রতি ওকে সাপোর্ট করে গেছি "। 

 তিনি আরো জানান , বাপ্পার চার বা পাঁচ বছর বয়সে মারা যান মা। বড়দাদার তাকে হাত ধরে বলে গিয়েছিলেন ছেলেকে দেখতে। মা ও বাবা তার দোকানে খরিদ্দার হিসেবে আসা-যাওয়া করত। ভিন রাজ্য থেকে এখানে কাজে এসেছিলেন তারা। বসন্ত দাস বলেন , " সেই সময় হঠাৎ যে কি হলো, এক এক করে গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেল। তখন সেভাবে বুঝতে পারেনি বাপ্পার মা যে তার দুধের শিশুর দায়িত্ব আমার হাতে কি ভরসায় সঁপে দিয়েছিল। সেই দায়িত্বটা যে কত বড় বুঝতে পারিনি, এখন অনুভব করছি। সেই থেকে আমার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েই রয়ে গেছে ছেলেটা সন্তানের মতই। কোন কিছুতেই বাদ পড়েনি সে, উৎসব অনুষ্ঠান থেকে কাজকর্ম। পরিবারের আর পাঁচটা সদস্যর মতোই থেকে খেয়ে বড় হওয়া। পাড়া প্রতিবেশী মানুষ যেমন সহানুভূতি ভালোবাসা দিয়ে এগিয়ে এসেছেন আবার কিছু মানুষ বা প্রশাসনের দ্বারাও হেনস্থা হতে হয়েছে আমাদের। কখনো কেউ শিশু শ্রমিক হিসেবে দেখেছে ওকে , তবে তা সাময়িক ছিল আসলে কখনোই আমরা বাপ্পাকে পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য চোখে দেখিনি "। 

সেইসময় থেকে পাশে ছিলেন তিনি। বাপ্পার খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ দেওয়াই ছিলো তাঁর কাজ। তবে খেলার সরঞ্জামের খরচ অনেক। ছোটবেলা থেকেই পাওয়ার লিফটিং এর উপর ভীষণ মনোযোগ বাপ্পার। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে প্রতিদিন সন্ধায় প্র্যাকটিসে যায় সে। মারা হারালেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েনি বাপ্পা। রীতিমতো কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে গেছে একটু একটু করে তার স্বপ্নের রাস্তায়।

 হার না মানা বাপ্পার, তার স্বপ্ন পূরণে সর্বদা পাশে থাকছে তার পালিত পরিবার, তারাই তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। তবে খেলার খরচ আকাশছোঁয়া হওয়ায় সরকারি আশায় রয়েছে সে। এক স্থানীয় বাসিন্দা ঝন্টু আদক তিনি বলেন ,"  বাপ্পার শরীরের ক্লান্তি বলে কোন জিনিস চোখে পড়েনা, কখনো দেখছি বাপ্পা চা বিক্রি করছেন আবার হঠাৎ করে প্র্যাকটিসে যাচ্ছে, আবার সেখান থেকে এসে দোকান সামাল দিচ্ছে। আসলে যে দোকানে বাপ্পা থাকে তাদেরও কিছু করার নেই। দোকান চালিয়ে যতটুকু সাহায্য করার চেষ্টা করে তারপরেও ছেলেটার স্বপ্ন পূরণে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ, সেটা না পেলে হয়তো এমন প্রতিভা হারিয়ে যাবে "।  

সেখানকার প্রত্যেক মানুষ চায় তার এই লড়াই যাতে চলতে থাকে। হার মেনে সে যেনো পিছিয়ে না পড়ে। বাপ্পার দুই দাদা জয়ন্ত দাস ও বসন্ত দাস জানায়, " বাপ্পা আমাদের পরিবারে থেকে বড় হয়ে উঠুক ,প্রতিষ্ঠিত হোক তবে ও নিজের পরিচয়ে বেড়ে উঠুক "।

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Papri Chakraborty

Related News