‘'ভারতের বিচারব্যবস্থা অন্ধ নয়।” এই বার্তা দিতেই বদলে গেল ভারতের বিচারব্যবস্থার প্রতীক। সাধারণত আইন এবং বিচারের লেডি জাস্টিস মূর্তিতে চোখ বাঁধা থাকে বিচারকর্তার। কিন্তু সেই মূর্তি এবার পালটে গেল সুপ্রিম কোর্টে। নতুন মূর্তিতে বিচারকর্তার চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন মূর্তির একহাতে তরবারির বদলে রাখা হয়েছে ভারতীয় সংবিধান।
বিচারের প্রতীক হিসাবে গোটা দেশেই ব্যবহৃত হয় এই লেডি জাস্টিসের মূর্তি। তার একহাতে দাঁড়িপাল্লা রাখা হয় যুক্তির তুল্যমূল্য বিচার বোঝাতে। অন্যহাতে থাকে তরবারি, যার অর্থ শাস্তি বা দণ্ড। এছাড়াও লেডি জাস্টিসের দুই চোখ কাপড়ে ঢাকা থাকে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বোঝাতে। কিন্তু বর্তমান যুগে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে, চোখ বন্ধ রেখে কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন বিচারের দেবী? অনেক বিষয় কি বিচারব্যবস্থার নজর এড়িয়ে যাচ্ছে?
এই ভাবনা থেকেই এবার বদলে গেল লেডি জাস্টিসের মূর্তি।
কাউকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রেও যে অন্ধভাবে চলছে না বিচারব্যবস্থা, সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হল। ন্যায়ের দেবীর চোখ কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকার অর্থ ছিল, ‘আইন সবার জন্য সমান। আদালত কারও সম্পদ, ক্ষমতা, প্রতিপ্রত্তি বা পরিচয় দেখে রায় দেয় না।’ ন্যায়ের দেবীর ডান হাতে মানদণ্ড ধরা আছে। বাঁ হাতে এতদিন ছিল তরোয়াল। যা আইনের শাসন, কর্তৃত্ব ও ন্যায়বিচারের ক্ষমতার প্রতীক ছিল। কিন্তু এবার ন্যায়ের দেবীর চোখ খুলে দেওয়া হল। একইসঙ্গে তাঁর বাঁ হাত থেকে তরোয়াল সরিয়ে সংবিধান রাখা হল। ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় যে বদল আসছে, এই মূর্তির মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দেওয়া হল। জানা গিয়েছে, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশেই লাইব্রেরিতে নতুন মূর্তি রাখা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, লেডি জাস্টিসের চোখের বাঁধন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন মূর্তিতে। সেই সঙ্গে হাত থেকে তরবারি সরিয়ে রাখা হয়েছে ভারতীয় সংবিধান। ঠিক যেভাবে ঔপনিবেশিকতা থেকে বেরিয়ে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের বদলে ন্যায় সংহিতা চালু হয়েছে গোটা দেশে, সেভাবেই বিচারব্যবস্থার প্রতীকেরও ব্রিটিশ ছোঁয়া থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন মূর্তি তৈরি হয়েছে।
‘প্রধান বিচারপতি বিশ্বাস করেন, ব্রিটিশ শাসনের ঐতিহ্য পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া উচিত ভারতের। আইন কখনও অন্ধ নয়। আইনের চোখে সবাই সমান। এই কারণে প্রধান বিচারপতির মনে হয়েছে, ন্যায়ের দেবীর মূর্তিতে বদল আনা উচিত। এর মাধ্যমে দেশকে বার্তা দেওয়া হল।’