আলোর উৎসব কালীপুজো ও দীপাবলীর পরেই বাঙালিরা আবার ভাইফোঁটার তোড়জোড় করতে লেগে যায়। তবে, ভাইফোঁটা শুধু বাঙ্গালীদের নয়। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। বাংলা- বিহার –মহারাষ্ট্র- দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক অঞ্চলে অসংখ্য মানুষ ভাইফোঁটা উদযাপন করেন। মূলত ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাদের কপালে ফোঁটা দিয়ে একে অপরের সুখ শান্তি ও দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করেন। এই উৎসব ভাতৃদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
উত্তর ভারতের হিন্দি ভাষী মানুষদের মধ্যে এটি ভাই দুজ, বাঙ্গালীদের ভাইফোঁটা বা ভাতৃদ্বিতীয়া এবং মহারাষ্ট্রে ভৌ-বিজ, দক্ষিণ ভারতে যমদ্বিতীয়া , উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে ও নেপালে এই উৎসব ভাই টিকা নামে পরিচিত। প্রতিটি নামকরণের অন্তরালে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। মহাভারতে কথিত আছে যে নরকাসুর বদ করে কৃষ্ণ কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। তার বোন সুভদ্রা তাই তিলক কেটে ভাইকে বরণ করে ঘরে এনেছিলেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা বা ভাই দুজ পালন করা হয়।
আবার অপর এক বহুল প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী হলো ও যমুনার কাহিনী। জানা যায় যে যমুনার বাড়িতে মৃত্যুরদেবতা যমরাজ নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেছিলেন। সেদিনও ছিল কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। যমরাজের বোন যমুনা দাদাকে ফোটা দিয়ে বরণ করে আদর করে ঘরে বসান পঞ্চ ব্যঞ্জন সহযোগে তাকে আপ্যায়ন করেন। যমুনার আতিথেয়তা ও রন্ধনশৈলী তে মুগ্ধ হয়ে যমরাজ তাঁকে আশীর্বাদ করেন এবং বলেন যে সকল ভাই এই দিনে তাদের বোনের হাতে ফোঁটা নেবে তাদেরকে নরক যাত্রা ভোগ করতে হবে না। সেই থেকে মর্তলোকে ভাইফোঁটার সূচনা যমরাজ কে ফোঁটা দেওয়ার সময় যমুনা আছে মন্ত্র করেছিলেন, তাই যুগ যুগ ধরে বোনেরা বলে আসছে, “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যম দুয়ারে পড়লো কাঁটা, যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা”, দীর্ঘায়ু কামনার জন্য এই মন্ত্র উচ্চারিত হয়ে থাকে।
তবে, ফোঁটা নিতে বসার এক নির্দিষ্ট দিক আছে। শাস্ত্র অনুযায়ী পূর্ব দিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়া শুভ। তবে কিছু ক্ষেত্রে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়া যেতে পারে। তবে দক্ষিণ দিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়াকে অত্যন্ত অশুভ বলে মান্য করা হয়।
তবে বাঙালি পরিবারে ভাইফোঁটা শুধুমাত্র একটি উৎসব নয় একটি রীতি ও বটে। এইদিন দই বা চন্দন এর ফোঁটা দিয়ে উৎসব শেষ হয়ে যায় না। বরং সাথে থাকে ভুরি ভোজের আয়োজন। শুধু বাড়ির ছোটরাই নয় বাড়ির বড়রাও তাদের ভাই ও দাদাদের ফোঁটা দেওয়ার জন্য বাড়িতে উপস্থিত হয়। ঠিক মনে হয় এ যেন এক চাঁদের হাট। সারাটা দিন আনন্দে আনন্দে কিভাবে কেটে যায় তা ঠাহর করা যায় না।