২০১৯ সালের পরে ফের ২০২২ সালে বাংলা ভাষায় সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেলেন সাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর 'বীরবল' উপন্যাসের জন্য তাঁকে দেওয়া হল সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। ২০১৯ সালে তিনি সতীকান্ত মহাপাত্রের কবিতা সংকলন 'ভারতবর্ষ' অনুবাদের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় জন্ম তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জন্মের পরপরই তাঁকে নিয়ে তাঁর পরিবার চলে আসে এপার বাংলায়। জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই সেই শুরু লড়াই। তার পরে গোটা জীবন ধরে সঞ্চিত হয়েছে অসংখ্য অভিজ্ঞতা। সেই সব অভিজ্ঞতাই তাঁর লেখার উপকরণ, একথা বলেন তিনি নিজেই। তিনি নিজের জীবনযাপন থেকেই লেখার রসদ সংগ্রহ করে নেন নিত্য।
উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান হিসেবে কলকাতায় এসে জীবন শুরু করা, শিক্ষকতার পেশায় প্রবেশ, পরবর্তী কালে আমলা হিসেবে সফল ভূমিকা পালন করা– দীর্ঘ জীবনে কম চড়াই-উতরাই পেরোননি তিনি। একের পর এক লিখেছেন ‘লাল ফিতে’, ‘একটি জরুরি ফাইল’, ‘খণ্ডবিখণ্ড’— এমন অনেক উপন্যাস। প্রায় সব লেখাতেই প্রোটাগনিস্ট তিনি নিজেই। তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ ট্রিলজি ‘শঙ্খচিলের ডানা’-কে তাঁর জীবনচরিতও বলেন অনেকে।
লেখক জীবনের প্রায় প্রথম থেকেই তিনি ছোটোদের জন্যও লেখালেখি করেছেন। আশির দশকের গোড়াতেই আনন্দমেলা পত্রিকায় গল্প লিখতে দেখা যায়। কিশোরভারতী পত্রিকায় তিনি ধারাবাহিক ভাবে কল্পবিজ্ঞানের গল্প লিখেছেন। শিশু কিশোরদের জন্য লেখা রচনার মধ্যে ভূতুড়ে দুপুর, পরীর দেশে ঝিলমিল, অমরকণ্টকের বাঘ, হিয়াকাতুকের দেশে তিনজন, চাঁদের পিঠে দশদিন, তিমি হাঙরের দেশে, ধূমকেতুর লেজে একটি সবুজ বিন্দু , ক্লোন, মঙ্গলগ্রহে অমঙ্গল, ওয়াই টু কে উল্লেখযোগ্য।
তাঁর রচনার সংখ্যা যেমন অনেক তেমনি তাঁর বিষয়ের বৈচিত্রও বহু। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তাঁর রচিত গল্পের সংখ্যা প্রায় চারশো। সত্তর ও আশির দশকের বাংলা লেখকরা উল্লখযোগ্যভাবে কাজের বা বসাবসের সূত্রে প্রত্যন্ত গ্রামজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। সত্তর দশকের পর থেকে গ্রাম বাংলার সমাজ ও মনের যে পরিবর্তন ঘটেছে তা বহু লেখায় ধরা পড়েছে। তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও গ্রাম দেখার অভিজ্ঞতা নানান চেহারায়, রঙে ও ভঙ্গিতে ধরা পড়েছে সামাজিক গল্পগুলিতে।