কোভিড-১৯ য়ের থেকে কি বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠছে ওমিক্রন ?

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ওমিক্রন সারা পৃথিবীতেই আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। করোনাভাইরাসের এই নতুন প্রজাতি দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে। সারা বিশ্বে আবার সেই লকডাউনের প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে, চারিদিকের অবস্থা যে কি রকম হবে সেটা কেউই ভাবতে পারছে না।
এই ভ্যারিয়েন্টটি মাত্রই তার যাত্রা শুরু করেছে, যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে এটি অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
এমুহূর্তে সবারই  মনে নানান ধরণের প্রশ্ন জাগছে যে: ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কত দ্রুত ছড়াতে পারবে? ভ্যাকসিনের সাহায্য নিয়ে কি এই ভ্যারিয়েন্টকে আটকানো সম্ভব হবে? যদি ভ্যাকসিন দিয়ে আটকানো সম্ভব না হয় তাহলে তার বদলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে?
দ্রুত হারে টিকাকরণের ফলে অনেকেই ভাবছিলেন, এবার করোনাভাইরাস আস্তে আস্তে ক্ষমতা হারাবে। কিন্তু তার মধ্যে হঠাৎ করে ওমিক্রনের উদয় নতুন করে ত্রাসের মধ্যে ফেলেছে সকলকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে অমিক্রন। গ্রিক বর্ণমালার আলফা, ডেল্টার মতোই নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কোড-নেম ঠিক করা হয়েছে।
ইউরোপ এবং আমেরিকায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে ডেল্টা এবং ওমিক্রনের সংক্রমণ। বিজ্ঞানীরা একেই বলছেন ডেলমিক্রন। একদিকে ডেল্টা মারাত্মক উপসর্গ, তার সঙ্গে ওমিক্রনের মৃদু উপসর্গ— দুটোর প্রভাবই রয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে। পাশাপাশি ডেল্টার মতো ধীরে ছড়াচ্ছে না এই সংক্রমণ। বরং এর সংক্রমণের হার ওমিক্রনের  মতো ।
এই ভ্যারিয়েন্টটি মিউটেট বা তার রূপ পরিবর্তন করেছে অনেকভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি "অনেক অস্বাভাবিকভাবে মিউটেট" করেছে এবং এখন পর্যন্ত অন্য যেসব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে তার চেয়ে এটি অনেকখানিই আলাদা।এটা আমাদের খুব অবাক করেছে,বিবর্তনের জন্য এটা বড় বড় ধাপ পার হয়েছে। (কোভিড জীবাণুতে) আমরা সাধারণত যে ধরনের মিউটেশন দেখি এর মধ্যে সেটা অনেক বেশি।"
এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডি অলিভিয়েরা জানিয়েছেন, অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মিউটেট করেছে ৫০ বার। আর এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। মানুষের দেহের মধ্যে ঢুকতে কোভিড ভাইরাস এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে। এবং করোনার ভ্যাকসিন সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়।
ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন। অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইনে মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। সেই তুলনায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই পরিবর্তন হয়েছে মাত্র দু'বার।বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ধরনের মিউটেশন সম্ভবত একজন রোগীর দেহের জীবাণু থেকে এসেছে, যিনি এই ভাইরাসের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি।তবে ভাইরাসের সব মিউটেশনই খারাপ না। এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে এসব মিউটেশনের ফল কী দাঁড়ায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, "এই ভাইরাসটির সংক্রমণের ক্ষমতা, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা -এসব আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর রয়েছে।"
গবেষণাগার থেকে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে ঠিকই, কিন্তু এর সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন রয়েছে তার জবাব মিলবে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে।এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে এখনই কোন উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না। কিন্তু যেসব ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গাওটেং প্রদেশে। বোতসোয়ানায় পাওয়া গেছে চারটি কেস। এবং হংকংয়ে পাওয়া গেছে একটি কেস। ইসরায়েল এবং বেলজিয়ামেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
কোভিডের সাধারণ পরীক্ষায় এই ভ্যারিয়েন্টের ফলাফল কিছুটা বিচিত্র দেখতে হয়, ল্যাবরেটরির ভাষায় যাকে বলে 'এস-জিন ড্রপ আউট'। ফলে এই বৈশিষ্ট্যে জন্যই পূণার্ঙ্গ জিন বিশ্লেষণ না করেও হয়তো এটি কীভাবে, কোথায় ছড়িয়ে পড়ছে সেটা জানা সম্ভব হবে।
এর অর্থ দাঁড়ায় গাওটেং প্রদেশের ৯০% রোগীর দেহে সম্ভবত এই ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে এবং "দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য প্রদেশেও" হয়তো এটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও এটি বেশি দ্রুততায় ছড়ায় কিনা, এর সংক্রমণের প্রভাব কতটা মারাত্মক কিংবা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এটি ভেদ করতে পারে কিনা সে সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য জানা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ২৪% কোভিড টিকার আওতায় এসেছে। এর চেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে যেসব দেশে সেখানে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আদৌ ছড়িয়ে পড়বে কিনা, সেই প্রশ্নেরও কোন জবাব হাতে নেই।

যেমন অনেকেরই মত, ডেল্টা যেভাবে ভারতে ভায়বহ আকার ধারণ করেছিল, ওমিক্রন ততটাও করবে না। ফলে ডেলমিক্রনও ভয়াবহ হবে না, তবে বিজ্ঞানীরা অতটাও আশাবাদী হতে বারণ করছেন। তাঁদের মতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এখন নিরাপদে থাকার একমাত্র রাস্তা। মাসখানেক গেলে ছবি আরও পরিষ্কার হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
কোন কোন উপসর্গ রয়েছে এক্ষেত্রে:
১)তীব্র জ্বর
২)টানা কাশি
৩)স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া বা কমে যাওয়া
৪)মাথাব্যথা
৫)সর্দি
৬)গলা খুসখুস

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

Journalist Name : Sayantika Biswas

Related News