আশঙ্কা ছিল জঙ্গি হানার, সেই মতো সেনাবাহিনীর ২১ নম্বর প্যারা স্পেশাল ফোর্স চেকিং শুরু করে নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিংয়ে। বিকেলের দিকে নাগাল্যান্ডের মন জেলার খনি শ্রমিকেরা গাড়ি করে ফিরছিলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে, আর সেই সময় ঘটে বিপত্তি। সেনার তরফ থেকে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ঘর মুখি শ্রমিকদের গাড়ি না থামাই সেনা বাহিনীর গুলি ঝাঁজরা করে দেয় শ্রমিকদের শরীর, মৃত্যু হয় ১৪ জন নিরপরাধী গ্রামবাসীর, তাঁর সাথেই মৃত্যু হয় এক সেনা জাওয়ানেরও। এনিয়ে গোটা দেশেই আলোড়ন পড়েছে, সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। জঙ্গি সন্দেহে সেনার চালানো গুলিতে প্রথমে মৃত্য হয় ৬ জন নিরীহ কয়লা খনি শ্রমিকের, পরে এলাকার সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মারমুখি হয়ে উঠলে ফের গুলি চালাই প্যারা বাহিনী তাতে মৃত্যু হয় আরও ৭ জন গ্রামবাসীর।
সেনাবাহিনীর এহেন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। উত্তেজিত জনতার ভিড় সামাল দিতে গুলি চালানোর কি প্রয়োজন ছিল তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। নাগাল্যান্ডের গন হত্যার দাবিতে সরব হয়েছেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও। সোমবার তিনি জানান, “নাগাল্যান্ডে অশান্তি সৃষ্টির মূল কারণ আফাস্পা আইন, নাগাল্যান্ডকে উত্তপ্ত কোর্টে বার বার আফাস্পা আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন মোদী সরকার। নাগাল্যান্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আফাস্পা আইন প্রত্যাহার করা দরকার”। শনিবারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে উত্তপ্ত নাগাল্যান্ড সহ উত্তর পূর্বের একাংশ। এদিন আফস্পা নিয়ে সরব হয়েছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীও, তাঁর দাবি “ আফাস্পা আইনের কারনেই উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির এই সমস্যা”। দুই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে চাপের মুখে মোদী শাহ জুটি। ত্রিপুরাই সিপিএম সরকারের সময় এই আইন প্রত্যাহার করা হলেও বাকি রাজ্যগুলিতে এই আইন আজও বলবত রয়েছে। ছয় মাস অন্তর অন্তর এই আইন লাগু করা করা হয়। এই আইনের কারণে দীর্ঘ ছয় মাস রাজ্যের ক্ষমতা থাকে সেনাবাহিনীর হাতে, তখন তারা ইচ্ছে মতো নিরপরাধ মানুষকে হেনস্থা থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত করে। কাল নিহতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে, শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও। হত্যাকাণ্ডের অপরাধে তিনি অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেই কাঠগড়াই তুলেছেন। নিহতদের শেষকৃত্যে যোগ দিয়ে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও আরও বলেন, “সেনার গুলিতে নিহত নিরপরাধী গ্রামবাসীদের পরিবারেকে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ্য থেকে ১১ লক্ষ টাকা এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ্য থেকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, আর আহতদের পরিবারকে কেন্দ্রের তরফ থেকে ১ লক্ষ টাকা এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে”।
ঘটনার প্রতি শোক জ্ঞাপন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ জানান, “ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক, মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল, প্রতিটি পরিবার ন্যায় বিচার পাবে”। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। ঘটনার দ্রুত তদন্তের প্রয়োজন, পরিবারগুলি যেন ন্যায় বিচার পায় তা নিশ্চিত কোর্টে হবে”।
এদিন প্যারা কামান্ডোদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত গণহত্যার মামালা দায়ের করেছে নাগাল্যান্ড পুলিশ। যার ফলে শক্ত হয়েছে উত্তর-পূর্বে আফাস্পা আইন প্রত্যাহারের দাবি। নাগাল্যান্ড পুলিশের দাবি, “নাকা তল্লাশির ব্যাপারে আগে থেকে সেনার তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। গ্রামবাসীদের গাড়ি লক্ষ্য করেই তারা উদ্দেশ্যহীন ভাবে গুলি চালাতে শুরু করে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য”।