সংশোধনাগারে মধ্যেও নিজের সৃষ্টির “স্বপ্ন”এর বাস্তবায়ন

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

“জেলের জীবনটা হয়তো অনেক অন্ধকার। কিন্তু ওখানে সবাই অনেক বেঁধে বেঁধে থাকে, হাত ধরাধরি করে। ওদের মধ্যে অনেক সংহতি রয়েছে, হয়তো সবরকম আধুনিক প্রযুক্তি থেকে দূরে রয়েছে বলেই ওদের একটা মন থাকে”।
নিজেস্ব প্রতিভা যে কোন পরিস্থিতিতেই জেগে উঠতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ অসাধারণ ব্যক্তিত্ব অলকানন্দা রায়। ম্যাডাম থেকে “মা” হওয়ার সুযোগ তাঁর কাছে এসছিল ২০০৭ সালে। “জেল জননী” অলকানন্দার মাতৃ স্নেহে মেতে উঠেছেন কারা-বন্দিরাও। প্রায় দেড় যুগ আগে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে এই শিল্পী প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়েছিলেন। সেখানেই তার নজরে পড়ে মহিলা বন্দিদের উৎসাহ।  তিনি সেই উৎসাহ তুলে ধরেন কর্তৃপক্ষের নজরে। তার পর থেকেই তার যাত্রা শুরু সেই সমস্ত মহিলা বন্দিদের নিয়ে। শুরু হয় তালিম দেওয়া। এরপর পুরুষ বন্দিদেরও তিনি তালিম দেন। খুব অল্প সংখ্যক কয়েদিদের অভিনয়ে গোটা বাংলায় নজর কেড়েছে “বাল্মিকী প্রতিভা”।


সমস্ত বন্দিরাই তাকে বসিয়েছেন মায়ের আসনে। এই নিয়ে কোন কথা উঠলেই হেসে ওঠেন অলকানন্দা রায়। তিনি বলেন, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। তিনি যা করাচ্ছেন তাই করছি। করেও যাবো”। তাঁর এই অসামান্য উৎসাহের মধ্যে রয়েছে তাঁর মানবিক মূল্যবোধ। সাধারণত সবাই মনে করেন, কারাগার বা জেল মানেই অন্ধকারের জায়গা। জীবনের সব কিছু শেষ হওয়ার জায়গা। সেখান থেকে বেরোনোর কোন পথ নেই। কিন্তু  সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন “জেল জননী”। তাঁর মতে, “যে যত বড়ই অপরাধ করুক,একদিন সঠিক পথটাও সে খুঁজে নিতে চাইবে। সুস্থ সংস্কৃতি,সুস্থ মানসিকতা,সঠিক পথ দেখালে দুস্ট সন্তানও সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসে”। বাংলার সাংস্কৃতিক জগতও গর্বিত, অলকানন্দা রায় এর মতো একজন শিল্পী পেয়ে।
অলকানন্দা রায় মনে করেন, সংশোধানাগারের মানুষদের জন্য এটি একটি থেরাপির কাজ করে। কয়েকশো বন্দিদের তালিম দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেছেন, “মানুষের মনের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়াই তো বড় থেরাপি। সেটারই বড় প্রয়োজন।” সম্ভবত এদেশেই প্রথম বন্দিদের নিয়ে কর্মশালার এই উদ্যোগ। তাঁর এই সাফল্যের কথা বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন তাঁর অলকানন্দা হওয়ার পিছনে সাফল্য রয়েছে ওই কারাবন্দি মানুষগুলিরও। তিনি বলেন, কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। কোন পরিস্থিতির কারণে বা জীবনের কোনরকম টানাপোড়েনের মধ্যে মানুষের ছন্দপতন ঘটে। আর সেসব ক্ষেত্রে এই থেরাপি ভুল সংশোধন করে আলোর পথ দেখায়।
সম্প্রতি কলকাতায় উদযাপিত হওয়া ৩৪ তম সর্ব ভারতীয় ডাক বিভাগের সাংস্কৃতিক উৎসবে সম্মানিত হয়েছেন শিল্পী অলকানন্দা। এ রাজ্যের মুখ্য পোস্ট মাস্টার জেনারেল শ্রী গৌতম ভট্টাচার্য জানালেন, “কারাগারে বন্দি মানুষগুলোকে কালচারাল থেরাপির মাধ্যমে জীবনের মূল স্রোতে ফেরাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অলকানন্দা রায়। ওদের জীবনের অন্য একটা মানে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই প্রচেষ্টাটাকেই সম্মান জানাতে চেয়েছি আমরা”।

অপরাধ প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তার চেয়েও অনেক বেশি বেড়েছে মানুষকে ‘অপরাধী’ হিসেবে দেগে দেওয়ার প্রবণতা। কেন এমন দ্রুত বদলে গেল সমাজ?  এই সম্পর্কে অলকানন্দা বললেন, “এর জন্য সোশাল মিডিয়াই অনেকটা দায়ি। এত বেশি নেতিবাচক খবর ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কিছু খবর যাচাই করে না। আর আজকে একটা গোটা সমাজ ভার্চুয়াল জগতে বাস করছে। ভাবা যায়? বন্ধু বন্ধুর সাথে মুখোমুখি বসে গল্প করে না, এর ওর ক্ষতে হাত বুলোয় না। এটা কোন সমাজ? আমার ছোটবেলায় এরকম দেখিনি তো।  তখন কি চোর ধরা পড়ত না? কিন্তু, কই, সবাই মিলে চোর সন্দেহে একটা লোককে প্রাণে মেরে ফেলল, এরকম ঘটনা তো শুনিনি কখনও। আমরা কতো অ্যাগ্রেসিভ হয়ে গেছি আজকাল”।
আমদের দেশে যেমন রয়েছে আইন তেমনই রয়েছে আইনের ফাঁকতাল। জীবনের হঠাৎ কিছু মুহুর্তে ভুল সারাজীবন সহ্য করার হাত থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন অলকানন্দা রায়।
এরপরও তিনি বলছেন, “আরও কিছু করতে চাই। আরও পথ চলতে চাই।” আর যে চলার পথে থাকবে মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা। 

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Aditi sarker

Tags:

Related News