Flash News
    No Flash News Today..!!
Monday, November 10, 2025

ক্রিকেট কি এখনো 'ক্যাপ্টেনস গেম'?

banner

journalist Name : Avijit Das

#Pravati Sangbad Digital Desk:

কেউ বললেন সরাসরি, কেউ বা একটু রয়েসয়ে। তবে পরোক্ষ উদ্ধৃতি তুলতে গেলে বক্তব্যটা একই থাকবে মোটা দাগে, 'মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাজে ক্যাপ্টেনসিতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা হেরে গেল বাংলাদেশ।'
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়স ১৪ পেরিয়ে গিয়েছে, শূলে চড়ার অভিজ্ঞতাটা তো তার আগেও হয়েছে। রিয়াদের তাই বিচলিত হওয়ার কথা নয় মোটেই। তবুও খানিকটা সান্ত্বনা খুঁজতে চাইলে রিয়াদ পড়ে নিতে পারেন ময়েজেস নাঈমের ওই উক্তিটা,
'কোনো কিছুর দায়িত্বে থাকাটা আগের মতো তাৎপর্যবহ নয় মোটেই। এই একবিংশ শতাব্দীতে দায়িত্ব পাওয়াটা বেশ সহজই। তবে সেটার সদব্যবহার করা আর ধরে রাখাটাই কঠিন।'
ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব নিয়ে চর্চাটা বহুকালের। ব্যাটে-বলে আহামরি না হয়েও মাইক ব্রিয়ারলি তাই ইংল্যান্ড দলে খেলে গিয়েছেন কোনো প্রশ্ন ছাড়াই; আবার সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ইমরান খান তো হয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের আইনপ্রণেতাই। রমিজ রাজা তাই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হয়ে জানিয়ে দিয়েছেন বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজমের কাছে নিজের চাওয়ার কথা, 'ইমরান খান হতে হবে'।
তবে বাবর আজমের সেই সুযোগ আছে কি না, সেটাই তো মূল প্রশ্ন। একটা সময় ছিল, যখন অধিনায়ককে মাঠের ভেতরে তো বটেই, দেখভাল করতে হতো মাঠের বাইরের দিকগুলোও। 'বডিলাইন বোলিং'-এর আলোচনায় যে ডগলাস জার্ডিনের নামটাই উঠে আসে সবার আগে, তার কারণ, আগের সিরিজের ভিডিও বিশ্লেষণ করে শর্ট বলে স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যানের অস্বস্তি আবিষ্কার করেছিলেন তিনিই। তার উত্তরসূরি মাইক ব্রিয়ারলিকেও যেমন প্রতিদিন খেলার আগে শ্যেনদৃষ্টি রাখতে হতো সতীর্থদের গা-গরম আর স্ট্রেচিংয়ে। দলের কৌশল নির্ধারণেও সর্বেসর্বা ভূমিকাটা ছিল তারই। 'ক্রিকেট ইজ আ ক্যাপ্টেনস গেম' কথাটার চল তো আর এমনি এমনি হয়নি!

ক্রিকেট তার এই 'ক্যাপ্টেনস গেম' স্লোগান থেকে বের হতে পারেনি এখনো; 'দ্য ক্যাপ্টেনস মিথ' বইতে লেখক রিচার্ড জিনিস যার কারণ হিসেবে সামনে এনেছেন আমাদের তারকা বানাতে চাওয়ার প্রবৃত্তিকে। সাইকোলজিক্যাল বায়াসের কারণেই নাকি অধিনায়ক হয়ে উঠেছেন দলের কেন্দ্রীয় চরিত্র। যে কারণে ম্যাচ হারের পর অধিনায়ককেই আঁতশ কাচের তলায় আসতে হয় এখনো। উদাহরণ হিসেবে বিরাট কোহলিই বোধ হয় ভেসে ওঠেন মনশ্চক্ষুতে। আট বছর দায়িত্বে থেকেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে শিরোপা জেতাতে পারেননি, ১৪০ ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়ে হেরেছেন অর্ধেক ম্যাচেই, 'ব্যর্থ অধিনায়ক' তকমা তাই সেঁটে গিয়েছে নামের পাশে।
কিন্তু এই ব্যর্থতা কেবল তার একারই কি না, প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে সম্প্রতি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিনায়ক তো আর একনায়কতন্ত্র চালাতে পারেন না এখন। ক্রীড়া ঐতিহাসিক স্তেফান জিমানস্কি বলছেন,
'ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, মানে আধুনিক খেলাধুলা যখন যাত্রা করল, তখন মাঠের ভেতরে অধিনায়ককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হতো। তবে খেলাধুলা এখন অনেক গোছানো, কোচিং স্ট্র‍্যাটেজি বেশ উন্নত হয়েছে। অধিনায়কের ভূমিকাও অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে তাই।'
২০১৮ আইপিএলকে সামনে টানুন। সেবার চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচে ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারের তিনটাই করেছিলেন কোরি অ্যান্ডারসন, সেখানে হজম করেছিলেন ৪৮ রান। ম্যাচে ৭৪ রানে চেন্নাইয়ের ৪ উইকেট তুলে নিলেও বেঙ্গালুরু আটকাতে পারেনি ২০৬ রান। ম্যাচ হেরেছিল ২ বল বাকি থাকতেই।
ওই ম্যাচের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল বিরাট কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে। পবন নেগির এক ওভার বাকি ছিল, ওয়াশিংটন সুন্দরকে দিয়ে করানো যেত আরও তিন ওভার… তবুও কেন অ্যান্ডারসনেই আস্থা খুঁজলেন তিনি? নেগি ৩ ওভার বল করে ৩৬ রান দিয়েছেন, সুন্দরও প্রথম ওভারে হজম করেছেন ১৪ - এমন তথ্যগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল সযত্নেই।

অথচ কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে নয়, সেদিন প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল বেঙ্গালুরুর দল গোছানোর কৌশল নিয়ে। সেবার নাথান কোল্টার-নাইলকে স্পেশালিস্ট ডেথ বোলার হিসেবে দলে ভিড়িয়েছিল আরসিবি। তবে চোটে পড়ে মৌসুম শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগেই ছিটকে যান তিনি। আরসিবি তার বদলে দলে ভেড়ায় কোরি অ্যান্ডারসনকে। ততদিনে ১০০'র বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেললেও ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে বল করেছিলেন মাত্র ২৬ বার! কোহলির অধিনায়কত্ব ভুল ছিল কি শুদ্ধ, উত্তরটা অনুমান-নির্ভর। কিন্তু কোল্টার-নাইলের বিকল্প নির্বাচনে যে ভুল করেছিল আরসিবি টিম ম্যানেজমেন্ট, সেটা নিয়ে প্রশ্ন নেই বিন্দুবিসর্গও। মোহাম্মদ আলীর কথাটাও যেন এখন ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবেই খেটে যায়,
লোকচক্ষুর অন্তরালের কার্যক্রম বেড়েছে বলেই অধিনায়ককে মাঠের ভেতরে আর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে না একা একা। শুধু অধিনায়কই নয়, একা একা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমেছে সব ক্ষেত্রেই। কোচ, সহকারী কোচ, বিশেষজ্ঞ কোচ, ডেটা অ্যানালিস্ট, ভিডিও অ্যানালিস্ট, পুষ্টিবিদ, ডাক্তার, ফিজিও….এমন গণ্ডাখানেক নাম তো জুড়ে যাচ্ছে প্রতিটা দলের সঙ্গেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার, এবার বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পেতে ক্রিকেট স্কটল্যান্ড সাহায্য নিয়েছে মোবাইল অ্যাপের।

Tags:

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Related News