মালাবদলের সময় পালাবদলের কাণ্ডারি হলেন স্বয়ং নারীরা

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

“মেয়ারা সব পাচ্ছে” বলে যাতে আড়াল না করা যায় অধিকারের প্রয়োজনীয়তা, অত্যাচারের অশ্লীলতা, সে কথা মনে করাতে পারে “নারী দিবস”। নারী স্বাধীনতার জয়গান গাইতে গাইতে কেটে গিয়েছে ৪৭টা বছর। আর তিন বছর পর ঘটা করে বিভিন্ন দেশে পালন হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের হাফ সেঞ্চুরি। আর তারই মধ্যে বিয়ের নিয়মকানুনে নিজেদের সাহসে, নিজেদের উদ্যোগে নারী আনছে বড়সড় বদল। 
প্রতিদিন সকালে চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে এখনও আমরা খবর পড়ি নারী নির্যাতনের। আসলে কিছু পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। কন্যা ভ্রূণ হত্যা, যৌতুক নিয়ে বিয়েতে বাধ্য করা, পণের দাবিতে অত্যাচার,জ জীবনসঙ্গী নির্বাচনে বাধা অথবা মাথায় ভারী, কলসি নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে আনতে হয় পানীয় জল। এই রকম ছবি দেখা যায় এখনও দেখা যায়। 
আজ থেকে কয়েক বছর আগে হরিয়ানার স্কুল টিচার মঞ্জু যাদব প্রতিবাদ করতে শুরু করেন ঘোমটা প্রথার বিরুদ্ধে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই প্রথাকে বন্ধ করতে তাকে অনেক কঠিন পথ পার হতে হয়েছে। মঞ্জু যাদব প্রায় ৪টি গ্রামের মহিলাদের এই প্রথা যে একটি কুসংস্কার সেটা বোঝাতে সক্ষম হন। তিনি বোঝান বিয়েটা একটা সম্পর্কের মেলবন্ধন,অধিকারবোধের নয়! আর এই কথা মাথায় রেখে বর্তমানে নারীরা তাঁদের বিয়েতে বেশ কিছু বিশেষ আচারকে বাদের খাতায় রেখেছেন। ডিজিটাল যুগে নীরবে হচ্ছে সামাজিক রীতির সংস্কার। 
যুগযুগ ধরে চলে আসা এই  পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদেরকেও বস্তুর ন্যায় দান করে এসেছে। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা তার মেয়েকে অন্য পুরুষ অর্থাৎ তার স্বামীর কাছে হস্তান্তর করবে। কারণ মেয়েরা নাকি পরের ধন। নিজের ইচ্ছায় কাউকে বিয়ে করে সুখী থাকার অধিকার তার নেই, এমন ধারনাই প্রচলন ছিল। কিন্তু এই রীতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আজকের নারী। বিয়েতে এখন পুরোনো প্রথা ভেঙে নারীরা গড়ে তুলেছে অন্য সমাজ। তারা বিয়ের অনুষ্ঠানে কন্যাদানের মতো প্রথাকে বাদের খাতায় রেখেছে।

হিন্দু ধর্মের বিয়ে মানেই “সিন্দুর দান”। বিয়ে মানেই অধিকারবোধ, আর সেই অধিকারবোধকে স্বীকৃতি দিতে দরকার কোন চিহ্নের। কিন্তু দুজন মানুষের একসাথে থাকতে একটি আইনি কাগজ ছাড়া কিছুই লাগে না। তাই এই “সিন্দুর” চিহ্নের পাততাড়ি গুতিয়ে দিয়েছে আজকের নারী। 
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে পরের দিন মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় একটি অনুষ্ঠান হল “ঋণ শোধ”। বিদায়ীর সময় মেয়েদের একমুঠো চাল মায়ের আঁচলে ফেলে বলতে হয়,”মা আমি আজ তোমার সব ঋন শোধ করলাম”। এটিকে বহু নারী নিন্দনীয়ই নয়, অপমানজনকও মনে করেন। তাই তাঁদের মতে বিয়ের মতো একটি শুভ কাজে এটা রাখা যায় না। কারণ মা-বাবার ঋন কখনও শোধ করা যায়না। 
হিন্দু বাঙালি নারীর বিবাহিত নারীর  এক অবিচ্ছেদ্য অলংকার শাঁখা-পলা-নোয়া। ব্রহ্মদৈত্যপুরাণে আছে, শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ছিলেন ভগবান নারায়ণে বিশ্বাসী এক সতীসাধ্বী নারী। তার পাপের শাস্তিস্বরুপ তাকে বধ করার পর ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীব্রতী তুলসী দেবী তা সইতে না পেরে স্বামী এবং নিজের অমরত্বের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান প্রার্থনা মঞ্জুর করে তার দেহ থেকে তুলসী গাছ এবং সমুদ্রে হত্যা করা স্বামীর রক্ত বা অস্থি থেকে শঙ্খ বা শাঁখার উৎপত্তি করেন। সেই থেকে পতিব্রতা তুলসীকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সনাতন ধর্মালম্বিদের তুলসী ও শাঁখা ব্যবহারের প্রচলন হয়। কিন্তু আধুনিক সমাজের বহু নারী এখন এই প্রথা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, মনের বন্ধন দৃঢ় থাকলে এই শাঁখা-পলার দরকার পড়ে না।

আজকের দিনে বেশিরভাগ নারী নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারেন। কারণ এখন সমাজে শুধু পুরুষেরাই রোজগার করেন না, নারীরাও রোজগেরে হয়েছেন। এখন নারীরা পরিবারের সবার খেয়াল রেখে নিজেদের শখ আহ্লাদ পূরণ করে। সেই জন্য তাঁদের কারও জন্য আর্থিক সাহায্য দরকার পড়ে না। তাই এই যুগে দাঁড়িয়ে বিয়ের পর স্বামির ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নেওয়ার মতো বিষয়টাও আজকের নারী সমাজের কাছে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। দিন বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে মানুষও। এই বছর নারী দিবসে কিছু তথাকথিত ভাবে চলে আসা রীতি থেকে বেরিয়ে নতুন ভাবে নিজেকে ভাবতে শিখতে হবে মহিলাদের। সমাজকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যে সকালে পেপার খুললেই যেন চোখে না পড়ে ধর্ষনের মতো নারকীয় ঘটনা। মানুষ হিসাবে যেন নারীদের সম্মান বাড়ে। 

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Aditi sarker

Tags: