২০০৭ সালে 'তারে জমিন পর' ছবির মুক্তি শুধুমাত্র একটি সিনেমা হয়ে থাকেনি, বরং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মন্ডলীর চোখ খুলে দিয়েছিল সমাজে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উপর সেই আবেগ, সেই মানবিক বার্তাকে আবারও পর্দায় ফিরিয়ে আনলেন আমির খান—২০২৫ সালের 'সিতারে জমিন পর' ছবির মাধ্যমে। এবারের গল্প আরও গভীর, আর সামাজিকভাবে জরুরী। ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি মানসিক প্রতিবন্ধকতার চারপাশে জন্মানো বালকের জীবন ঘিরে, যার নাম নেহাল। শৈশবের থেকেই পরিবার, পাড়া, স্কুল—প্রতিটি স্থানে সে উপেক্ষিত, অবহেলিত এবং ভুল বোঝার শিকার। এমন সমাজ যেখানে সাফল্যকে একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে দেখে, সেখানে নেহালের মতো শিশুরা হয় কোণঠাসা কিংবা একঘরে। কিন্তু গল্প মোড় নেয় যখন তার জীবনে আসে এক সাহসী, সহানুভূতিশীল ও চিন্তাশীল শিক্ষক—অভিনয়ে আমির খান নিজে। এই শিক্ষকের আগমন শুধু নেহালের জীবনই নয়, বদলে দেয় তার পরিবার ও আশপাশের মানুষের চিন্তাধারা।
ছবিটির প্রতিটি ফ্রেমে ধরা পড়েছে মানুষের ভেতরের দ্বন্দ্ব, মমতা, এবং শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। চিত্রনাট্য এমনভাবে গাঁথা হয়েছে, যা শুধু একটি শিশুর গল্প নয়—বরং হাজারো শিশুর, যারা একটু বোঝাপড়া, একটু সহানুভূতির আশায় দিন গুনছে। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে নির্মাতা তুলে ধরেছেন মানবিক শিক্ষার গুরুত্ব, যেটা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের পাঠ শেখানোর মধ্যেই নিহিত। সঙ্গীতের জন্যও ছবিটি অনবদ্য। শান্ত, আবেগী এবং অনুপ্রেরণামূলক গানগুলো যেন চরিত্রগুলোর মনোজগৎকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। আর শিশুশিল্পীদের অভিনয় ছিল অত্যন্ত আন্তরিক ও হৃদয়স্পর্শী। বিশেষত, নেহাল চরিত্রে অভিনয় করা কিশোর শিল্পীর সাবলীলতা ও সংবেদনশীলতা দর্শকদের চোখে জল আনতে বাধ্য করে। 'সিতারে জমিন পর' কোনও কল্পনার জগৎ নয়। এটি বাস্তবের প্রতিচ্ছবি—একটি সমাজের, যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা এখনও 'ভিন্ন' বলেই অবহেলার শিকার হয়। ছবিটি প্রশ্ন তো তোলে, আবার উত্তরও খোঁজে। এবং এই উত্তর খোঁজার যাত্রাতেই তার সার্থকতা। মোটামুটি, 'সিতারে জমিন পর' এমন একটি সিনেমা যা দেখার পর শুধু বিনোদনই নয়, বরং উপলব্ধি জাগবে, সচেতনতা আসবে এবং সমাজের প্রতি বাধ্যবাধকতা জোরদার হবে। আমির খান আবার প্রমাণ করলেন বক্স অফিসের বাইরেও সিনেমা হতে পারে শক্তিশালী এক সমাজবদলের হাতিয়ার। যারা 'তারে জমিন পর' ভালোবেসেছেন, তাদের কাছে এই ছবি হবে আবেগ আর উপলব্ধির এক নতুন অধ্যায়।