অক্ষয়ের মন্তব্য, মালদ্বীপের প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বদের তরফে এহেন ঘৃণাভরা এবং বৈষম্যমূলক মন্তব্য চোখে পড়ল। যে দেশ মালদ্বীপে সবথেকে বেশি পর্যটক পাঠায়, তাঁদের বিরুদ্ধে এমন ঘৃণা দেখে হতবাক হলাম। প্রতিবেশী দেশের প্রতি আমরা নম্র বটে, কিন্তু ঘৃণা সইব না। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর লাক্ষাদ্বীপ সফর নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তারপরেই মালদ্বীপের নেতা-মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। তারপরে মালদ্বীপ সরকার জানায় মতামত ব্যক্তিগত, এই মতামত সরকারের মতামত নয়। এরপরেই মন্ত্রী মারিয়ম শিউনার তা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টটি মুছে ফেলেন। মারিয়ম শিউনার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ক্লাউন ও ইজরায়েলের পুতুল বলে আক্রমণ করেছিলেন।
পর্যটন নির্ভর মালদ্বীপে সব থেকে বেশি পর্যটক যান ভারত থেকে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্যের পরে বহু সংখ্যক ভারতীয় তাদের মালদ্বীপ যাত্রা বাতিল করেন। আট হাজারের বেশি হোটেল বুকিং এবং আড়াই হাজারের ওপরে ফ্লাইট টিকিট বাতিল হয়। তারপরেই মালদ্বীপ সরকার জানায়, এই ধরনের অপমানজনক মন্তব্যের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে দ্বিধাবোধ করবে না। এদিন এক বিবৃতিতে মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রক জানায়, তারা বিদেশি নেতা ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অবমাননাকর মন্তব্য সম্পর্কে সচেতন।
দেশের অপমানে মালদ্বীপকে বয়কট করার জন্য রবিবারই সুর গরম করেছিলেন ভারতীয় তারকারা। অক্ষয় কুমার, কঙ্গনা রানাউত, সারা আলি খান থেকে শচীন তেণ্ডুলকর, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো তারকারা একযোগে মালদ্বীপের (Maldives Row) সমালোচনায় মুখর হয়ে ভারতের ‘অতিথি দেব ভব’ সংস্কৃতির পাঠ দিয়েছেন তাঁরা। এবার আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন অমিতাভ বচ্চন।
মালদ্বীপ সরকার মন্ত্রীদের বরখাস্ত করলেও ভারতীয় নেটিজেনদের রাগ কিন্তু ছাই চাপা আগুনের মতো জ্বলছে! সেই প্রেক্ষিতেই অক্ষয় কুমার, টাইগার শ্রফ, জন আব্রাহাম থেকে শ্রদ্ধা কাপুরের মতো তারকারা মালদ্বীপের মন্ত্রীর ওই বিতর্কিত মন্তব্যের শুধু প্রতিবাদই করেননি। বরং ভারতীয় টুরিজমের প্রচারও করছেন তাঁরা। এবার লাক্ষাদ্বীপের একগুচ্ছ ছবি শেয়ার করে মালদ্বীপকে মোক্ষম জবাব ছুঁড়লেন অমিতাভ বচ্চন।
বীরেন্দ্র শেহবাগের প্রতিবাদী টুইটের প্রেক্ষিতে বিগ বি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “এটা খুবই প্রাসঙ্গিক। আমাদের নিজেদের দেশেই সবথেকে ভালো জায়গা রয়েছে ঘোরার। আমি নিজেও লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামানে গিয়েছি। এবং লোকেশন হিসেবে দারুণ অভূতপূর্ব জায়গা। অসাধারণ নীল জলরাশি, সমুদ্র সৈকত এবং সমুদ্র গভীরে জলের তলায় যে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, তা এককথায় অবিশ্বাস্য! আমরা ভারত। আমরা আত্মনির্ভর। আর আমাদের আত্মনির্ভরতাকে হুমকি দেবেন না। জয় হিন্দ।” দেশ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অপমানের বদলায় যে অমিতাভ বচ্চন এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন, তা বলাই বাহুল্য।
মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহঃ নাসির বর্তমান মন্ত্রীদের করা মন্তব্যকে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্টকে এই মন্তব্য থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহঃ নাসির ভারতপন্থী বলে পরিচিত হলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহঃ মইজ্জু ভারত বিরোধী বলেই পরিচিত। গত নভেম্বরে তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই মালদ্বীপ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লাক্ষাদ্বীপ সফর নিয়ে কটাক্ষের জেরেই হাই কমিশনারকে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তলব করা হয়। সেখানে মালদ্বীপের হাই কমিশনারের সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের সুদীর্ঘ আলোচনা হয় এবং তারপরই ইব্রাহিম সাহিবকে সেখান থেকে বের হতে দেখা যায়। মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী মালসা শরিফ, মারিয়ম শিউনা এবং আবদুল্লা মাজিদ মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফর নিয়ে কটাক্ষ করলে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। তবে মালদ্বীপের মন্ত্রীরা মোদীকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন, তা তাঁদের ব্যক্তিগত মত। তার সঙ্গে মালদ্বীপ সরকার বা প্রশাসনের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়।
আমরা ভারত আত্মনির্ভর। #বয়কটমালদ্বীপ্স ট্রেন্ডিং