১৯৬৮ সালের ২৩ অগাস্ট হিন্দু মালায়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা সবকিছুই ছিল রাজধানী দিল্লির মাটিতে। দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় কে কে'র। এরপরে স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে দিল্লির কিরোরিমল কলেজ এবং তারপরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি কোর্স পাশ করেন। তবে ছোটবেলা থেকে তাঁর গানের প্রতি ঝোঁক ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত ক্রিকেট দলের সমর্থনে 'জোশ অব ইন্ডিয়া' গানে কণ্ঠ দেন। গানটির ভিডিওতে ক্রিকেট দলের সদস্যদের দেখা যায়। ১৯৯৯ সালেই 'সোনি মিউজিক' এর তরফ থেকে একটি মিউজিক অ্যালবামের জন্য খোঁজ করা হচ্ছিল নতুন গলার। সেখানেই অডিশন দেন কেকে। এবং নির্বাচিত হন সেরা নিউকামার হিসেবে। আর সেখানেই রেকর্ড করেন জীবনের অন্যতম সেরা গান। আর সেই অ্যালবাম ছিল 'পল'। আর এরই টাইটেল ট্র্যাক হাম রহে ইয়া না রহে কাল আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গান। কে কে একাধারে হিন্দি, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালাম, মারাঠি, বাংলা, অসমীয়া, গুজরাতি ভাষায় গান গেয়েছেন। তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা শিল্পী হিসাবে পরিগণিত হতেন তিনি। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে 'দিল ইবাদত' (তুম মিলে), আঁখো মে তেরি (ওম শান্তি ওম), তুনে মারি এন্ট্রি ইয়ার (গুণ্ডা), খুদা জানে (বাঁচনা অ্যায় হাসিনো), ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায় (ওয় লম্হে), আই অ্যাম ইন লাভ (ওয়ান্স আপন আ টাইম মুম্বই) সহ প্রচুর জনপ্রিয় গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
কে কে তার মিক্সটেপ লোইয়াস ব্যাঙ্কস, রঞ্জিত বারোট এবং লেসলে লুইসের কাছে বিনোদন শিল্পে সাফল্যের জন্য জমা দিলে, কে কে প্লেব্যাক গান করা শুরু করে। এর পরে, তিনি জিঙ্গেল গাইতে শুরু করেন। কে কে যখন একটি সান্টোজেন স্যুটিং বিজ্ঞাপনের জন্য একটি জিঙ্গেল গেয়েছিলেন, তখন UTV তার সাথে যোগাযোগ করেছিল।
কে কে দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুল থেকে স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি দিল্লির কিরোরি মাল কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক করেন। গানের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেননি কে কে।
কে কে ১৯৯১ সালে তার শৈশবের প্রিয়তমা জ্যোতিকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে ৩৭ বছর ধরে চিনতেন এবং দু’জন শৈশব বন্ধু ছিলেন।
বিয়ে করার জন্য সেলসম্যানের চাকরি নেন। তবে গানের প্রতি অনুরাগ ধরে রাখতে ৬ মাস পর চাকরি ছেড়ে দেন। তার স্ত্রী এবং তার বাবা তাকে সমর্থন করেছিলেন এবং তাকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তার আবেগ অনুসরণ করার সাহস দিয়েছিলেন। এই দম্পতির নকুল কৃষ্ণ কুনাথ নামে একটি পুত্র রয়েছে, যিনি একজন গায়ক এবং তমরা কুনাথ নামে একটি কন্যা।
আট মাস হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৪সালে, কে কে মুম্বাইতে চলে আসেন। তারা তাদের ডেমো টেপগুলি লুইস ব্যাঙ্কস, রঞ্জিত বারোট এবং লেসলি লুইসকে তাদের সংগীত বিরতি পেতে উপস্থাপন করে।
কে কে এর প্রথম গানের অ্যাসাইনমেন্ট ইউটিভি তাকে দিয়েছিল; তিনি সান্তোজেন স্যুটিং বিজ্ঞাপনের জন্য একটি গান গেয়েছিলেন।
কে কে এর প্রথম অ্যালবাম “পাল” ১৯৯৯সালে। অ্যালবামটি সেরা একক অ্যালবামের জন্য স্টার স্ক্রিন পুরস্কার জিতেছে।
৯ বছর পর ২০০৮ সালে আসে কে কে এর দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘হামসাফর’।
৩১ মে রাতে কলকাতায় লাইভ কনসার্ট চলাকালীন হঠাৎ মারা যান বলিউডের বিখ্যাত গায়ক কেকে। শো চলাকালীন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পথেই তার মৃত্যু হয়। ৫৩ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও, কেকে একেবারে ফিট ছিলেন। গায়কের আকস্মিক প্রয়াণে তার ভক্তরা খুবই বিস্মিত।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, কে কে হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আপাতত এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে মেদান্ত হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও কার্ডিওলজিস্ট ডা. নরেশ ত্রেহান কেকে-র মৃত্যু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছেন।
ডক্টর নরেশ ত্রেহান বলেন, 'প্রি-এগজিস্টিং ব্লকেজ এবং চাপের পরিস্থিতিতে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। একটানা দুই-তিন ঘণ্টা গান গাইলে বোঝা যায় মানসিক চাপ নিশ্চয়ই হয়েছে। কনসার্টে গান গাইলে শরীরের প্রচুর শক্তি খরচ হয়। এই সময় কে কে বারবার গরমের অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু এটা যে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে, সেটা তারা বোধহয় বুঝতে পারেননি।' তিনি আরও বলেন, এটাও সম্ভব যে এত বড় মঞ্চে একটানা আলোর সামনে পারফর্ম করার সময় তার ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকতে পারে, যার কারণে হিট স্ট্রোকের সমস্যা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, হিট স্ট্রোকে, একজন ব্যক্তির রক্ত ঘন হয়ে যায়, যা রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বাড়ায় এবং এটি তখন ঘটে যখন ব্যক্তি ইতিমধ্যেই হৃদরোগের শিকার হন।