আগামী ছয় নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এই উৎসবে ৩৯টি দেশের ২১৫টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে। তবে থাকছে না প্রতিবেশী বাংলাদেশ। ফলে ২০২৪ সালের পর ২০২৫ সালেও বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র বা ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখানো হবে না।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জার্মানি পোল্যান্ড, মিশর, ইরাক-সহ মোট ৩৯ টি দেশের ২১৫টি ছবি প্রদর্শন করা হবে। এই নামের তালিকায় বাংলাদেশ না থাকায় অনেকেই মনে করছেন এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে এই দেশের সঙ্গে নানা ধরনের রাজনৈতিক টানা পড়েন শুরু হয়েছে। দিন যত গড়িয়েছে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই কি এবারের চলচ্চিত্র উৎসব থেকেও বঞ্চিত হয়ে রয়ে গেল বাংলাদেশ?
এ বছর উৎসবের সূচি প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায়, কোনো বিভাগেই বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের উপস্থিতি নেই। অথচ বাংলাদেশি পরিচালক থানবীর চৌধুরীর ‘কাফারা’ এই বছর আন্তর্জাতিক বিভাগে জমা পড়েছিল। কেআইএফএফ কর্তৃপক্ষ মেল মারফত ছবির জমা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও, শেষ পর্যন্ত সেটি নির্বাচিত হয়নি।
৬৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের সাদা-কালো ‘কাফারা’ ছবিটি এক স্থানীয় ইমামের অপরাধবোধ ও তার স্ত্রীর মানসিক সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে নির্মিত। সিনেমাটির চিত্রগ্রাহক ছিলেন বর্কত হোসেন পলাশ, যিনি শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘ডিয়ার মালতী’-তেও কাজ করেছিলেন। সেই ছবিটিও ৩০তম কেআইএফএফ-এ জমা পড়লেও নির্বাচিত হয়নি। তবে ‘ডিয়ার মালতী’ পরে গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (IFFI)-এ প্রদর্শিত হয়। SIR এ কি কি কাগজপত্র দেখাতে হবে
ঢাকা থেকে পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত বলেছেন, চলচ্চিত্র উৎসবের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছবির বিষয়বস্তু ও কারিগরি দিককে মূল্যায়ন করা, অন্য কোনও বিবেচনা নয়। তিনি জানান, 'আমরা জানতে চাই, কেন আমাদের সিনেমাগুলি কেআইএফএফ-এ আর জায়গা পাচ্ছে না। সাংস্কৃতিক বিনিময় সক্রিয় ও অবাধ রাখা জরুরি।'
২০২২ সালের ২৮তম কেআইএফএফ-এ মুহম্মদ কায়ূমের ‘কুড়া পক্ষীর শূণ্যে উড়া’ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরা ছবির জন্য গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল। সেই সাফল্যের পরও পরবর্তী দু’বছরে কোনও বাংলাদেশি ছবি নির্বাচিত না হওয়ায় হতাশ কায়ূম। তিনি জানিয়েছেন, 'যদি কেআইএফএফ বাংলা সিনেমাকে উৎসাহ না দেয়, তাহলে কে দেবে? এটা কি ছবির মানের জন্য, নাকি ভারত-বাংলাদেশের টানাপোড়েনের কারণে এটাই ভাবার বিষয়।' ভারতের পর পাকিস্তানকে শুকিয়ে মারতে নদীবাঁধ দেবে আফগানিস্তান
কলকাতার অন্যতম বড় চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে কেআইএফএফ বরাবরই দুই বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির মিলনস্থল ছিল। তাই ২০২৫ সালের সংস্করণে বাংলাদেশি ছবির অনুপস্থিতি অনেকের কাছেই বেদনাদায়ক এবং উদ্বেগজনক বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন দর্শক।
জানা গেছে, ভিসা জটিলতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি না থাকার পেছনের কারণ হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপারসন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে।