লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের কালপেনি দ্বীপের কাছে সমুদ্রগভীরে ডুবুরিরা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন, যা ঐতিহাসিক গবেষণায় নতুন দিশা দেখাতে পারে। সম্প্রতি, সমুদ্র গবেষণার একটি দল যুদ্ধজাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির প্রাচীন সামরিক ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। গবেষকদের ধারণা, উদ্ধার হওয়া এই যুদ্ধজাহাজটি সম্ভবত ইউরোপীয় শক্তির—যেমন পর্তুগিজ, ডাচ বা ব্রিটিশদের—একটি যুদ্ধজাহাজ, যা ১৭ বা ১৮ শতকের। সমুদ্রগবেষণার দলটি এই জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ কালপেনির পশ্চিম দিকে খুঁজে পায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি কামান এবং একটি নোঙ্গর, যা যুদ্ধজাহাজের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উলেখ্য, স্থানীয় ডাইভিং গ্রুপ 'ব্র্যান্ডিভস'-এর নেতৃত্বদানকারী মেরিন লাইফ গবেষক সত্যজিৎ মানে জানান, যখন তাঁরা প্রথম ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান, তখন তাঁদের ধারণা ছিল এটি সাধারণ কোনো জাহাজের অংশ। তবে, কামান ও নোঙ্গর উদ্ধার হওয়ার পর তাঁরা বুঝতে পারেন এটি একটি যুদ্ধজাহাজ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাহাজটি লোহা ও কাঠের মিশ্রণে তৈরি হতে পারে, যা ঐ সময়কার ইউরোপীয় যুদ্ধজাহাজের নির্মাণ উপাদান ছিল। এই ধরনের জাহাজ সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য এবং শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্তকারী প্রাচীন সমুদ্র পথের উপর আধিপত্য বিস্তার করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এই অঞ্চলে এর আগে এমন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি, যা এই আবিষ্কারের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
গবেষকরা আরও জানান, জাহাজটির আকার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মিটার হতে পারে, যা একটি বড় যুদ্ধজাহাজের সম্ভাবনা জোরালো করে। সাগরের তলদেশে প্রবাল এবং মরিচার উপস্থিতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটি কয়েক শতাব্দী ধরে সমুদ্রে ডুবে রয়েছে। এই আবিষ্কারের পর বিশেষজ্ঞরা আরও গভীরতর প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। প্রাথমিকভাবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এই এলাকা সংরক্ষণ করা যায় এবং আরও তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ায়, অনেকেই প্রশ্ন করছেন, শীত কি এবার বিদায় নেবে?
প্রসঙ্গত, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭ বা ১৮ শতকে এই অঞ্চলে লোহার তৈরি যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করত, তবে পর্তুগিজরা সাধারণত লোহা ও কাঠের সংমিশ্রণে জাহাজ তৈরি করত। গবেষকদের মতে, এই যুদ্ধজাহাজটি হয়তো ব্রিটিশ বা পর্তুগিজদের হতে পারে, তবে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। এটি লাক্ষাদ্বীপের ইতিহাস এবং সমুদ্রগবেষণার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যা এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসকে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করতে সাহায্য করবে