ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে ১৯৭৮ সালে। সেই সময়ের দলটি ছিল একেবারেই নবীন। যদিও প্রথম দিকের বিশ্বকাপগুলোয় দল উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স করতে পারেনি, কিন্তু ২০০৫ ও ২০১৭ সালের বিশ্বকাপেই বদলে যায় দৃশ্যপট। ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারত ফাইনালে পৌঁছালেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়। তবে এই আসর ছিল ভারতের পক্ষে এক মাইলফলক। এরপর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হারমানপ্রীত কউরের অসাধারণ ইনিংস আজও স্মরণীয়। সেই বছরও ভারত ফাইনালে পৌঁছেছিল, কিন্তু আবারও শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। ভারতের নারী ক্রিকেটাররা একের পর এক নজরকাড়া পারফরম্যান্সে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন – মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী, স্মৃতি মান্ধানা, শেফালি ভার্মা কিংবা দপ্তমানে ওঠা রিচা ঘোষ – সবাই নিজেদের দক্ষতা ও সাহসে ভারতীয় ক্রিকেটের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
দ্বিতীয়বারের মতো নেশনস লিগ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, রোনাল্ডোর চোখে জল বিজয়ের আবেগে
২০২৫ সালের বিশ্বকাপটি আয়োজিত হবে ভারতেই, এবং এটি ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কারণ এবার প্রথমবারের মতো ভারত মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজন করতে চলেছে। এটি শুধুমাত্র একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং নারী ক্রীড়ার প্রতি এক জাতীয় ও বৈশ্বিক স্বীকৃতি। ভারতের একাধিক শহরে খেলা গুলি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা – যেমন মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, চেন্নাই ও লখনউ। বিসিসিআই ইতিমধ্যেই মাঠ ও সুবিধা উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে। ২০২৫ সালের বিশ্বকাপের নির্দিষ্ট দিন ও প্রতিপক্ষের তালিকা প্রকাশ হয়েছে সদ্য। ভারত লিগ পর্যায়ে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও আরও কিছু দেশের বিরুদ্ধে। প্রতিটি ম্যাচ হবে দিন ও রাতের মিলিত সময়সূচিতে (ডে-নাইট), যাতে দর্শকরা বেশি করে অংশ নিতে পারেন। খেলাগুলি সরাসরি সম্প্রচারিত হবে স্টার স্পোর্টস ও ডিজনি+ হটস্টারে। ম্যাচগুলি সাধারণত বিকেল ২:০০টা বা সন্ধ্যা ৭:৩০টায় শুরু হবে, যা দর্শকদের জন্য সময়সুবিধাজনক।
বর্তমানে ভারতের কোচিং স্টাফ ও নির্বাচকমণ্ডলী তরুণ ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়ে ব্যালান্স দল গড়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। স্মৃতি মান্ধানা ও হারমানপ্রীত কউরের অভিজ্ঞতার সঙ্গে শেফালি ভার্মা, দেয়ালান হেমলতা কিংবা অনুজা পাতিলের মতো প্রতিভাবানদের নিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ঘরের মাঠে খেলার কারণে ভারতীয় দল বাড়তি সুবিধা পাবে। ঘরোয়া দর্শকদের সমর্থন, পরিচিত কন্ডিশন এবং আবেগ – সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের বিশ্বকাপে ভারতের কাছে সোনার সুযোগ। ভারতের নারী ক্রিকেট দল আজ আর শুধুই খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত নয় – এটি হয়ে উঠেছে আত্মবিশ্বাস, সাহস ও দেশের গর্বের প্রতীক। বিশ্বকাপ ২০২৫ কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি ভারতীয় নারী ক্রীড়ার অগ্রগতির এক জীবন্ত প্রমাণ। ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় লেখার জন্য তৈরি হচ্ছে "উইমেন ইন ব্লু"। এবারের স্বপ্ন – কাপ ঘরে তোলা, সেটি যেন সত্যি হয় দেশবাসীর প্রার্থনায় ও দলটির লড়াইয়ে ।