Flash News
    No Flash News Today..!!
Monday, November 10, 2025

কী খাবার খেলে মিটবে মেজাজ হারানোর সমস্যা!! জানুন বিস্তারিত

banner

journalist Name : SRIJITA MALLICK

#Pravati Sangbad Digital Desk:

আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানসিক চাপ বাড়ছে, এর যথাযথ মোকাবিলা না করতে না পারলেও রাগ বাড়ে। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় রাগ হল নেগেটিভ ইমোশন। রেগে গিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ তীব্র হলে সমস্যা হয় তখনই। আমরা সবসময়ই পরামর্শ দিই 'এক্সপ্রেশন অব অ্যাঙ্গার' অর্থাৎ রাগের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। খিটখিটে মেজাজ মানে অহেতুক প্রতিক্রিয়া বোঝায়। এটাকে মেজাজের উপর কম নিয়ন্ত্রণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, যেটার ফল হয় আকষ্মিক মৌখিক বা আচরণগত বিস্ফোরণ, যদিও এই মেজাজের প্রকাশ বাইরে থেকে বোঝা যায় না। এটা দীর্ঘস্থায়ী, সাধারণ বা কম সময়ের জন্য হতে পারে। খিটখিটে মেজাজ একটা স্বাভাবিক বিরক্তির প্রকাশ হতে পারে বা কোনো অন্তর্নিহিত রোগের ফলে হতে পারে। অথচ আপনি এমন ছিলেন না। ইদানীং কী এমন হচ্ছে যে আপনার মেজাজ এত খারাপ যাচ্ছে? এমনটা কি হতে পারে যে আপনি শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যায় ভুগছেন?
হঠাৎ মন-মেজাজের পরিবর্তন, আকস্মিক রাগ বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ—মানুষের স্বাভাবিক আচরণের মধ্যেই পড়ে। হয়তো পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে বা ভেতরে ভেতরে কোনো উদ্বেগ-অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, যা আপনার অস্বাভাবিক আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে।
অনেক সময় অতিমাত্রায় বিভিন্নরকমের আবেগ যেমন রাগ,ঘৃণা, কষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অতিরিক্ত মেজাজ দেখা যেতে পারে। এর সঙ্গে ভুল বা আজগুবি ধারণা, অনিদ্রা, সন্দেহ, অস্থিরতা ও মনোযোগের অভাব দেখা দেয়। কোনো আঘাত বা শোকপ্রাপ্তির পরও এমন হতে পারে, যাকে বলা হয় পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার। উদ্বেগজনিত সমস্যায় মেজাজ খারাপ থাকতে পারে অনেকের। আকস্মিক খিটখিটে মেজাজের এমন পরিবর্তনের সঙ্গে মনের অন্যান্য পরিবর্তন থাকলে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সেরোটোনিন একটি রাসায়নিক  উদ্দীপক যা স্নায়ু কোষ দ্বারা তৈরি এবং শরীরের অন্যান্য কোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদিও এটি মেজাজ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংযুক্ত একমাত্র রাসায়নিক নয় (ডোপামিন, অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন কাজে ভুমিকা রাখে, তবে সেরেটোনিনও গুরুত্ব রাখে। আবার সারাদিন কাজ শেষে খুব সহজেই দেহে ক্লান্তি চলে আসে। আবার অনেকে অবসাদেও ভোগেন আর সেখান থেকে মেজাজ খিটখিটে হওয়া খুব স্বাভাবিক। তাছাড়া মানসিক নানা চাপের কারণেও মেজাজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
মহিলাদের মেজাজ হারানো "স্বাভাবিক"৷ যখন মহিলাদের  দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম থাকে, তখন তাদের মেজাজের পরিবর্তনও বড় হয়৷ কঠোর ডায়েটিং মহিলাদের মেজাজ খারাপ করে৷ ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে, ইস্ট্রোজেন মহিলাদের বেশি প্রভাবিত করে।যেহেতু মহিলাদের হরমোনের মাত্রায় তারতম্য হয়, ইস্ট্রোজেন মস্তিষ্কে সেরোটোনিন রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করতে পারে। যখন হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে, তখন মস্তিষ্ক সেরোটোনিনের পরিবর্তনের প্রতি আরও সংবেদনশীল হবে, এবং সেরোটোনিনও প্রচুর পরিমাণে সেবন করা হবে, তাই আগের সেরোটোনিনের মাত্রা কম নয়।মহিলাদের মেজাজও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় যখন তাদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম থাকে, বিশেষ করে মাসিকের আগে, প্রসবোত্তর পর্যায়ে এবং মেনোপজের সময়। এবং এই পরিস্থিতি ঘোরালো মোড় নেয়,  যখন হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে, যার ফলস্বরূপ মহিলারা আরও চাপ এবং মানসিক অস্বস্তি অনুভব করেন। সময়ের সাথে সাথে, এটি মস্তিষ্ক এবং অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, যা মহিলাদেরকে বিষণ্ণতার দিকে পরিচালিত করে, এই জৈবচক্র ব্যাখ্যা করে কেন ঋতুবন্ধের মহিলাদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দেখা যায়।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবার খেলে কিছুটা স্বস্তি মেলতে পারে-
চকলেট-
চকলেটে ফিনাইলিথ্যালাইমিনের বেশ কয়েকটি কার্যকর মিশ্রণ রয়েছে যা এন্ডোরফিন এবং আনন্ডামাইডকে বাড়ায়। চকলেট সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা দেখায় যে, এটি খিটখিটে মেজাজ এবং জ্ঞানকে উন্নত করতে পারে, পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস।
গ্রিন টি-
মন খারাপ থাকলে এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। এটি নার্ভকে শান্ত করে এবং মুড ভাল করতে সাহায্য করে। জাপানী এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি খেলে বয়স্কদের হতাশা কাটে। এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড উদ্বিগ্নতার সঙ্গে লড়াই করে মন ভাল করতে সাহায্য করে।
বাদাম-
আখরোট, চিনা বাদাম, পেস্তা, কিসমিসের আশ্চর্যজনক পুষ্টিমান রয়েছে। এগুলো অবশ্যই আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করা উচিত। এগুলো ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে পূর্ণ সুপার হেলথ খাবার।কাজু বাদাম এবং অন্যান্য বাদাম অল্প করে খান যাতে আপনার কার্ব এবং ক্যালোরি স্তর ঠিক থাকে। সকাল ১১টার দিকে একমুঠো মিশ্র বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ। বাদামে আপনার মেজাজ, ত্বক এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।
ভিটামিন ডি-
মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে ভিটামিন ডি ভালো কাজ করে। এই ভিটামিন মেজাজ খিটখিটে হতে বাধা দেয়। কোনও কারণ ছাড়া হতাশা জেঁকে ধরলে বুঝবেন শরীরে হয়তো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আছে। এর অভাব পুষিয়ে নেওয়া যায় সহজেই। প্রতিদিন সকালবেলা  সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করুন।
ডিম-
আমরা সবাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করা ডিম খেতে পছন্দ করি। সুসংবাদ হলো,ডিম খেলে আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, বি ১২ বেশি থাকে এবং কোলিনযুক্ত থাকে, এটি এমন একটি পুষ্টি যা স্নায়ুতন্ত্রকে সমর্থন করে। যা আপনার মেজাজ ভালো রাখতে কাজ করে। ডিমে রয়েছে ট্রিপটোফেন এবং উচ্চ কোলিন (ভিটামিন বি)এবং প্রোটিন। কোলিন সরাসরি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে ও মন ভালো রাখে।
পনির-
মন ভালো রাখার পেছনে কেবল পনিরের স্বাদ নয় বরং এতে থাকা ট্রিপ্টোফেন ভূমিকা পালন করে। ‘শেডার’ পনিরে এই রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই খাবার তালিকায় এটা রাখা জরুরি।
মধু-
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধুর রং ও স্বাদ মন ভাল করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ মধু ফ্রি রেডিকেল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সেই সঙ্গে বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন বি-১২-
অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদি বেড়ে যায় ভিটামিন বি ১২-এর অভাবে। গড়ে প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন ২.৪ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন বি ১২-এর দরকার হয়। পনির, কম চর্বিযুক্ত দই, দুধ- এসব ভিটামিন বি ১২ এর চাহিদা পূরণে বেশি ভুমিকা রাখে। আধুনিক বিজ্ঞান বলে ভিটামিন বি১২ আমাদের শরীরে ভালো লাগার হরমোনকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে মেজাজ ফুরফুরে থাকে।
অ্যাভোকাডো এবং বেল পেপার-
অ্যাভোকাডোর পুষ্টিকর ফ্যাট এবং সুপার ক্রিমযুক্ত টেক্সচার মেজাজ ভালো রাখার খাবার হিসেবে বিবেচিত। এতে ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ৫, ফাইবার, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই খাবার ভিটামিন এবং পুষ্টি নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষ করতে সাহায্য করে। রঙিন বেল পেপার রাখুন খাবারের তালিকায়। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি বেশি রয়েছে যা মেজাজ উন্নত করতে ও সঙ্কট হ্রাস করতে সাহায্য করে।
মরিচ-
মরিচ খাওয়ার পর মজার ঝাল স্বাদটা যখন জীবে লাগে, তখনই এন্ডোরফিন, অর্থাৎ আরো একটি সুখ হরমোন শরীরে ছড়িয়ে যায়৷ তাই কেউ যদি প্রচণ্ড ঝাল দিয়ে স্প্যাগেটি বা নুডলস রান্না করে খান, তাহলে তাঁর আনন্দের মাত্রা বেড়ে হতে পারে দ্বিগুণ!
ভিটামিন সি-
ভিটামিন সি-কে বলা যেতে পারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার যম। জটিল পরিস্থিতিতে পড়লে আগে এক গ্লাস কমলার জুস খেয়ে দেখা যায়। মাথার ভার অনেকটাই কমে আসবে। মনকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখতে ভিটামিন সি অনবদ্য।

Tags:

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

স্বাস্থ্য
Related News