কলকাতার আকাশে হঠাৎ করেই রহস্যময়ভাবে উড়ে বেড়াতে দেখা গেল সাতটি ড্রোন। রাতের নিস্তব্ধতায় ফোর্ট উইলিয়াম ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার উপরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এই ড্রোনগুলিকে। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। কলকাতা পুলিশের একাধিক থানা ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে। লালবাজারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা বিভাগ ও এসটিএফ-কে দিয়ে শুরু হয়েছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার গভীর রাতে প্রথমে মহেশতলা ও বেহালার আকাশে এই ড্রোনগুলি দেখা যায়। সেখান থেকে ড্রোনগুলি সোজা চলে আসে শহরের কেন্দ্রস্থলে—হেস্টিংস এলাকায়। এই অঞ্চলে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও ফোর্ট উইলিয়ামের মতো জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো অবস্থিত। এরপর ড্রোনগুলি ময়দানের উপর দিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হয়ে ঘুরতে থাকে জওহরলাল নেহরু রোড সংলগ্ন একটি বহুতলের চারপাশে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ড্রোনগুলির শব্দ খুব মৃদু হলেও রাতের নীরবতায় তা চোখ এড়ায়নি। দ্রুত খবর যায় হেস্টিংস থানায়। থানার পক্ষ থেকে তা জানানো হয় লালবাজারকে। সতর্ক করা হয় ময়দান, শেক্সপিয়ার সরণি, পার্ক সার্কাস ও উত্তর কলকাতার একাধিক থানা। সম্প্রতি কাশ্মীরে সীমান্ত পেরিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এই ধরনের অজানা ড্রোনের কলকাতার আকাশে উপস্থিতি প্রশাসনের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্তে নেমেছে। সূত্রের খবর, ফোর্ট উইলিয়ামের কাছাকাছি এই ড্রোনগুলির উপস্থিতির ফলে বিষয়টিকে নিয়ে সতর্ক হয়েছেন ইস্টার্ন কম্যান্ডের আধিকারিকরাও। প্রশ্ন উঠছে, এই ড্রোনগুলির সাহায্যে গোপনে কোনও স্থাপনার ছবি তোলা হচ্ছিল কি না। লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, সাতটি ড্রোনের মধ্যে পাঁচটি ড্রোন পূর্ব দিকে, অর্থাৎ পার্ক সার্কাসের দিকে চলে যায়। বাকি দুটি চলে যায় উত্তর কলকাতার দিকে। তবে শেষ পর্যন্ত এই ড্রোনগুলিকে শনাক্ত বা আটক করা যায়নি। সেগুলি কোথা থেকে ওড়ানো হয়েছিল এবং কোথায় গিয়েছে, তা জানার জন্য কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) ও গোয়েন্দা বিভাগ সমন্বিত তদন্ত শুরু করেছে।
দক্ষিণবঙ্গে গরমের দাপট অব্যাহত, উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অজানা ড্রোন শহরের আকাশে ঘোরাফেরা করা নিঃসন্দেহে নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় ফাঁক ফোকরকে সামনে নিয়ে আসে। ড্রোনের মাধ্যমে দূর থেকে নজরদারি, ছবি তোলা, এমনকি বিস্ফোরক বহনের মতো গুরুতর আশঙ্কাও অগ্রাহ্য করা যায় না। প্রসঙ্গত, শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানেও এই ড্রোনগুলি ঢুকে পড়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সাম্প্রতিক এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশ শহরের বিভিন্ন সংবেদনশীল এলাকায় নজরদারি আরও বাড়িয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ, বসানো হয়েছে বাড়তি ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ইউনিট। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, সরকারি দফতর ও সামরিক ঘাঁটিগুলির আশপাশেও চলছে তল্লাশি। লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, “ঘটনাটি একেবারেই সাধারণ নয়। গোপন চরবৃত্তি, সন্ত্রাসবাদী হুমকি কিংবা ডেটা চুরির মত কিছু উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”