journalist Name : Ananya Dey
#Pravati Sangbad Digital Desk:
ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হল সম্প্রতি। সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি এখন সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। এই রায় শুধু একটি আইনি ঘোষণা নয়, এটি মাতৃত্বের মর্যাদা, নারীর অধিকার ও কর্মজীবী মায়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে এক গভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিত।গত কয়েক দশক ধরে ভারতে মাতৃত্বকালীন ছুটিকে একটি সুবিধা হিসেবে দেখা হত, অধিকারের নয়। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ছুটি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, তা অনেক সময়ই প্রয়োগে ঘাটতি ছিল। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কর্মী না হলে বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ক্ষেত্রে ছুটি দিত না, আবার অনেক সময় চাকরি হারানোর ভয়েও নারী কর্মীরা মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করতে সাহস পেতেন না। এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে গেছেন অসংখ্য নারী, আইনজীবী ও সমাজকর্মী।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এক মামলার প্রেক্ষিতে ঘোষণা করে—"মাতৃত্ব কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি জীবনের অঙ্গ। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি মহিলার জীবন ও মর্যাদার অধিকার রয়েছে এবং সেই অধিকার রক্ষা করতে মাতৃত্বকালীন ছুটি অবশ্যই সাংবিধানিক অধিকার হতে হবে।"
এই রায়ের ফলে মাতৃত্বকালীন ছুটিকে আর শুধুমাত্র ‘চাকরির সুযোগ’ বা ‘প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি এখন মৌলিক অধিকার। অর্থাৎ, কোনো সংস্থা যদি এ অধিকার অস্বীকার করে, তবে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সুবিচার পাওয়া যাবে। এছাড়া, আদালত বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে, অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক, এমনকি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও এই অধিকার পাবেন। এটি নারীকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তার পরিসরকে আরও বিস্তৃত করে তুলেছে।
এই রায় সরকারের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত কাঠামো, যাতে দেশের প্রতিটি কর্মজীবী নারী—তিনি যে-ই হোন না কেন—এই অধিকার নিশ্চিতভাবে পান। নিয়োগকর্তাদের সচেতনতা, সরকারের নজরদারি, এবং কর্মীদের আইনি সচেতনতা—এই তিনটি বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
মাতৃত্ব শুধুমাত্র নারীর শারীরিক অভিজ্ঞতা নয়, এটি একটি মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়। এই রায় একদিকে যেমন নারীদের প্রতি বিচার ব্যবস্থার সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ, তেমনি সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের আহ্বানও বটে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই রায় এক প্রেরণার নাম—যে প্রেরণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অধিকার কখনও দেওয়া হয় না, তা আদায় করে নিতে হয়। আর সেই লড়াইয়ে প্রতিটি নারীই এক সংগ্রামী সৈনিক।