তীরন্দাজ শবর
অভিনয়ে – শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, নাইজেল আক্কারা, শুভ্রজিৎ দত্ত, দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার, চন্দন সেন, দীগন্ত বাগচি, রম্যানি মণ্ডল
পরিচালনায় – অরিন্দম শীল
ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবুদের ভিড়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সৃষ্ট লালবাজারের গোয়েন্দা চরিত্র শবর দাশগুপ্ত ২০১৫ সালেই অরিন্দম শীলের হাত ধরে পর্দায় আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ‘আসছে শবর’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘আসছে আবার শবর’- তিন বছরে পরপর তিনটে হিট ছবি উপহার দেন দর্শকদের ।এরপর ২০২২ সালে ২৭ মে মুক্তি পাই শবর দাশগুপ্তের চরিত্রকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ শবরের পরবর্তী পার্ট ‘তীরন্দাজ শবর’- ।বলা হয়, পরিচালক অরিন্দম শীলের অনুরোধেই নাকি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এই ‘শবর’ চরিত্র এবং তাকে নিয়ে গল্প তৈরি করছেন। অর্থাৎ এটা বলা ভাল শবরের কাহিনি অনেকটাই পরিচালকের ইচ্ছে অনুযায়ী।
২০২০ সালে 'তীরন্দাজ শবর'-এর শ্যুটিং শুরু হয়েছিল। মহামারীর কারণে একাধিকবার শ্যুটিং পিছিয়ে গিয়েছে। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শুভ্রজিৎ দত্ত, নাইজেল আকারা, দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার, পৌলমী দাস, রম্যাণি মণ্ডল, চন্দন সেন প্রমুখ রয়েছেন এই ছবিতে।লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিক শবর ওরফে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষুরধার বুদ্ধি ও কেতাদুরস্থ সংলাপ এবারও দর্শকদের নিরাশ করেনি।ঝমঝমে বৃষ্টির রাত। সিঁথির মোড় থেকে তিন অনাহূত যাত্রী ও এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের যাত্রা দিয়ে গল্পের শুরু।
এক বর্ষণ মুখর রাতে সিঁথি থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে বালিগঞ্জের পথে যাত্রা শুরু করে।পথে দু’জন যাত্রী নেমে গেলে শেষে অচৈতন্য যাত্রীকে নিয়ে সে সোজা গাড়ি নিয়ে যায় থানায়। পুলিশ আবিষ্কার করে যাত্রী মৃত।এই মৃত্যুর তদন্তের স্বার্থেই শবর দাশগুপ্তের আগমন। তিনি একা নন, সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভ্যালারাম ‘নন্দ’। শবর একাই গাড়িতে খুন হওয়া ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর ব্যবসায়িক ঝামেলা, স্ত্রীর প্রেমিকার সঙ্গে সমঝোতা করা, আবার প্রয়োজনে সুপারি কিলারের সাহায্য নিয়ে খুন করানো, সমস্ত কিছু বেশ তড়িৎ গতিতে করে ফেলেন।তীরন্দাজ শবর’-এর পরতে পরতে রহস্য রেখেছেন অরিন্দম শীল। গল্পের বুনোটও খাসা।শবর ও নন্দর (শুভ্রজিৎ দত্ত) জুটি জমজমাট। দু’জনের অভিনয় ও সমঝোতার সমীকরণ সুন্দর। রহস্য-রোমাঞ্চ জিইয়ে রেখে যেভাবে চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে, তার জন্য বাহবা দিতে হয় পদ্মনাভ দাশগুপ্ত ও পরিচালক অরিন্দমকে।
তবে বেশ কিছু দৃশ্যায়ণে আরেকটু গভীরতার প্রয়োজন ছিল। শবরের মুখে চোখা চোখা সংলাপ শুনতে মন্দ লাগেনি। কিন্তু গল্পের শুরুতেই শবর রূপী শ্বাশতর গুন্ডাদের ধাওয়া করা দৃশ্যটি ভীষন চক্ষু পীড়াদায়ক। তার পর গল্পের বুনোট ভীষনই আলগা।
অভিনয়ে মুখ্য চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় আগের মতোই অসাধারণ । শুভ্রজিৎও একইরকম। দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমারের অভিনয় খুব একটা খারাপ ছিল না । অরিন্দম শীল খলনায়ক সেজে মন্দ করেননি। খুব অল্প সুযোগে রম্যানি মণ্ডল নজর কেড়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি প্রবীণ অভিনেতা চন্দন সেনও অনবদ্য। ড্রাইভারের চরিত্রে নাইজেল আক্কারা বেশ স্বাভাবিক। কিন্তু অরিন্দম শীলের অন্যান্য ছবির তুলনায় এ ছবির সঙ্গীত একটু দুর্বল লেগেছে, তেমন মন ছোঁয় নি।তবে ছবির আসল মুন্সিয়ানা ছবির গল্প বলার ঢং-এ। দর্শক এক সময় ভুলে যাবেন নিছক গোয়েন্দা গল্প দেখছিলেন।