আলোর উৎসব দীপাবলি

banner

#Kolkata:

দিওয়ালি বা দীপাবলি, অর্থাৎ প্রজ্বলিত দ্বীপের সারি, দীপাবলির দিন সারা ভারতর্ষ আলোর রোশনাইতে সেজে ওঠে। কিন্তু দীপাবলি শুধুমাত্র আলোর উৎসব নয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এইদিন শুভ শক্তির আলো বিনাস করে সমস্ত অশুভ প্রকাশকে। সেই অশুভের উপর শুভ শক্তির জয়কে উৎযাপন করা হয় আলোর এই উৎসবে।

 দীপাবলি হল আনন্দের উৎসব যে উৎসবের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে প্রায় গোটা ভারতবর্ষের মানুষ। পাঁচ দিন চলা এই উৎসবে বাড়ি ফিরে আসে বাড়ির বাইরে কাজ করতে যাওয়া মানুষজন। পরিবারের সাথে একসাথে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যই দীপাবলীর আনন্দ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। 


কালীপুজো দীপাবলি একদিন আগে-পরে পড়লেও দীপাবলীর অন্তরালে একাধিক কাহিনী বিরাজ করে। অমাবস্যায় রাতের আকাশ আতশবাজিতে ঢেকে  যায়। চারিদিকে ফুটে ওঠে আলোর রোশনাই। মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যাওয়া হয় পরিজনদের বাড়ি বাড়ি। আশীর্বাদ গ্রহণ করে একসাথে সময় কাটানো হয়ে থাকে। খুশির আবহ থাকে চারিদিকে। তবে দীপাবলীর মাহাত্ম্য শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়।

কথিত আছে যে, একসময় হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেব ও দানব উভয় ছিলেন মরণশীল অর্থাৎ কেউই অমর ছিলেন না। অমরত্ব লাভের আশায় তারা সমুদ্র মন্থন শুরু করেন। একদিকে ছিল দেবকুল অন্যদিকে ছিল দানব কুল। সমুদ্র মন্থন করার সময় বিভিন্ন জিনিসের সাথে একসময় ধনসম্পত্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষী আবির্ভূত হন। তাই এই দিনটিকে একাধারে দেবী লক্ষ্মীর জন্মদিন প্রিয় মান্য করা হয়ে থাকে। ফলে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষেরা এই দিনটিকে শুভ বলে মনে করেন ও দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করেন এই দিন।


আবার ভারতের অপর অন্যতম মহাকাব্য মহাভারতে উল্লেখিত আছে যে এই দিন পাণ্ডবেরা দ্রৌপদীর সাথে বারো বছরের নির্বাসন কাটিয়ে তাদের রাজধানী ফিরে এসেছিলেন। প্রজারা তাদের রাজা ও রানীর প্রত্যাবর্তনের আনন্দে বাড়ির চারদিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিল সেই থেকে এই দিন দীপাবলি পালন করা শুরু হয়।

অন্যদিকে রামায়ণে বর্ণিত কাহিনী যা বহুল প্রচলিত এক লোকগাথা অনুসারে বলা হয় রাম রাবণ কে পরাজিত করে লঙ্কা জয় করেন এবং সীতা দেবী কে উদ্ধার করে চোদ্দ বছরের বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। রাম লক্ষণ সীতা দেশে ফেরার খুশিতে প্রজাগণ কেবল তাদের বাড়ি নয় পুরো অযোধ্যা আলোয় মুড়ে ফেলেছিলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। সেই থেকে প্রতিবছর তাদের ঘরে ফেরার দিন হিসেবে দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়।


এছাড়াও দীপাবলীর সময় অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে দেবী কালী মা দুর্গার কপাল থেকে জন্ম নেন এবং অসুর বিনাশ করে অশুভ শক্তির হাত থেকে পৃথিবী কে বাঁচান, সেই থেকে এই দিন দীপান্বিতা তিথিতে কালীপূজো করা হয়ে থাকে।

কেবলমাত্র গল্পকথাই নয় দীপাবলি বা দিওয়ালি ভারতীয় সমাজের এক প্রত্যাবর্তনের গল্প বলে। সে পান্ডব হোক বা রাম, পৌরাণিক এই ব্যক্তিদের যেমন ঘরে ফেরার গল্প বলে দিওয়ালি তেমনি বর্তমান যুগে নিজের বাড়ি থেকে বহুদূরে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া অসংখ্য এমন রাম লক্ষণ সীতাদের এই পাঁচ দিনের ছুটিতে বাড়ি ফেরার কাহিনী ও বলে যায় প্রতিবছর পালন করা দিওয়ালির খুশি। 


তাই লোকবিশ্বাস ও ঠাকুরমা দিদিমা দের কাছে শোনা গল্প থেকে জানা যায় যে যখন বৈদ্যুতিক আলো ছিল না তখন দিওয়ালির দিন ঘরে ফেরা মানুষের সাথে সন্ধ্যেবেলা পথ চিনতে সুবিধা হয় সেজন্য গ্রামাঞ্চলে মানুষরা বাড়ির বাইরে রাস্তার ধারেও প্রদীপ জ্বেলে রাখতো সেই আলো অনুসরণ করে বাড়ীর পথে এগিয়ে যেত পথিকরা। কারণ বাড়িতে যে পরিবার বসে থাকবে  কারো স্বামী কারো সন্তানের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।


#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Satarupa Karmakar

Related News