আশ্বিনে দূর্গা পূজার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে অনুভূত হয় হিমেল পরশ, এইবারও তার অন্যথা হয়নি। তবে শীতের আমেজ পাওয়া গেলেও সেই ভাবে শীতে দেখা মেলেনি বঙ্গে, তার কারণ মূলত পশ্চিমী ঝঞ্জা এবং বঙ্গোপসাগর সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়। তবে সব শেষে ডিসেম্বরে শুরুতেই রাজ্যের বেশ ভালই টের পাওয়া গেছিল শীতের আমেজ, পশ্চিমী ঝঞ্জা কেটে যাওয়ার কারণে উত্তরে শীতল শুষ্ক বাতাস বিনা বাধায় বঙ্গে প্রবেশ করতে শুরু করে। ডিসেম্বরে শুরুর কটা দিন শীত প্রেমীদের কাছে সুখের হলেও বড়দিন আসতে না আসতেই উধাও শীত। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল বঙ্গে ফের উধাও হবে শীত, আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস মতই বড়দিন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। যীশুর জন্মদিন পেরোতে না পেরোতেই শীত বড়দিনের ছুটি কাটাতে ব্যস্ত। পঁচিশে ডিসেম্বর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের পারদ বাড়তে শুরু করেছিল।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে এখনও বেশ কিছুদিন এই রকম আবহাওয়া থাকবে। রবিবার কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক বা তার বেশি। এমনকি নতুন বছরে ফের কবে শীতের দেখা মিলবে তাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না আবহাওয়াবিদরা, তবে হাড় হিম করা শীত না থাকলেও শীত শীত আমেজ অনুভূত হবে। অন্যদিকে বছর শেষে দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় উপকূলীয় জেলা এবং উত্তরবঙ্গে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন হাওয়া অফিসের কর্তারা। এদিন দমদম কলকাতা এবং মহানগরের বেশ কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে বেশি। কিছুদিন আগেও পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল এবং শ্রীনিকেতনের তাপমাত্রা ছিল অনেকটাই নিচে কিন্তু সেখানেও এখন রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা ওপরে, এমনকি কালিম্পংকে হার মানিয়েছিল শ্রীনিকেতনের তাপমাত্রা।
তবে উত্তরের বেশকিছু জেলাতে এদিনে তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের নিচেই এমনকি সিকিমেও তুষারপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক আবহাওয়াবিদ এর মতে উত্তর-পশ্চিম ভারতের আবহাওয়া এর জন্য দায়ী। বর্তমানে বাঁকুড়া তাপমাত্রা ১৩.৮, বর্ধমান ১৪.৮, জলপাইগুড়ি ৯.৬, কোচবিহার ৭.৬ ও কলকাতা ১৫.৬। মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং পুরুলিয়া সহ বেশকিছু জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন পশ্চিমী ঝঞ্জা রাজ্যের উপরে অবস্থান করলে উত্তরের শুষ্ক বায়ু যেমন প্রবেশ করতে বাধা পায় ঠিক তেমনি রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে নিচে নামে না বরং অনেক সময় দেখা যায় স্বাভাবিকের থেকে বেশ খানিকটা ওপরে তাপমাত্রা বিরাজ করে।
ডিসেম্বরের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ভারতের পাঞ্জা্ব, রাজস্থান এবং হরিয়ানাতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই নিচে নেমে গিয়েছিল এমনকি সেখানে রাতে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে গিয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে পূর্ব ভারতের সেই রাজ্যগুলিতেও সেইরকম শীতের আমেজ নেই। উত্তর পশ্চিম ভারতে সৃষ্টি হওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে পূর্ব ভারতের বেশ কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের শীতের মূল কারণ পূর্ব ভারত থেকে বয়ে আসা শীতল এবং শুষ্ক বাতাস, আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে সেই শীতল এবং শুষ্ক বাতাস পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে রাজ্যে প্রবেশ করতে পারছে না তবে পশ্চিমী ঝঞ্জা কেটে গেলে রাজ্যে ফের শীতের আগমন ঘটবে। তবে সব শেষে এটা বলাই যায় ২০২১ সালের শেষের দিকে অধরাই থাকবে শীত।