সোমালিয়ার জলদস্যুদের জব্দ করল ভারতীয় বাহিনী

banner

journalist Name : Bidisha Karmakar

#Pravati Sangbad Digital Desk :

সম্প্রতি, সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের নভেম্বরে থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সোমালি উপকূলে অন্তত ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ হাইজ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ভারতের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ, *এমভি রুয়েন*, ছিল। এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনা বাহিনী জলদস্যুদের বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান চালিয়ে, আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা মোকাবিলায় এক বড় উদাহরণ স্থাপন করেছে। 

২০২৪ সালের ১৬ মার্চ, ভারতীয় সেনা *অপারেশন সংকল্প* নামে একটি গোপনীয় অভিযান শুরু করে। অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল, সোমালির উপকূলে হাইজ্যাক হওয়া *এমভি রুয়েন* জাহাজটি পুনরুদ্ধার করা এবং জাহাজটির ১৭ জন নাবিককে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা। ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অক্ষয় সাক্সেনা এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এই অভিযান ছিল এক কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মিশন, যা এক নজিরবিহীন সাহসিকতার পরিচায়ক। অভিযানটির গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, বিমানের মাধ্যমে বিশেষ বাহিনী (মার্কোস) এবং রেইডিং ক্রাফট বোটের সফল অবতরণ। উইং কমান্ডার অক্ষয় সাক্সেনার নেতৃত্বে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত কম আলোতে, বিমানের সমস্ত ট্রান্সমিশন বন্ধ রেখে, ২,৭০০ কিলোমিটার দূরে থেকে উড়ে গিয়ে নির্ধারিত স্থান থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবতরণ করান। 

পরিবারের জোর করে বিয়ে দেওয়া থেকে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করল কিশোরী

প্রসঙ্গত, এত দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে উড়ানো, শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে আকাশসীমায় প্রবেশ করা এবং তীব্র পরিস্থিতিতে নির্ভুলভাবে এয়ারড্রপ সম্পন্ন করা ছিল অভিযানটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, উক্ত অভিযানটির সাফল্যের ফলে, ভারতীয় সেনা বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জন জলদস্যুকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং *এমভি রুয়েন* জাহাজের ১৭ জন নাবিককে মুক্ত করে। এই অভিযান ছিল ভারতীয় বাহিনীর সমন্বিত শৃঙ্খলা ও দক্ষতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এই অভিযানে সফলতা শুধু ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা মোকাবিলায়ও একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভারতের এই সফল অভিযানের ফলে আন্তর্জাতিক মহলে একটি বার্তা গেছে যে, ভারত শুধু দেশীয় নিরাপত্তা রক্ষায় নয়, বরং বিশ্বব্যাপী জলদস্যুতা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।


এই অভিযানের জন্য উইং কমান্ডার অক্ষয় সাক্সেনার নেতৃত্ব ও সাহসিকতা প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ২০০৬ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এবং ২০২১ সাল থেকে C-17 স্কোয়াড্রনের সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নির্দেশনায় পরিচালিত এই অভিযান ছিল তার পেশাদারিত্ব এবং নেতৃত্বের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এজন্য তাকে বায়ু সেনা পদক প্রদান করা হয়, যা তার অসাধারণ সাহসিকতা, নেতৃত্ব এবং দক্ষতার স্বীকৃতি। ভারতীয় সেনার *অপারেশন সংকল্প* অভিযানে সাফল্য, একদিকে যেমন ভারতের সমরাস্ত্র ও কৌশলগত দক্ষতা প্রমাণ করেছে, তেমনি অন্যদিকে এটি ভারতীয় বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। বিশেষ বাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা মোকাবিলায় ভারতের অটুট সংকল্প এবং ক্ষমতার প্রদর্শন করেছে। এটি শুধু ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বে জলদস্যুতা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Tags:

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Related News